প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

শাহজালালের নিরাপত্তা হুমকির মুখে

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৯, ২০২৪, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ
শাহজালালের নিরাপত্তা হুমকির মুখে

Manual8 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

 

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন দায়িত্বে কাজ করে প্রায় ২৫টি সংস্থা। এর মধ্যে নিরাপত্তাক্ষেত্রে বেশির ভাগ দায়িত্ব পালন করছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্স (এভসেক)। সম্প্রতি এপিবিএনের কমান্ড সেন্টারটি বিনা নোটিশে দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এভসেকের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় এভসেকের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছে এপিবিএন। এতে সরকারি এ দুটি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শাহজালালে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।

Manual7 Ad Code

তবে সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেছেন, পৃথিবীর সব বিমানবন্দরেই এভিয়েশন সিকিউরিটি দায়িত্ব পালন করে। এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্সের সক্ষমতা বাড়লে সেখানে কর্মরত অন্য বাহিনীর সদস্যরা চলে যাবেন।

 

গত ২৯ নভেম্বর মঙ্গলবার বিমানবন্দর আর্মড পুলিশে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার জাকির হোসেনের করা জিডিতে বলা হয়েছে, ‘সকাল সোয়া ১০টার দিকে এভসেকে কর্মরত স্কোয়াড্রন লিডার তাসফিক তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে কল দিয়ে বলেন, ‘অ্যাপ্রোন এরিয়ার (অ্যাপ্রোন এলাকা হলো যেখানে বিমান পার্ক করা হয়, লোড-আনলোড করা হয়, রিফুয়েল করা বা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়) ৩৩ নম্বর গেটে আপনাদের (এপিবিএন) অফিস থেকে মালামাল সরিয়ে ৮ নম্বর হ্যাঙ্গার গেটে রাখা হয়েছে। আপনাদের পুলিশ পাঠিয়ে এগুলো নিয়ে যান।’

 

জিডিতে বলা হয়, ‘পরে তিনি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আগে না জানিয়ে কেন মালামাল সরিয়ে অন্যত্র রাখলেন- এমন প্রশ্নে এভসেকের ডেপুটি ডিরেক্টর অপারেশন সাইফুর রহমান জানান, বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম ও এভসেকের পরিচালক উইং কমান্ডার জাহাঙ্গীরের নির্দেশে এগুলো সরানো হয়েছে।’

জিডিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘পরে তথ্য নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ওই অফিসের প্রবেশমুখে বাম পাশে দেয়ালে লেখা এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ, এয়ার সাইড কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল লেখা সাইনবোর্ডটি ভঙ্গুর অবস্থায় অফিসের ভেতরে রাখা হয়েছে। অফিসের ভেতরে সরকারি কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার, ইলেকট্রনিকস ডিভাইস, ২০১০ সাল থেকে রক্ষিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথিপত্র নির্দিষ্ট স্থানে পাওয়া যায়নি।’

জানা গেছে, এরই মধ্যে অ্যাপ্রোন এলাকায় থাকা এপিবিএনের কমান্ড সেন্টারটি দখলে নিয়ে সেটিকে নিজেদের অফিস বানিয়ে ফেলেছে এভসেক। তবে এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে বিমানবন্দরে কর্মরতদের কাছ থেকে।

বিমানবন্দরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্ট সরকারের পতন ঘনিয়ে এলে এপিবিএনের সদস্যরা তাদের অস্ত্র ও দায়িত্ব রেখে পালিয়ে যান। ফলে ওই সময় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং শঙ্কা তৈরি হয়। পরে এভসেকের সদস্য বাড়িয়ে তাদের দিয়ে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সব কাজ করানো হয়।

Manual6 Ad Code

অন্যদিকে বন্দরের অন্য আরেকটি পক্ষের অভিযোগ, এভসেকের বাধায় এখন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছে না এপিবিএন। শাহজালাল থেকে এপিবিএন সদস্যদের সরিয়ে দিতে এমনটি করা হয়েছে বলেও তারা মনে করছেন।

Manual2 Ad Code

তবে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি এ অভিযোগের মধ্যে বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সরকারি দুই সংস্থার এমন মুখোমুখি অবস্থান নিরাপত্তার জন্য যেমন শঙ্কা হয়ে দেখা দিতে পারে, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবেও বিমানবন্দরের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে।

এভিয়েশন বিশ্লেষক ড. কুদারাত-ই খুদা বলেন, ‘দুটি সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। বাড়তি অন্য কোনো সংস্থা থেকে নিরাপত্তার জন্য লোক আনার প্রয়োজন দেখি না।’

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘সরকারি দুটি সংস্থার এ ধরনের মুখোমুখি অবস্থান কারও কাম্য নয়। এ রকম মুখোমুখি অবস্থানে না থেকে একসঙ্গে মিলেমিশে থাকলে নিরাপত্তা আরও সুসংহত থাকবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিরাপত্তা ইস্যু আরও প্রশংসিত হবে। আমরা চাই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলো একে অপরের সঙ্গে সহমর্মিতা নিয়ে কাজ করবে। সর্বশেষ আমি শুনেছি ৫ আগস্টের সময় দায়িত্ব নিয়ে কিছু ঝামেলা হয়েছিল; তবে সে বিষয়ে তারা আলোচনা করে এখন দায়িত্ব ভাগ করে কাজ করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিমানবন্দরে নিরাপত্তার বিষয়টি একটি কেন্দ্রীয় কমান্ডের অধীনে থাকা উচিত। পৃথিবীর সব দেশেই এটি রয়েছে। অথচ এখানে প্রায় ২৫-৩০টি সংস্থা নিজ নিজ এখতিয়ারে কাজ করে। এদের প্রত্যেকের পৃথক কমান্ড। এ কারণে মাঝে মাঝেই সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। নিরাপত্তাব্যবস্থা যতদিন পর্যন্ত একটি সেন্ট্রাল কমান্ডের আওতায় না আসবে, ততদিন এ অবস্থা চলতে থাকবে।’

জানা গেছে, সিভিল এভিয়েশনের নিয়ন্ত্রণাধীন এভসেকে যে জনবল রয়েছে তা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বাইরে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই বিমানবাহিনী থেকে ৫০০-এর বেশি জনবল নিয়োগ দিয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ১৬০ জন, বাংলাদেশ পুলিশের ৭৯ জন শাহজালালে কর্মরত। এ ছাড়া চলতি বছরের গত ৩ অক্টোবর আবারও ৩২৮ জনসহ আরও প্রায় এক হাজার জনের নিয়োগের মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন চাওয়া হয়।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১০ সালের ১ জুন বিমানবন্দরে নিরাপত্তার কাজ শুরু করে আর্মড পুলিশ। নিরাপত্তার পাশাপাশি চোরাচালান রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই সংস্থাটি।

Manual2 Ad Code

এপিবিএনের অধিনায়ক শিহাব কায়সার খান বলেন, ‘সক্ষমতার দিক থেকে আমরা আগে যেমন ছিলাম, এখনো তাই আছি। আমরা দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আমাদের সেটি করতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি পরিপত্র, আইকাও (আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা)-এর নিয়মাবলি যেভাবে রয়েছে, আমরা সেভাবেই দায়িত্ব পালন করে আসছি। এখন কেন দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে এটি বোঝা যাচ্ছে না। অ্যাপ্রোন এরিয়ায় আমাদের যে অফিসটি ছিল, আমাদের না জানিয়ে সেটি তারা সরিয়ে ফেলেছে।’

এদিকে বিমানবন্দর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এভসেকের বিরুদ্ধে দায়ের করা এপিবিএনের জিডির তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে যেহেতু দুটি সংস্থার মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে, তাই তদন্তের সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে পুলিশ অপেক্ষা করছে।

এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের বিশেষ পরিস্থিতির কারণে এখানে বিমানবাহিনীর সদস্যদের এনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা ঠিক করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারাই ডিউটি করে যাচ্ছেন। আমাদের কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। পরবর্তী সময়ে এপিবিএন দায়িত্বে ফিরে এসেছে। আমাদের তিন কিলোমিটারব্যাপী এয়ারপোর্টের এরিয়া, যা সব মিলিয়ে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার। বহিরাঙ্গনের যে নিরাপত্তা সেটির কাজ এপিবিএন করে যাচ্ছে।’

এপিবিএনকে আবার পুরোনো দায়িত্বে ফেরানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক সংস্থাই তো ভেতরে ডিউটি করতে চায়, সবাইকে তো সুযোগ দেওয়া সম্ভব না।

সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘পৃথিবীর সব বিমানবন্দরেই এভিয়েশন সিকিউরিটি দায়িত্ব পালন করে। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে এভিয়েশন সিকিউরিটিকে আরও শক্তিশালী করা। আমাদের সক্ষমতা বাড়লে বিমানবন্দরে কর্মরত এপিবিএনসহ অন্য কোনো বাহিনীই থাকবে না। বর্তমানে ১ হাজার ৫০০-এর বেশি এভিয়েশন সিকিউরিটির কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। আমরা আরও সাড়ে তিন হাজার জনবল নিয়োগ দিতে যাচ্ছি। সব মিলিয়ে পাঁচ হাজারের মতো সিকিউরিটি কাজ করবে। একসময় এভিয়েশন সিকিউরিটি পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্যরা চলে যাবে।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code