প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

রাষ্ট্রপতি আপাতত থাকছেন

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২৫, ২০২৪, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ণ
রাষ্ট্রপতি আপাতত থাকছেন

Manual7 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

আপাতত রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরতে হচ্ছে না মো. সাহাবুদ্দিনকে। রাষ্ট্রপতি প্রশ্নে বেশ অস্বস্তিতে থাকলেও এবং তাকে অপসারণের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহলের চাপ থাকার পরও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই মুহূর্তে বিকল্প কোনো চিন্তা করছে না। অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাষ্ট্রপতির পদে মো. সাহাবুদ্দিনের থাকা না-থাকার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করা হয়। এ সময় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের এ বৈঠক হয়। বৈঠকের পর বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিকালে সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘রাষ্ট্রপতি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে।’ তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও বৈঠক করার প্রাথমিক ভাবনা রয়েছে।’

এদিকে কয়েকটি সূত্র জানাচ্ছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর করছেন। আজ শুক্রবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি ফেরার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রসঙ্গটি নিয়ে আবারও বৈঠক হতে পারে।

 

যেসব কারণে আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নয়

 

রাষ্ট্রপতির থাকা না-থাকার ব্যাপারে আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার নেপথ্যে বেশ কিছু বিষয় কাজ করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

প্রথমত, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থন এখনও মিলছে না। রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে দেশজুড়ে নানা আলোচনার মধ্যে গত বুধবার সকালেই দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের তিন নেতা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে তাদের অবস্থান জানিয়ে দেন। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দলটি এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চায় না। কারণ বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্রপতি পদে শূন্যতা হলে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে। এ প্রসঙ্গে ওই বৈঠক শেষে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান তার দলের স্থায়ী কমিটির আরও দুই সদস্যের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট যেন সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। যদি কেউ সেটা করতে চায় সেটাকে আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করব।’

Manual4 Ad Code

 

Manual4 Ad Code

দ্বিতীয়ত, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা মনে করছেন, রাষ্ট্রপতির থাকা না-থাকার বিষয়টি এখন আর সাংবিধানিক পর্যায়ে নেই। এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজনৈতিকভাবেই নিতে হবে। অর্থাৎ রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতেই এমন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এই সমঝোতা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য সময়ের প্রয়োজন। হতে পারে অল্প সময়ের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারে। অথবা তা বিলম্বিতও হতে পারে।

 

গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর এ প্রসঙ্গে বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের প্রশ্নে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায় সরকার।’

 

তৃতীয়ত, একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকদের এটি উপলব্ধি করাতে পেরেছেন যে, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে তার ওই কথপোকথন ছিল ‘নিছকই অনানুষ্ঠানিক’ বিষয়, আর তার কথাও ‘ঠিকঠাক’ প্রকাশিত হয়নি এবং তার মন্তব্য ‘অন্যভাবে’ এসেছে।

 

চতুর্থত, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণের দাবি নিয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়টিও আলোচনায় চলে আসে যে, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন। গত কয়েক দিনে মো. সাহাবুদ্দিনকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে নতুন মুখ খুঁজতে সরকারের তরফ থেকে নানামুখী তৎপরতাও চলে। দুজন উপদেষ্টা গত মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করায় রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন নিয়ে জল্পনাকল্পনা জোরালো হয়ে ওঠে। অনেকে ধারণা করতে থাকেন, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ হতে চলেছেন বঙ্গভবনের আগামী বাসিন্দা। কিন্তু পরে জানা যায়, বিচার অঙ্গনের শীর্ষ পদে মাত্র কয়েক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে যাওয়ার কোনো আগ্রহ প্রধান বিচারপতির নেই। কোনো কোনো সূত্র মতে, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দুই উপদেষ্টার আলোচনায় ওই প্রসঙ্গই আলোচিত হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে গ্রহণযোগ্য বিকল্প খুঁজে পাওয়ার জন্যই সরকার আপাতত সময় নিচ্ছেন বলে অনেক পর্যবেক্ষকের ধারণা।

Manual4 Ad Code

 

পঞ্চমত, গত মঙ্গলবার বঙ্গভবনের বাইরে যারা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং বিক্ষোভ করছিলেন, তাদের মধ্যে এক পর্যায়ে মতভিন্নতা দেখা দেয়। এ সময় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দুজন গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়ক দুই দিন সময় চেয়ে বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু গণঅধিকার পরিষদের একাংশের এক নেতা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকেন। তবে একদিকে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বক্তব্য ও দুই সমন্বয়কের অনুরোধ এবং অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের নতুন অবস্থান ও বক্তব্য বিবেচনায় নিয়ে বঙ্গভবনের বাইরের বিক্ষোভকারীরা শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে সরে আসেন। উল্লেখ্য, গত বুধবার তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির থাকা না-থাকা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়, সাংবিধানিক নয়। আর সেজন্য বঙ্গভবনের বাইরে আন্দোলনেরও প্রয়োজন নেই।’

 

 

অপসারণের পথ খুঁজছে সরকার

 

সরকারের একটি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি এখন সরকারের ভেতরে মূল আলোচনাÑ রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের পদ্ধতি কী হবে। এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।

সংবিধানের ৫২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংবিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত করা যেতে পারে; কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে অভিশংসনের ব্যবস্থা নেই। আবার রাষ্ট্রপতি নিজে থেকে পদত্যাগও করতে পারেন; কিন্তু স্পিকার পদত্যাগ করায় সেই সুযোগও এখন নেই।

Manual4 Ad Code

 

আইনজ্ঞরা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সবকিছু সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে না। তাই নিয়ম বা সংবিধান না মেনে জনআকাঙ্ক্ষার আলোকে বর্তমান সরকার রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দিয়ে নতুন করে নিয়োগ দিতে পারে। অথবা রাষ্ট্রপতি চাইলে নিজেও পদত্যাগ করতে পারেন। কেননা এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে অনেকেই পদত্যাগ করেছেন।

 

এ বিষয়ে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমএ মতিন বলেন, ‘বর্তমান সরকার গণঅভ্যুত্থানের ফসল। সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে আদেশ দিয়ে বৈধতা দিয়েছেন; কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে ইমপিচমেন্ট (অভিশংসন) করার জন্য তো সংসদ নেই। এখন হয় রাষ্ট্রপতি নিজে পদত্যাগপত্র দেবেন অথবা বর্তমান সরকার তাকে আদেশ দিয়ে সরিয়ে দেবে। বর্তমান সরকারই আবার রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবে। এতে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে না।’

 

তিনি বলেন, ‘আগের সরকার যখন পালিয়ে গেল, যারা সফল হলো (বা সরকার গঠন করল) তারা নিজেদের বৈধতা নিজেরাই সৃষ্টি করেছে। তাই সরকার নতুন রাষ্ট্রপতিও নিয়োগ দিতে পারবে। তবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে এসব কাজের বৈধতা দিতে হবে।’ উল্লেখ্য, বাংলাদেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন বা দায়িত্ব নেওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে।

 

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’-এ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ নেই বলে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের মন্তব্য প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগের দাবি ওঠে। গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়। গভীর রাতে ইনকিলাব মঞ্চের ব্যানারে বঙ্গভবনের সামনেও বিক্ষোভ দেখানো হয়।

 

এর আগে গত সোমবার রাষ্ট্রপতির মন্তব্যের ব্যাপারে সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ, তিনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code