প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

৫৪ সাবেক জেলা প্রশাসকের কর ফাঁকি

editor
প্রকাশিত আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ
৫৪ সাবেক জেলা প্রশাসকের কর ফাঁকি

Manual7 Ad Code

 

Manual6 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

বিগত সরকারের সময়ের প্রভাবশালী ৫৪ জেলা প্রশাসকের (ডিসি) এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ১৫৯ কোটি টাকার কর ফাঁকির প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট (আইটিআইআইইউ)। এসব ব্যক্তির পরিবারের অনেক সদস্যেরও কর ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। জেলা প্রশাসক ও তাদের পরিবারের গত ১০ করবর্ষের আয়কর রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজস্ব আইনে মামলা করা হবে। কর ফাঁকি দেওয়াদের হিসাব জব্দ করতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করা নিয়ে এনবিআরের তদন্ত কর্মকর্তারা আলোচনা করছেন।

 

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সরকারদলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে দেওয়ায় জড়িত ছিলেন এসব জেলা প্রশাসক। এসব ব্যক্তি সে সময় অনেক প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন। অনৈতিকভাবে আয় করা এসব অর্থের কথা আয়কর রিটার্নে নেই।’

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৪ জেলা প্রশাসক বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছেন। এসব জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ঘুষ খাওয়া ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অযোগ্য ব্যক্তিদের সুবিধা দেওয়ায় রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। অবৈধভাবে আয় করা অর্থ দিয়ে দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। পাচারের অর্থে এই সরকারি কর্মকর্তারা ফ্ল্যাট, প্লট, জমি, বাণিজ্যিক ভবন কিনেছেন। শুধু তা-ই নয়, তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, পাচারের অর্থ তারা বিদেশে গচ্ছিতও রেখেছেন। তথ্য গোপন করে তারা আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন বলেও তদন্তে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এদের প্রায় সবার সন্তান বিদেশে ব্যয়বহুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি বছরে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা। এর বাইরে জীবযাপনের ব্যয় আছে। এসব ব্যক্তি ব্যাংকের মাধ্যমে স্টুডেন্ট ফাইল (শিক্ষাবিষয়ক হিসাব) খুলে অর্থ পাচার করেছেন। এসব তথ্য আয়কর রিটার্নে জানানো হয়নি। এসব ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ঘন ঘন বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। তাদের রয়েছে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। সব ব্যাংক হিসাবের তথ্য আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়নি। এদের অনেকের একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি আছে, যা রিটার্নে দেখানো হয়নি। এদের প্রায় সবারই রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট আছে, যেখানে তারা পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। এসব ব্যক্তির অনেকের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগও আছে। নারীর জন্য তারা বড় অঙ্কের অর্থও ব্যয় করেন।

Manual4 Ad Code

 

এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘এনবিআরের কাছে সব করদাতা সম্মানিত। এনবিআর আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের সব ধরনের রাজস্ব সেবা দিয়ে থাকে। তবে কেউ যদি কর ফাঁকি দিয়ে থাকে, তবে তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। বিগত সরকারের সময়ে অনেকে বড় ধরনের দুর্নীতি করেছেন। তারা প্রভাব খাটিয়ে এসব অন্যায় করেও বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নিয়েছেন। এসব ব্যক্তির অনেকের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

এনবিআরের চেয়ারম্যানের নির্দেশে ৫৪ জেলা প্রশাসক ও তাদের পরিবারের কর ফাঁকির অভিযোগ খতিয়ে দেখে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট মূলত কর ফাঁকি এবং অর্থ পাচারের মতো ঘটনা তদন্ত করে থাকে।

 

আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্যানুযায়ী, ডিসি হিসেবে সেই সময়ে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা হলেন মাদারীপুরের মো. ওয়াহিদুল ইসলাম, হবিগঞ্জের মাহমুদুল কবীর মুরাদ, ঢাকার আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, নারায়ণগঞ্জের রাব্বী মিয়া, শেরপুরের আনার কলি মাহবুব, সিলেটের এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, ফেনীর মো. ওয়াহিদুজ্জামান, নোয়াখালীর তন্ময় দাস, কুমিল্লার মো. আবুল ফজল মীর, নেত্রকোনার মঈন উল ইসলাম, ময়মনসিংহের ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, জামালপুরের আহমেদ কবীর, সুনামগঞ্জের মোহাম্মদ আবদুল আহাদ, মৌলভীবাজারের মো. তোফায়েল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জের সায়লা ফারজানা, মানিকগঞ্জের এস এম ফেরদৌস, কিশোরগঞ্জের মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, রাঙামাটির এ কে এম মামুনুর রশিদ, টাঙ্গাইলের মো. শহীদুল ইসলাম, নরসিংদীর সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, শরীয়তপুরের মো. কাজী আবু তালেব, ফরিদপুরের উম্মে সালমা তানজিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জের এ জেড এম নুরুল হক, গোপালগঞ্জের মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার, রাজবাড়ীর মো. শওকত আলী, চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, বান্দরবানের মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, খাগড়াছড়ির মো. শহিদুল ইসলাম, কক্সবাজারের মো. কামাল হোসেন, নাটোরের মো. শাহরিয়াজ, লক্ষ্মীপুরের অঞ্জন চন্দ্র পাল, চাঁদপুরের মো. মাজেদুর রহমান খান, সিরাজগঞ্জের কামরুন নাহার সিদ্দীকা, বগুড়ার ফয়েজ আহমেদ, রাজশাহীর এস এম আব্দুল কাদের, বাগেরহাটের তপন কুমার বিশ্বাস, নওগাঁর মো. মিজানুর রহমান, পাবনার জসিম উদ্দিন, জয়পুরহাটের মোহাম্মদ জাকির হোসেন, খুলনার মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, সাতক্ষীরার এস এম মোস্তফা কামাল, কুষ্টিয়ার মো. আসলাম হোসেন, মাগুরার মো. আলী আকবর, বরগুনার কবীর মাহমুদ, ভোলার মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দীক ও রংপুরের এনামুল হাবীব, চুয়াডাঙ্গার গোপাল চন্দ্র নাথ, ঝিনাইদহের সরোজ কুমার নাথ, নড়াইলের আনজুমান আরা, মেহেরপুরের মো. আতাউল গনি, বরিশালের এস এম অজিয়র রহমান, ঝালকাঠির মো. হামিদুল হক, পিরোজপুরের আবু আহমেদ সিদ্দিকী, পটুয়াখালীর মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী। এসব কর্মকর্তা এখন ওএসডি হিসেবে আছেন।

 

Manual6 Ad Code

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ আসে। একইভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট- বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট (আইটিআইআইইউ), সিআইডিসহ বিভিন্ন তদন্তকারী প্রতিষ্ঠানের কাছেও অভিযোগ জমা পড়ে।

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code