প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ঘাঁটিতে শীর্ষ নেতৃত্বের প্রত্যাবর্তন— বগুড়ায় নতুন নির্বাচনী সমীকরণ

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ১৯, ২০২৫, ০২:১০ অপরাহ্ণ
ঘাঁটিতে শীর্ষ নেতৃত্বের প্রত্যাবর্তন— বগুড়ায় নতুন নির্বাচনী সমীকরণ

Manual4 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হলেও বগুড়ায় ভোটের উত্তাপ আগেই ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপি ইতোমধ্যে বগুড়া জেলায় পাঁচ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে—যার মধ্যে দুটি আসনে লড়বেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ সময় পর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত এই জেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অনুপ্রাণিত আবহ দেখা যাচ্ছে।

Manual6 Ad Code

২০০৮ সালের পর ধারাবাহিকভাবে একতরফা বা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে বগুড়ার ৬টি আসনেই বিএনপি কার্যত অনুপস্থিত ছিল। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরবর্তী প্রেক্ষাপটে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। ভোটার ও স্থানীয়দের মধ্যেও নতুন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।

বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জেলা বগুড়া দলের ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ ১৭ বছরে আওয়ামী লীগের একতরফা ও পাতানো নির্বচনকে কেন্দ্র করে টানা এক দশকের বেশি সময় ধরে এই দুই আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী পায়নি ভোটাররা। এর মধ্যে ২০১৪ সালে নির্বচনে অংশ নেয়নি বিএনপি, ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতেই হয় ভোট। একইভাবে ২০২৪ সালের নির্বাচনেও কারসাজির প্রতিবাদে ভোটের মাঠে ছিল না দলটি। সেই সুযোগে বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত বগুড়ার ৬টি আসনে ভাগ বসায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর ২০২৬ সালের নির্বাচন ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। ভোটার ও স্থানীয়দের মধ্যেও নতুন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭ আসনটি ঐতিহ্যগতভাবে বিএনপি চেয়াপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আসন হিসেবে পরিচিত। তিনি এই আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি হিসেবে গাবতলীকে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

Manual1 Ad Code

এদিকে বগুড়ার এই দুই আসনে ইতোমধ্যে আরও ৪টি দল তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। দলগুলো হলো জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও গণতন্ত্র মঞ্চ।

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর)
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি গাবতলী নিয়ে গঠিত এই আসনটি ঐতিহ্যগতভাবে খালেদা জিয়ার আসন হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত টানা সব নির্বাচনে তিনি এখানে জয়ী হন। তবে তিনি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে তিনবার জয়ী হন বিএনপির স্থানীয় নেতা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, একবার উপনির্বাচনে প্রার্থী করে জিতিয়ে আনা হয় কেন্দ্রীয় নেতা মওদুদ আহমদকে।
আসন্ন নির্বাচনেও এখানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। জামায়াত প্রার্থী করেছে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম রব্বানীকে। এ ছাড়া মাঠে আছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম ও বাসদের শহিদুল ইসলাম। তবে ধানের শীষ ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ঘিরেই আলোচনা তু্ঙ্গে।

আসন্ন নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী গোলাম রাব্বানীকে লড়তে হবে বেগম খালেদা জিয়া মতো শীর্ষ নেতার সঙ্গে। নির্বাচনী সমীকরণ বলছে, বগুড়া-৭ আসনে এবারের জামায়াত প্রার্থী গোলাম রব্বানী এর আগেও বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভোট যুদ্ধে লড়েছেন। তখন জামায়াত তাকে বগুড়া-৬ আসনের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিল। এবার তাকে আসন পরিবর্তন করে বগুড়া-৭ আসনে মনোনয়ন দিলেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এখানেও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।

১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া বগুড়া-৬ আসনে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৬৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তার প্রতিপক্ষ জামায়াত মনোনীত গোলাম রব্বানী ৪৬ হাজার ৯১৭ ভোট পেয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়াকে প্রার্থী ঘোষণার পর তার প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত প্রার্থী গোলাম রব্বানীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার সৌভাগ্য যে এর আগেও আমি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। ভাগ্যক্রমে এবারও বেগম খালেদা জিয়া প্রার্থী হওয়ায় আমার নির্বাচনী কর্মীরা বেশ উজ্জীবিত হয়েছেন। ভোটারদের মধ্যেও আগ্রহ এবং সাড়া দেখতে পাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত জয়-পরাজয় নির্ভর করে আল্লাহর ওপর। আমার ভোটাররাই ব্যালটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবেন।

বগুড়া-০৬ (সদর)
১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে জয়ী হয়ে এসেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এবার এখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রার্থী করেছে বিএনপি।

এ আসনে তারেক রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন শহর জামায়াতের আমির ও সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল। অন্যান্য দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন- ইসলামী আন্দোলনের বগুড়া জেলা সভাপতি আ.ন.ম মামুনুর রশীদ, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির নেতা আবদুর রউফ, বাসদের অ্যাডভোকেট দিলরুবা নুরী। এ পর্যন্ত পাঁচটি দল তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়া-০৬ (সদর) আসন থেকে নির্বাচন করবেন এটা আমাদের অত্যন্ত গর্বের বিষয়। জীবনের প্রথম তিনি প্রার্থী হচ্ছেন এটা কত বড় আনন্দের তা বলে বোঝানো যাবে না। বগুড়ার নেতাকর্মীরা উৎসবমুখর পরিবেশে তারেক রহমানের ভোট করবেন।’

Manual4 Ad Code

জামায়াত মনোনীত প্রার্থী আবিদুর রহমান সোহেল বলেন, ‘গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো নির্বাচন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবে। জনগণ যাকে ভালো মনে করবেন; তাকেই বেছে নিবেন। তা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।’

Manual2 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code