প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

প্রশাসনে এখনো সুবিধাভোগীদের প্রাধান্য

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৬, ২০২৫, ০৮:০০ পূর্বাহ্ণ
প্রশাসনে এখনো সুবিধাভোগীদের প্রাধান্য

Manual5 Ad Code

 

Manual3 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual1 Ad Code

অন্তর্বর্তী সরকারের শেষ সময়েও প্রশাসনে সচিব পদোন্নতিতেও বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত এক বছর ধরে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব পদোন্নতিতে বিগত সরকারের সুধিাভোগীদের প্রাধান্য দেওয়া প্রশাসনে সমালোচনার অন্ত ছিল না। একইভাবে সুবিধাভোগীদের জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়েও গণমাধ্যমে একাধিক খবর প্রকাশিত হয়।

তৎকালীন জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমানের পরোক্ষ সহযোগিতা ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। শেষ পর্যন্ত তাকে অন্য মন্ত্রণালয়ে সরিয়ে দেয় সরকার। সমালোচনামুক্ত হতে জনপ্রশাসন-বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটিও সরকার বাতিল করে। প্রশাসনের অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলেন, পদোন্নতি ও পদায়নে বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিত এবং যোগ্য কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। এরপরও সরকার সমালোচনা থেকে বের হতে পারেনি। ঘোর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়মিত পদোন্নতি পাওয়া এবং ওই সরকারের ঘনিষ্ঠরাই সর্বশেষ সচিব পদোন্নতি পেয়েছেন।

 

রবিবার রাতে এ সংক্রান্ত পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিসিএস প্রশাসন ১৭ ব্যাচ থেকে সচিব পদোন্নতির সঙ্গে বিসিএস ১৫ ব্যাচের এক কর্মকর্তাকে সচিব পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তবে বিসিএস ১৭ ব্যাচের মেধাক্রমের প্রথম কর্মর্কতাকে পদোন্নতি দিলেও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে মেধাক্রমের নিচে থাকা অন্য কর্মকর্তাকে সচিব পদোন্নতি দেওয়ায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। তারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের সামনের সারির কর্তা ছিলেন। এই সংগঠনের শীর্ষদের ইশারায় বিগত সরকারের আমলে নারী কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক, পদোন্নতি ও পদায়ন হয়েছিল। সেই সংগঠনের সম্মুখসারির নারী কর্মকর্তাদের অতীতের মতোই ব্যক্তি-সখ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে সচিব করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

 

আবার বিসিএস ১৫ ব্যাচের যোগ্য দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে আঞ্চলিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে একজনকে সচিব করা হয়েছে। তাই অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কোন অদৃশ্য শক্তির জাদুবলে ফ্যাসিস্ট আমলের সুবিধাভোগীরাই বারবার পদোন্নতি পেয়ে আসছেন।

Manual5 Ad Code

জানা যায়, অতীতে একাধিক পদোন্নতিতে প্রভাবশালী মহলের ইঙ্গিতেই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও সেই নেটওয়ার্কের প্রভাবই প্রতিফলিত হয়েছে সর্বশেষ সচিবসহ কয়েকটি পদোন্নতিতে। বিশেষ করে বিসিএস ১৭ ব্যাচের দুই নারী কর্মকর্তার একজন ছিলেন ‘উইমেন নেটওয়ার্কের শীর্ষ পর্যায়ের। তাকে সচিব করা নিয়ে প্রশাসনে চলছে তীব্র সমালোচনা।

জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। এ সময় জনপ্রশাসনসহ অন্যান্য সংস্থায়ও সব ধরনের পদোন্নতি ও পদায়ন বন্ধ থাকবে। সাম্প্রতিক প্রশাসনে সচিব পদোন্নতিকে অনেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের ‘শেষ পদোন্নতি’ ধরে নিয়েছেন। এ অবস্থায় বিসিএস ১৭ ব্যাচের সুবিধাভোগী দুই নারী কর্মকর্তার পদোন্নতিতে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। খোদ ১৭ ব্যাচের কর্মকর্তারাই বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন। জ্যেষ্ঠতা ও মেধা থাকা সত্ত্বেও বিগত সময়ে আওয়ামীবিরোধী রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে বারবার পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়েছিল। তাদের সিনিয়র সহকারী সচিব বা উপসচিব হয়ে বছরের পর বছর গুরুত্বহীন দপ্তরে থাকতে হয়েছে। এসব কর্মকর্তা ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুতের পর অনেকেই ভূতাপেক্ষ জ্যেষ্ঠতাসহ পদোন্নতি পেয়েছেন। এরপরও রহস্যজনকভাবে তারা গত এক বছরে উপেক্ষিত হয়েছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও পদোন্নতির এ ধরনের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক প্রভাব ও ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কের বিষয়টি স্পষ্ট। প্রজ্ঞাপনে দেখা যায, যাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে সবাই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব পদে ছিলেন। তবে যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে তারা মাঠ প্রশাসনে দক্ষতার জন্য পরিচিত ছিলেন।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিএস ১৭ ব্যাচের এক কর্মকর্তা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা ছিল বেশি। কিন্তু বঞ্চিতদের অগ্রাধিকার না দিয়ে সুবিধাভোগীদের বারবার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অতীতে যারা নিয়মিত পদোন্নতি ও পদায়ন পেয়েছেন তাদেরকেই সচিব করা হয়েছে। এটি প্রশাসনিক ন্যায্যতার পরিপন্থী। আর যারা এক যুগেরও বেশি সময় বঞ্চিত ছিলেন, তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে অনেকের মনোবল ভেঙে পড়েছে।

রবিবার রাতে তিনটি পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপনে তিনজন অতিরিক্ত সচিবকে সচিব পদে পদায়ন করা হয়। অর্থ বিভাগে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব বিলকিস জাহান রিমিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. নুরুন্নাহার নাহার চৌধুরীকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শওকত রশীদ চৌধুরী পদোন্নতি পেয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব করা হয়েছে। অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত সচিব এসএম শাকিল আখতারকে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব পদে পদায়ন করা হয়েছে। দুই নারী কর্মকর্তা বিসিএস ১৭ ব্যাচের। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও তার নাম বিবেচনায় আনা হয়নি।

এ বিষয়ে সাবেক আমলা ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুস সবুর বলেন, ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি এখন প্রশাসনের অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু একই ব্যাচের মধ্যে বৈষম্য হলে তা খুবই হতাশাজনক। এতে প্রশাসনে ‘বিশ্বাসের সংকট’ তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসনে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কথা থাকলেও বাস্তবে পদোন্নতির মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের অবস্থান শক্ত করা হচ্ছে। এতে করে যোগ্য কর্মকর্তারা পিছিয়ে পড়ছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের শেষ সময়ে প্রশাসনে এই পদোন্নতি নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক আবারও প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশের প্রশাসনে এখনও স্বচ্ছ ও মেধাভিত্তিক পদোন্নতি-ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে ওঠেনি।

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code