প্রজন্ম ডেস্ক:
জাতীয় নির্বাচনের দিন যতই কাছে আসছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক সহিংসতা ক্রমশ বাড়ছে। বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, রেল ও সড়কপথ অবরোধসহ বিভিন্ন রকম বিক্ষোভ সংঘটিত হচ্ছে। প্রতিপক্ষের হামলার ফলে প্রাণহানিও ঘটেছে, আহতও হয়েছে অনেকে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়নের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি এবং অনলাইন পর্যবেক্ষণও জোরদার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক সহিংসতা-সংঘাত রোধে এবার গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভর করে অগ্রিম কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনি এলাকা ও জেলা-থানাভিত্তিক সাবেক ও বর্তমান সন্ত্রাসীদের তালিকা প্রস্তুত করে অগ্রিম কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জামিন পাওয়া অপরাধীদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করাও পুলিশের অগ্রাধিকারে রয়েছে। এ পদক্ষেপগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাদারিত্বের পরিচয় দিচ্ছে। নানা শঙ্কার মধ্যে ধীরে হলেও চলতে শুরু করেছে নির্বাচনের ট্রেন। বিশেষ করে গত সোমবার বিএনপি ২৩৭টি আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণার পর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে নির্বাচনি আমেজ।
তবে এ প্রার্থিতা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পক্ষে-বিপক্ষে আর মনোনয়নবঞ্চিতদের মধ্যে শুরু হয়ে গেছে সংঘাত-সংঘর্ষ। এসব ঘটনায় প্রাণহানিও হয়েছে। জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। তবে এসব পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে পেশাদারিত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে গত কয়েক দিনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ নির্বাচনি গণসংযোগে গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় তার কর্মী, পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা নিহত হয়েছেন।
জয়পুরহাটে বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে, যেখানে দুজন আহত হন। এর আগে ৫ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হন।
গত তিন দিনে দেশের অর্ধশতাধিক স্থানে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন না পাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে। রেলপথ ও সড়ক অবরোধের কারণে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, রাজনৈতিক সহিংসতার মাত্রা বাড়বে। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা জানান, বর্তমানে পুলিশের সক্ষমতা থাকায় এ ধরনের সংঘাত মোকাবিলা করা সম্ভব। তিনি বলেন, পুলিশ ইতিমধ্যেই একাধিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় অভ্যস্ত। বাহিনী হিসেবে কোনো ঘাটতি নেই।
পুলিশ সদর দফরের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকে সামনে রেখে মিছিল ও জনসমাবেশ করবে। এসব কর্মসূচি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পুলিশ সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি সতর্ক করে জানান, কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ অনলাইনে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। তবে পুলিশ এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সর্বদা সতর্ক এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে বিভিন্ন থানা-ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ এখনও উদ্ধার হয়নি। পুলিশ এসব অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দফরের এআইজি (মিডিয়া) শাহাদাত হোসেন বলেন, শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সবসময় পরিকল্পনামাফিক কাজ করে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
খন্দকার রফিকুল ইসলাম রাজনৈতিক দলগুলোকে পরামর্শ দেন, সভা-সমাবেশের সময় অবৈধ বা অচেনা কাউকে উপস্থিতি নিশ্চিত করা উচিত। নির্বাচনি এলাকায় নিজের গোয়েন্দা ইউনিট ব্যবহার করলে বহিরাগত হামলার সম্ভাবনা কমে যায়।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের প্রধান অগ্রাধিকার।
Sharing is caring!