প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৯ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

গণভোটে ঐকমত্য

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ
গণভোটে ঐকমত্য

Manual3 Ad Code

 

Manual7 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও ভোট কীভাবে এবং কখন হবে তা নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের দাবি জানায় জামায়াতে ইসলামী। আর বর্তমান সরকারের আমলে এখনই সনদের আইনি ভিত্তি চায় এনসিপি। তবে এতে আপত্তি জানিয়ে জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপিসহ তাদের কয়েকটি সমমনা দল। ফলে দীর্ঘ আলোচনায় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট কীভাবে হবে, সেই প্রশ্নে দলগুলো কাছাকাছি এলেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। এ অবস্থায় সনদ বাস্তবায়নের একাধিক বিকল্প প্রস্তাবসহ মূল সনদ সরকারকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

 

এর আগে রোববার সকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে জুলাই সনদ প্রণয়নের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে কমিশনের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে প্রণীত বাস্তবায়ন পদ্ধতির খসড়া তুলে ধরা হয়। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

 

সংলাপ শেষে অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, আলোচনায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জনগণের সম্মতি অর্জনের জন্য গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। দলীয় অবস্থান থেকে সরে এসে রাজনৈতিক দলগুলো একটি জায়গায় আসার জন্য সচেষ্ট হয়েছে। আগামী ৮ অক্টোবর আবারও বৈঠক হবে। আগামী ১৫ অক্টোবরের আগে এ প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

 

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ১০৬ অনুচ্ছেদের আওতায় বিচার বিভাগের পরামর্শ নেওয়ার দাবি থেকে সরে এসেছে বিএনপি। তারা এখন জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ নামে অধ্যাদেশ জারি এবং তারপরে গণভোটের পক্ষে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের রায় নিতে সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিনে আলাদা ব্যালটে গণভোটের কথা বলেছে বিএনপি। ওই ভোটে যদি জনগণ রায় দেয়, তাহলে সেটা বাস্তবায়ন করতে পরবর্তী সংসদ বাধ্য থাকবে। এ রেফারেন্ডাম অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের সংবিধানে কোনো সংশোধনী আগে আনতে হবে না। তিনি বলেন, সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণে আমরা ফাইনাল স্টেজে আছি। সর্বশেষ যে সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে, সেই বিষয়ে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এখানে গণভোটের যে প্রশ্নটা এসেছে এটা মূলত আমাদের বিগত সভার প্রস্তাবের মধ্যে আমার দেওয়া একটা ইঙ্গিত। অর্থাৎ, আমরা জনগণের কাছে যাই, জুলাই জাতীয় সনদ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে জনগণের সম্মতি আছে কি না? যদিও এখানে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে গঠিত সব রাজনৈতিক দল আলোচনা করেছি। তারপরও আমরাÑএটা একটা প্রশ্ন রয়েছে। তাই জনগণের কাছ থেকে সম্মতি নিতে হবে, আমরা জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর করেছি, অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি, জনগণ তার পক্ষে আছে কি না? তখনই হবে, জনগণের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অভিমত। সার্বভৌম ক্ষমতার একটা রায়।

 

তবে বিএনপির এ প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির জন্য জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে গণভোটের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সাংবাদিকদের বলেন, জনগণ গণভোটে অভ্যস্ত না। তারা মনে করেন, এটা যেন জাতীয় নির্বাচনে কোনো ধরনের সমস্যা না করে, সে জন্য নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরে গণভোট করতে পারেন। তফসিলের আগেও করতে পারেন। গণভোটের পর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে কোনো বাধা থাকবে না। জনগণকে একটা জটিল অবস্থায় ও মহাপরীক্ষায় না ফেলে সহজভাবে আগালে আমরাও বাঁচি, জাতিও বাঁচে। এই জামায়াত বলে, জুলাই সনদের আইন ভিত্তির জন্য গণভোটে গেলে এটা হবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। এটা কখনো চ্যালেঞ্জ করতে গেলে টিকবে না। সংসদ এটাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না। এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের কোনো দূরত্ব নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

 

গণভোটের ফল যদি তাদের বিপক্ষেও যায়, তাহলে তারা এখানে ছাড় দেবেন। তিনি বলেন, সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির জন্য গণভোটের পক্ষে সবাই মত দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে গণভোট আগে না পরে এটা আলোচনার সুযোগ আছে। গণভোট আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। তার জন্য সরকারের নির্বাচন কমিশনকে একটা নির্দেশনা দিতে হবে।

Manual7 Ad Code

 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, এখনই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। কারণ পরবর্তী সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তা বাদ দিতে পারে। তাই জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী এ সরকারকেই বিষয়টি সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোটের পাশাপাশি গণভোটের জন্য আলাদা ব্যালট থাকবে। যেখানে সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে জনগণ মতামত দেবে। এ বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভাষাগত ভিন্নতা বাদ দিলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে দলগুলো একমত। যেখানে সনদ বাস্তবায়নে জনগণ ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেবে।

 

Manual3 Ad Code

এদিকে সংলাপের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্যে না এলে, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কমিশন একাধিক প্রস্তাব দেবে সরকারকে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় নিয়ে দলগুলোর পক্ষ থেকে ছয়টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম, এ ছয়টি প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে যদি একটি জায়গায় আনা যায় ও ৩০টি রাজনৈতিক দল একটি প্রস্তাব দেয়, তাহলে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সানন্দে সেই প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারব। আমরা বলব, সেই একটি প্রস্তাব আছে, এটা বাস্তবায়নের পথ এভাবে আপনারা বিবেচনা করতে পারেন। কিন্তু ১৭ সেপ্টেম্বরের আলোচনায় যেসব বিষয় উঠে এসেছিল, সেগুলোকে আমরা বিশেষজ্ঞদের কাছে অবহিত করেছি। তারই ভিত্তিতে তারা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের আগের অবস্থানকে ব্যাখ্যাও করেছেন।

 

 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় ৮০ শতাংশ ইতিবাচক বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি বলেন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ৮০ শতাংশ ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। কমিশন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে। বাকি ২০ শতাংশ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার ৩টি দলকে গুরুত্ব দেয়। সেই ৩ দলকে এক জায়গায় আনা যাচ্ছে না। একই দিনে জাতীয় নির্বাচন এবং সনদের পক্ষে ভোটগ্রহণ নিয়ে সবাই একমত। জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের অনুমোদন দিতে হবে।

 

রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে আলী রীয়াজ বলেন, প্রধান উপদেষ্টাও কমিশনের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি সবসময় এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াসহ বিশেষত সনদের জায়গায় সনদকে সবার গ্রহণযোগ্য করে সবার স্বাক্ষরিত একটি রাজনৈতিক দলিলে পরিণত করা যায় কি না, সে বিষয়ে আমাদের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আপনাদের (দলগুলোর) পক্ষ থেকে সনদ বাস্তবায়নে যদি আরও সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট প্রস্তাব থাকে তাহলে আমাদের পক্ষে সেটাকে সমন্বিত করে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন উপায় উপস্থাপন করব। সবাই মিলে রাষ্ট্রের সংস্কার কাঠামোগত সংস্কারের জায়গাটা তৈরি করতে হবে।

 

প্রসঙ্গত, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে যথাসম্ভব দ্রুত জুলাই সনদ স্বাক্ষরের কাজ শেষ করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল স্বাক্ষরের জন্য প্রতিনিধির নাম পাঠিয়েছে। কিন্তু আলোচনা আটকে আছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে। বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত না করে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যেতে পারছে না কমিশন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয় এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করে কমিশন।

Manual1 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code