প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপির মনোভাব কি বদলাচ্ছে?

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ০৬:৩২ পূর্বাহ্ণ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপির মনোভাব কি বদলাচ্ছে?

Manual6 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি শুরু থেকেই সমর্থন ও আস্থা প্রকাশ করে এলেও নির্বাচনের ‘সুস্পষ্ট’ সময়সীমা নিয়ে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় এখন প্রতিনিয়ত অসন্তোষ জানাচ্ছেন দলটির নেতারা।

রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপির রোডম্যাপ ঘোষণার তাগিদের মুখে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করেন। কিন্তু, তাতে ‘অস্পষ্টতার’ অভিযোগ তুলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন দলটির মহাসচিব।

এর আগেও, উপদেষ্টাদের কারো কারো বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা গেছে দলটিকে। উপদেষ্টাদের সেসব বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে যে ভাষ্য প্রকাশ পেয়েছিল তাতে বিএনপির প্রতিই ইঙ্গিত ছিল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে সব কথা মূলত নির্বাচন ও সংস্কারকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে।

নির্বাচন নাকি সংস্কার, কোনটি অগ্রাধিকার পাবে এই প্রশ্নেই বিভক্ত রাজনৈতিক শক্তিগুলো।

বিএনপি ন্যূনতম জরুরি সংস্কার করে নির্বাচনের পক্ষে আর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা, জামায়াত এবং বেশ কিছু রাজনৈতিক দল সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেয়ার পক্ষপাতী।

Manual1 Ad Code

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ডেমোক্রেটিক অর্ডারে (গণতান্ত্রিক ধারায়) দেশটাকে ফিরিয়ে নেয়া এক নাম্বার প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার)।১৬ বছর ধরে মানুষ রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে গণতন্ত্রের জন্য, দেশের ওপর তার মালিকানা ফিরে পাবার জন্য। যারা সেটা অনুধাবন করতে পারবেন না সেটা তাদের সমস্যা, আমাদের সমস্যা নয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলছেন, এখনো আশা করি আমাদের মতামত আমলে নিয়ে তারা সঠিকভাবে দেশটা পরিচালনা করবে এবং সামনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে।

অবশ্য সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে থাকা কোনো পক্ষের সঙ্গেই অন্তর্বর্তী সরকারের বড় ধরনের কোনো মতভেদ হয়েছে, এমনটা তারা অনুভব করেন না।রাষ্ট্র সংস্কার, নির্বাচন, বিচার এগুলো জটিল প্রক্রিয়া। এসব ক্ষেত্রে মতভিন্নতার মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্যই প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটা কমিশন গঠন করা হচ্ছে।

দাবি করেন, কোনো ধরনের আস্থার সংকটও তৈরি হয়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক তারানা বেগমের মতে, সরকার কৌশলী হয়ে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় কমতে কিংবা বাড়তেও পারে বলে যেসব ধারণা দিচ্ছে, সেগুলোই ধোঁয়াশা ও সংশয় বাড়াচ্ছে।

আবার আরেকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনের সময়সীমা একরকম স্পষ্টই করা হয়েছে।দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে এর অন্যথা হওয়ার কথা নয়।

এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য কি সরকারের প্রতি তাদের মনোভাব পরিবর্তনের আভাস নাকি এর অন্য কোনো রাজনৈতিক মাত্রা রয়েছে?

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করে যার মধ্যে রয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

Manual1 Ad Code

তাদের প্রতিবেদন আসার আগেই পুরনো আইনের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়।

Manual7 Ad Code

প্রধান উপদেষ্টা সম্ভাব্য সময়সীমা জানানোর পর তার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, এবার দিনক্ষণ অর্থাৎ তফসিল ঘোষণার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সরকারের কাজ তাদের সহায়তা দিয়ে যাওয়া।

তারপরও বিএনপি নেতাদের তরফে সময়সীমা নিয়ে তাগিদ দেওয়া কমেনি। তাহলে কি সরকারের প্রতি দলটির ‘আস্থা’ ও ‘সমর্থন’ এর মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে?

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর এখন দেশের অগ্রাধিকার। সেদিক থেকে (মনোভাবের) পরিবর্তন হয়নি। তবে, দেশের জনগণের মধ্যে যেহেতু নির্বাচন নিয়ে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করতেছে তাই আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে এটা পরিষ্কার করার কথা বলছি।

Manual4 Ad Code

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, সবসময়ে যে সব বিষয়ে প্রশংসা করতে হবে এমন নয়। সমালোচনা বেশি করে ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে আসলে সরকারকে সহযোগিতাই করা হয় অন্যভাবে যদি চিন্তা করেন।

বিএনপি নেতাদের বক্তব্যকে তাদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

অধ্যাপক নজরুল ব্যাখ্যা করেন, রাজনৈতিক কৌশল এক জিনিস আর রাজনৈতিক পরিকল্পনা অন্য জিনিস। এখন বিএনপি হয়তো রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এগুলো বলছে। কিন্তু আমরা কখনো ফিল করি না যে বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল যারা আন্দোলনের পক্ষে ছিল তাদের সাথে বড় ধরনের কোনো মতভেদ হয়েছে।

মতভেদ নিরুৎসাহিতও করতে চান না তিনি।

সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, আস্থার সংকট হলে চিন্তিত হওয়ার ব্যাপার থাকে। কিন্তু আস্থার সংকট হয়েছে বলে মনে করি না।

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কমিশনের আলোচনার মধ্য দিয়ে যেকোনো বিষয়ে মতভিন্নতা থাকলেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবো এটা আমরা মনে করি।

বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল?

বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বেশ কয়েকবার ‘সংস্কারের প্রয়োজনে যদি’র উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। সরকারের তরফে সংস্কারের শর্তসাপেক্ষে নির্বাচনের সময়সীমা উল্লেখ করায় বিএনপি’র মধ্যে উদ্বেগ কাটেনি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক তারানা বেগম বলেন, সরকার যে কৌশলী হয়ে বলছে বাড়তেও পারে কমতেও পারে, এগুলোই ধোঁয়াশা ও সংশয় বাড়াচ্ছে। এর ফলে ভবিষ্যতে কী হতে পারে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ যেমন ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোও তেমন ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। তাই, স্বচ্ছ ঘোষণা থাকা উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, বিএনপির সবার বক্তব্য যদি একসাথে রাখি, বিএনপি একটা অস্থিরতায় ভুগছে দলগতভাবে। তারা শঙ্কায় ভুগছে এক এগারোর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে কি না।

সরকারের বক্তব্যে অবশ্য কোনো অস্পষ্টতা দেখছেন না অধ্যাপক আহমেদ।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code