প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

কে হতে পারেন দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৩, ২০২৫, ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ
কে হতে পারেন দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী

Manual2 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদেশি কূটনীতিকরা। তাদের প্রশ্ন ছিল- আপনাদের দল যদি সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? তখন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে থাকায় এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি বিএনপি।

সাত বছর পর প্রশ্নটি আবার সামনে আসছে। তবে এবার শুধু বিএনপি নিয়ে নয়, অন্য দল বা জোট হলে কে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, কে যোগ্য এসব নিয়েও আলোচনা জোরদার হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী যদি ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে এ আলোচনা আরও কেন্দ্রবিন্দুতে আসবে।

 

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর বড় দল হিসেবে বিএনপি ছিল ক্ষমতার আলোচনায় এগিয়ে। সে জন্য বিএনপি নিয়ে আলোচনা বেশি। সম্প্রতি এক বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি সুস্থ থাকেন এবং কাজ করার উপযোগী থাকেন, তাহলে তো তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন। তার অনুপস্থিতিতে আমাদের চেয়ারম্যান তারেক রহমান হবেন। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত বা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই।

 

দলের ভেতরের অনেকেই মনে করেন, বিএনপি যদি সরকার গঠনের সুযোগ পায়, তবে ক্ষমতার বিন্যাসে অনেকটা সৌদি আরবের ‘বাদশা–রাজপুত্র’ মডেল অনুসরণ করতে পারে। খালেদা জিয়া থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর আসনে, আর তারেক রহমান হবেন নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনিক পরামর্শদাতা হিসেবে সরকারের মুখ্য শক্তি।

 

Manual3 Ad Code

তবে দলের তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ বিশ্বাস করে, তারেক রহমানের নেতৃত্বেই দলের ভবিষ্যৎ রাজনীতি আরও আধুনিক ও গতিশীল হতে পারে।

Manual8 Ad Code

ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বড় শক্তি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এরই মধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। কিন্তু তারা সরকার গঠন করতে পারলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন—সে বিষয়ে এখনো কোনো ঘোষণা দেয়নি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘নির্বাচন হোক, নির্বাচনে কারা নির্বাচিত হয়—তারপর দেখা যাবে।’

 

ক্ষমতার আলোচনায় আছে জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটে তৈরি তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)। দলটি একক কিংবা জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বলে আলোচনা চলছে। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আমরা দলীয় প্রধান ও সরকার প্রধানকে আলাদা রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকার গঠন করতে পারলে কে সরকারপ্রধান হবেন—এ মুহূর্তে তা বলা ঠিক হবে না।’

গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশে কার্যত একদলীয় শাসন ছিল—যেখানে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে দলটি ক্ষমতাচ্যুত। বর্তমানে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। আগামী নির্বাচনে তারা অংশ নিতে পারবে কি না—সে প্রশ্নের যবনিপাত এখনো হয়নি।

সূত্র বলছে, দলটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে শেখ হাসিনা আবারও নেতৃত্ব দেবেন কি না, নাকি নতুন নেতৃত্ব উঠে আসবে—সে বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা পাওয়া যায়নি। রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নিয়ে যে আলোচনা চলছে সেটা নিয়ে দলটির মধ্যেই রয়েছে নানান দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। সুতরাং, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবে সে আলোচনা এখন অনেকটাই দূরে।

 

‘প্রধানমন্ত্রীর নাম প্রকাশ করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘প্রধানমন্ত্রী কে হবেন’ প্রশ্নটি শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, বরং এটি দলগুলোর গণতান্ত্রিক চর্চা, নীতি ও নেতৃত্ব নির্বাচনের স্বচ্ছতারও পরীক্ষা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, ‘এই মুহূর্তে যে তিনটি রাজনৈতিক দলের সরকার গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার মধ্যে আমি মনে করি একটি দল ১০ থেকে ১৫টি আসন পেতে পারে, আরেকটি দল সারাদেশে কোথাও আসন পাবে না। একমাত্র বিএনপি থেকেই আগামী সরকারপ্রধান নির্ধারিত হতে পারেন।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘যদি খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন, তাহলে তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হবে বলে আমি মনে করি।’

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোবাশ্বের হোসেন টুটুল বলেন, ‘যে কোনো দেশের সরকারপ্রধান কে হচ্ছেন— তার ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের গুণাবলি সরকার পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। সেজন্য সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীর নাম জনসমক্ষে প্রকাশিত থাকলে ভোটারদের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। এতে নির্বাচিত নেতৃত্ব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সরকার পরিচালনা করতে পারেন। যদিও সংসদীয় গণতন্ত্রে মন্ত্রিসভা সামগ্রিকভাবে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকে, তবুও প্রধান নির্বাহী হিসেবে বিজয়ী দল কাকে দায়িত্ব দিচ্ছে— তা জনগণের কাছে স্পষ্ট থাকলে নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা ও জবাবদিহিতা দুটিই বাড়ে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যক্তিত্বের সংকট কতটা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে, তার সাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে সংসদীয় গণতন্ত্রের তীর্থভূমি যুক্তরাজ্য। অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিক প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করতে গিয়ে টরিরা এমন অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে যে, পরবর্তীসময়ে সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টির কাছে পরাজিত হয়েছে। অতএব, সরকার ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা এবং জনগণের আস্থা অর্জনের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর নাম জনসমক্ষে প্রকাশ করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা।’

রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী নিয়ে ধারণা দিচ্ছে না। শুধু বিএনপি কিছুটা স্পষ্ট করেছে। ফলে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের সম্ভাব্য রূপরেখা নিয়ে কূটনৈতিক মহল, মিডিয়া ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নিজেদের মতো করেই ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তাই প্রকৃত উত্তর এখনো অমীমাংসিত।

স্বাধীনতার পর যারা দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন

তাজউদ্দীন আহমদ (১৭ এপ্রিল ১৯৭১–১২ জানুয়ারি ১৯৭২)-আওয়ামী লীগ

 

শেখ মুজিবুর রহমান (১২ জানুয়ারি ১৯৭২–২৪ জানুয়ারি ১৯৭৫)-আওয়ামী লীগ

মো. মনসুর আলী (২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫–১৫ আগস্ট ১৯৭৫)-আওয়ামী লীগ

Manual7 Ad Code

মশিউর রহমান (২৯ জুন ১৯৭৮-১২ মার্চ ১৯৭৯) জাগদল/ বিএনপি

 

শাহ আজিজুর রহমান (১৫ এপ্রিল ১৯৭৯-২৪ মার্চ ১৯৮২)

আতাউর রহমান খান (৩০ মার্চ ১৯৮৪-১৫ জানুয়ারি ১৯৮৫)-জাতীয় পার্টি/জনদল

Manual5 Ad Code

মিজানুর রহমান চৌধুরী (৯ জুলাই ১৯৮৬-২৭ মার্চ ১৯৮৮)-জাতীয় পার্টি

মওদুদ আহমদ (২৭ মার্চ ১৯৮৮-১২ আগস্ট ১৯৮৯)- জাতীয় পার্টি

কাজী জাফর আহমেদ (১২ আগস্ট ১৯৮৯-৬ ডিসেম্বর ১৯৯০)-জাতীয় পার্টি

খালেদা জিয়া (২০ মার্চ ১৯৯১, ১৯৯৬ (স্বল্পমেয়াদ) ও ২০০১)-বিএনপি

শেখ হাসিনা (১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪)-আওয়ামী লীগ।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code