প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

হাসিনা সরকারের অপরিণামদর্শিতা: বকেয়ায় বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ খাত

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ
হাসিনা সরকারের অপরিণামদর্শিতা: বকেয়ায় বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ খাত

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual3 Ad Code

 

বিদ্যুৎ খাতে বর্তমানে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বকেয়া ৪২ হাজার কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ এ দেনা পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে লুটপাট, অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে তৈরি হওয়া এ ‘বকেয়ার পাহাড়’ চিন্তার ভাঁজ তৈরি করছে অন্তর্বর্তী সরকারের কপালেও।

 

ইতোমধ্যে আর্থিক সংকটে বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানির সরবরাহ ধরে রাখা নিয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। দেশে প্রতি বছর ১৩ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ জ্বালানি আমদানি করতে হয়, যার অর্ধেক প্রয়োজন পড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। সামনের দিনে এ খরচের পরিমাণ আরও বাড়বে, কিন্তু সেজন্য মিলছে না প্রয়োজনীয় অর্থের। প্রয়োজন মতো কয়লা, এলএনজি ও ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ফলে বাড়ছে লোডশেডিং। প্রভাব পড়ছে শিল্প কারখানাসহ অন্যান্য খাতেও।

জ্বালানি খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন প্রাথমিক জ্বালানির (জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা) সরবরাহ ঠিক রাখা।

 

পুনরুদ্ধার হলো বিপিডিবির অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজপাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৪৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ৯১টি কারিগরি জটিলতা, জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে বন্ধ রয়েছে। ফলে বাকি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এখন গড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১৩ হাজার মেগাওয়াট।

 

বকেয়ায় বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ খাত

বিদ্যুৎ খাতে বর্তমানে বিপিডিবির বকেয়ার পরিমাণ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের (আইপিপি) পাওনা সাত হাজার কোটি টাকা।

 

এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনবাবদ গ্যাস বিল ১৭ হাজার কোটি টাকা, সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল ১০ হাজার কোটি টাকা, আদানি গ্রুপসহ ভারতের সরকারি-বেসরকারি খাতের পাওনা রয়েছে আট হাজার কোটি টাকা।

আমদানিনির্ভর জ্বালানিতেও বকেয়ার পরিমাণ কম নয়। ডলার-সংকটের কারণে শেখ হাসিনা সরকারের সময় এলএনজির বিল পরিশোধ করা যায়নি। এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদন সচল রাখতে প্রয়োজনীয় জ্বালানির নিশ্চয়তা এবং বকেয়া অর্থ পরিশোধে চাপে পড়েছে সরকার। অথচ ডলারের ঘাটতি থাকায় সরকার বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না।কর্মসূচি স্থগিত, সারা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিকএদিকে, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিবাবদ সরকারের বর্তমান বকেয়ার পরিমাণ ৬০৭ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন বা ৬০ কোটি ডলারের বেশি। বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় বন্ধ রয়েছে এলএনজি কেনা। এ ছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি কেনার সুযোগ নেই। এ সংকটের প্রভাব পড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। জ্বালানি সংকটের ফলে ব্যাপক মাত্রায় লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগে পড়ছে জনজীবন।

Manual6 Ad Code

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বকেয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলএনজি আমদানির বকেয়া বিলের পরিমাণ ছিল ৬৩ কোটি ডলার। ১০ সেপ্টেম্বর কাতার এনার্জিকে এর একটা ছোট অংশ (আড়াই কোটি ডলার) পরিশোধ করেছে সরকার। জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বাকি ৬০ কোটি ডলার দ্রুত পরিশোধের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

 

দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আমদানি করে। এর আগে আইটিএফসি (ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক- আইডিবি’র একটি সহযোগী সংস্থা) থেকে ঋণ নিয়ে কাতার এনার্জির দুটি বিল গত মে ও জুলাই মাসে পরিশোধ করেছিল জ্বালানি বিভাগ। মে মাসে আইটিএফসির সেই ঋণের একটি কিস্তিও বকেয়া পড়ে।

চুক্তির বাইরে দ্রুত সরবরাহ পেতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভিটল এশিয়া, গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড ও এক্সেলারেট এনার্জির মাধ্যমে গ্যাস কিনেছে জ্বালানি বিভাগ। এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্যাসের দামের ৮৭ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পড়েছে।

জানা গেছে, বকেয়ার অঙ্ক বেশি থাকায় ২ ও ৯ সেপ্টেম্বর দুই কার্গো এলএনজি খালাস না করে সরবরাহকারীরা ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। পরে জ্বালানি বিভাগ জরুরিভাবে অনুরোধ করে তা খালাসের ব্যবস্থা করে।

 

চ্যালেঞ্জের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার

বিদ্যুতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার অন্যতম শর্ত জ্বালানি সরবরাহ ঠিক রাখা। অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জ্বালানি আমদানিতে সৃষ্ট সংকট অন্তর্বর্তী সরকারকে দাঁড় করিয়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে। এরই মধ্যে জ্বালানি আমদানিতে অর্থ সংস্থানের জন্য বাজেট সহায়তা হিসেবে বিশ্ব ব্যাংকের কাছে এক বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে। গত মাসে এক চিঠিতে দুই কিস্তিতে ৫০ কোটি ডলার করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।

Manual2 Ad Code

জ্বালানি খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারের কোনো সংকট নেই। জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডলার ও এলসি নিষ্পত্তি করা গেলে সুষ্ঠুভাবে জ্বালানি সরবরাহ ঠিক রাখা যাবে। সরবরাহকারীদের সঙ্গে নিয়মিত লেনদেন ঠিক না রাখলে সংকট থেকেই যায়।তবে, বকেয়া পরিশোধে সরকার কাজ করছে জানিয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বকেয়া পরিশোধসহ সংকট কাটাতে জ্বালানি আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু বিল পরিশোধ করা হয়েছে, যা চলমান থাকবে।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, বকেয়া পরিশোধের ক্ষেত্রে আপাতত বড় ভূমিকা রাখতে পারে ভর্তুকি। বিদেশ থেকে যে আর্থিক সহায়তা আসবে, তা মূলত লোনের মধ্যেই পড়ে। সুতরাং ভর্তুকি দেওয়া ছাড়া আপাতত কোনো উপায় নেই।

Manual6 Ad Code

‘তবে, বকেয়ার পরিমাণ কমাতে নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেলের ব্যবহার একেবারে কমিয়ে এনে গ্যাসের (এলএনজি) ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। দেশীয় উৎপাদন চাইলেই সহসা বাড়ানো যাবে না, ১০০ কূপ খনন করে গ্যাস উত্তোলন করতে কয়েক বছর সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে এলএনজি আমদানিটা সহজ। তেলের ব্যবহার কমিয়ে আনলে খরচের পরিমাণটাও কমে আসবে। এ ছাড়া বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগ রেশনিং করতে পারে।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code