প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মৌসুমি ফলে ভরপুর বাজার, দাম নিয়ে অসন্তোষ ক্রেতাদের

editor
প্রকাশিত জুন ১৪, ২০২৫, ১২:১৮ অপরাহ্ণ
মৌসুমি ফলে ভরপুর বাজার, দাম নিয়ে অসন্তোষ ক্রেতাদের

Manual6 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

ঋতুতে এখন চলছে গ্রীষ্মকাল, বাজারে মৌসুমি ফলের বাহার। আম, লিচু, কাঁঠালের মতো গ্রীষ্মকালীন ফলে ভরপুর দোকানগুলো। তবে রঙিন ফলে সাজানো দোকানগুলোর চাকচিক্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে সাধারণ ক্রেতাদের অসন্তোষ। ফলের সরবরাহ পর্যাপ্ত হলেও দাম অনেকটাই নাগালের বাইরে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য। দ্রব্যমূল্যের চাপের মধ্যে মৌসুমি ফলও হয়ে উঠেছে অনেকের কাছে বিলাসের নামান্তর।

এদিকে, ফলের দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মধ্যেই রয়েছে মতপার্থক্য। বাজারের চলমান ফলের দাম কোনও ক্রেতার কাছে বেশি, আবার কারও কাছে স্বাভাবিক। একইভাবে বিক্রেতারা কেউ বলছেন, আগের বছরের থেকে এই বছর ফলের দাম কম। আবার কেউ বলছেন বেশি। তবে তাদের এই মতপার্থক্যের মধ্যে এমনও মানুষ রয়েছেন যারা মৌসুমি ফল কিনে খেতে চাইছেন, কিন্তু তাদের সেই সাধ পুরোপুরি পূরণ হচ্ছে না। আর সাধ পূরণ করতে হলেও তাদের ভাবতে হচ্ছে একাধিকবার।

রাজধানীর কাওরান বাজার, মিরপুর ১ নম্বর ফলের বাজার ও সোনারগাঁও রোডের বিভিন্ন ফলের দোকান ঘুরে দেখা যায় মৌসুমি ফলের বাজারের হালচাল।

Manual6 Ad Code

এসময় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জাতের আম, লিচু, কাঁঠাল, জাম, জামরুল, ডেউয়া, কাউ ফল, লটকন, তাল শাঁসের মতো ফলগুলো। মান ও আকার অনুযায়ী এসব ফলের দামে রয়েছে ভিন্নতা।

মান ও আকার অনুযায়ী প্রতি কেজি আম্রপালি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকায়, হিমসাগর আম বিক্রি হচ্ছে ৭০-১২০ টাকায়, ল্যাংড়া আম বিক্রি হচ্ছে ৯০-১১০ টাকায় এবং হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। আর প্রতি ১০০ পিস লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৬০০ টাকায়। প্রতি পিস কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ২০০-৪০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি জাম ১৮০-২৪০ টাকা, জামরুল ২০০ টাকা, ডেউয়া ২৫০-৩০০ টাকা, কাউ ফল ৩৬০ টাকা, লটকন ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর তালের শাঁসের প্রতিটি ১০ টাকা অর্থাৎ একটি তাল (যদি তিনটি শাঁস থাকে) ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

Manual4 Ad Code

 

আমের দাম নিয়ে বিক্রেতা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, গত বছর এই সময়ে এরকম দামই ছিল আমের। আর কয়েক দিন আগে সাতক্ষীরার আম বাজারে ছিল, ওই এলাকার আমের দাম কম। ওখানের হিমসাগর, ল্যাংড়ার দাম তুলনামূলক কমই থাকে। এখন বাজারে রাজশাহীর আম চলে এসেছে, এগুলোর দাম কিছুটা বেশি।

মো. আরাফাত নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, আমার কাছে সব ভালো কোয়ালিটির আম, তাই দাম বেশি। আমার কাছে ১০০ টাকার নিচে দাম নামবে না। কারণ অন্যদের চেয়ে মানে ভালো। আর গত বছরও এরকম দামেই আমি বিক্রি করেছি।

আম বিক্রেতা মো. রমজান বলেন, এই বছর আমের দাম কম আছে। গত বছর এই সময়ে আমের দাম শুরু হয়েছে ১০০ টাকার উপরে। এবার তো ৭০/৮০ টাকায় শুরু করেছি।

Manual5 Ad Code

এদিকে আম কিনতে আসা ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, সিজনাল ফল খাওয়াটাও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। তাই বাসার জন্য ফল নিয়ে যাচ্ছি। আমের দাম মোটামুটি ঠিকই আছে। তবে আরেকটু কমলে হয়তো ভালো হবে।

 

রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন মো. সেলিম। তিনি এসেছেন বাচ্চাদের জন্য ফল কিনতে। তার সঙ্গে ফলের দাম নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, সবাই বলবে দাম কম। কিন্তু আমার কাছে তো বেশি। যার খবর সে জানে। বাচ্চারা আম খেতে চেয়েছে তাই কিনলাম। বড় আমের দাম বেশি তাই ছোট সাইজেরগুলো কিনলাম। এগুলোও ভালো আম, শুধু সাইজে ছোট বলে দাম কম।

 

বাজারে লিচুর দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে বেশি। কারও কাছে দাম কম আবার কারও কাছে বেশি। এমনই এক লিচু বিক্রেতা মো. বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, এবার লিচুর দাম গত বছরের থেকে কম। গত বছর এই সময়ে লিচু ছিল শ’ ৭০০-৮০০ টাকা। এইবার তো ৬০০-তে পাওয়া যাচ্ছে।

 

আরেক বিক্রেতা মো. আলম বলেন, গত বছরের থেকে এই বছর দাম বেশি। গত বছর এই সময়ে ৪০০-৪৫০ টাকা ছিল। আর এবার দাম বেশি ছিল। তাও চাঁদরাত থেকে দাম কিছুটা কমেছে।

মো. সাকিব নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, গত বছরের থেকে এ বছর দাম বেশি লিচুর। গত বছর এই সময়ে ৩০০-৪০০ টাকায় লিচু পাওয়া যেতো। এবার এখনও এরকম দাম হয়নি।

এদিকে লিচু কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রাকিবুল ইসলাম বলেন, মান অনুযায়ী দাম হয়। আমার মনে হয়েছে দাম মোটামুটি ঠিকই আছে। ভালো হলে তো দাম একটু বেশি থাকবেই।

আরেক ক্রেতা কাউসার হোসেন বলেন, দাম ঠিক আছে… মানে কম আছে, এটা তখনই বলা যায় যখন সেটা সবাই কিনতে পারে। আমি বা আর কয়েকজন কিনতে পারছি বলে দাম কম এটা বলা যাবে না। তাই আমার মনে হচ্ছে লিচুর দাম বেশিই আছে। এটা কমা উচিত, যাতে সবাই কিনে খেতে পারে।

 

Manual3 Ad Code

এদিকে বাজারে কাঁঠালের চাহিদা কম থাকলেও দাম ছাড়ছেন না বিক্রেতারা। বিভিন্নভাবে বেশি দাম রাখার প্রবণতা রয়েছে তাদের মধ্যে। এক বিক্রেতা বলেন, চিটাগাংয়ের কাঁঠালের দাম কম; ওগুলোর স্বাদ হয় না। গাজীপুরের কাঁঠালের স্বাদ বেশি মিষ্টি বেশি, তাই দামও বেশি হয়। অনেকে চিটাগাংয়ের কাঁঠাল গাজীপুরের বলে বিক্রি করে। কিন্তু আমার কাছে আসল গাজীপুরের কাঁঠাল, তাই দাম বেশি।

অন্যদিকে বাজারে জাম, জামরুল, ডেউয়া, কাউ ফল, লটকন, তাল শাঁসের মতো ফলগুলোর দামও অনেকটাই বেশি। এসব ধরনের দেশি ফলগুলো ক্রেতারা অনেকটা শখ করে খেলেও দামের কারণে পিছপা হয়ে যান অনেক সময়।

এমনই এক ক্রেতা বলেন, এই সময়টাতে অনেক দেশি ফল পাওয়া যায়, যেগুলো হয়তো আমাদের বাচ্চারা দেখেওনি। ওগুলো কিনতে গেলেও অনেক দাম রেখে দেয়। ডেউয়া ফলটা আমি চিনি. আমার বাচ্চারা চিনে না। ওদের দেখানোর জন্য কিনে নিয়েছি। সেটাও ৩০০ টাকা কেজি। তো এত দাম হলে তো কেউ কিনতে চাইবে না।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code