প্রজন্ম ডেস্ক:
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের হিমঘরে ৪৫ বেওয়ারিশ লাশ পড়ে আছে অনেকদিন ধরে। মর্গে ৪০ লাশ রাখার ধারণক্ষমতা থাকলেও বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত লাশ রাখতে হচ্ছে। এসব লাশ ঢামেক হাসপাতালের জন্য এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জায়গা না থাকায় কোনো কোনো ফ্রিজে দুটি লাশ রাখা হয়েছে। এতে এসব লাশ পচে যাচ্ছে। পচে ফুলে যাওয়া এসব লাশ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের গড়িমসিতে বেওয়ারিশ লাশগুলো দাফন হচ্ছে না।
রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় প্রতিদিনই নাম পরিচয়হীন লাশের ঠাঁই হয় ঢামেক হাসপাতাল মর্গের হিমঘরে।
ডিএমপি রমনা অঞ্চলের উপ-কমিশনার মাসুদ আলম জানান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জুরাইন, খিলগাঁও ও আজিমপুরে ও উত্তর সিটি করপোরেশনের রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হতো। এখন দুই সিটি করপোরেশনই লাশ দাফনে গড়িমসি করছে।
ঢামেক হাসপাতালের মর্গের হিমঘরে ৪৫ বেওয়ারিশ লাশ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মর্গের ডোম রামু দাস। তিনি বলেন, মর্গে এখন ৪৫ লাশ রয়েছে। এসব লাশের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। মর্গে ৪০টি লাশ রাখা যায়। জায়গা না থাকায় কোনো কোনো ফ্রিজে একটির জায়গায় ঠাসাঠাসি করে দুটি রাখা হয়েছে। এতে লাশ পচে যাচ্ছে এবং শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
লাশ দাফন করা হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে রামু জানান, দুই সিটি করপোরেশনের গড়িমসির কারণে লাশ দাফন হচ্ছে না। শুনেছি ৬টি লাশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ রবিবার লাশ নেওয়ার কথা। নিলে অনেকটা স্বস্তি পাই। জায়গার অভাবে অতিরিক্ত লাশ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
দুই কোটির বেশি মানুষের এই নগরীতে প্রায়ই মেলে বেওয়ারিশ লাশ। সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের পর বেশির ভাগ অজ্ঞাতনামা এসব লাশ দাফনের জন্য দেওয়া হয় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের হাতে। প্রতিষ্ঠানটি আজিমপুর অথবা জুরাইন কবরস্থানে দাফন করে এসব লাশ।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকা থেকে উদ্ধার করা লাশের ৩ ভাগের এক ভাগ দাফনের অনুমতি দিত ডিএসসিসি। বাকি লাশ দাফন হতো উত্তর সিটির গোরস্তানে। ইদানীং উত্তর সিটির বাইরে থেকে উদ্ধার হওয়া লাশ দাফনের অনুমতি দিচ্ছে না ডিএনসিসি। এই জটিলতায় মর্গ থেকে লাশ নিতে পারছে না সংস্থাটি।
জানতে চাইলে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের ট্রাস্টি এবং সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিম বখশ বলেন, ‘আঞ্জুমান লাশ নিচ্ছে না বা দাফন করছে না এমন নয়। আগের মতোই সুন্দরভাবে কাজটি করার চেষ্টা করছি। ঢামেকে বেওয়ারিশ লাশের বিষয়ে আমাদের অবগত করা হয়েছে। ৬টি লাশ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়েছে। তিনি বলেন, ঢামেক থেকে লাশ নেওয়ার জন্য কিছু অফিশিয়াল প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রক্রিয়া শেষ হলে দাফনের জন্য লাশ নেওয়া হবে।’
প্রশাসনিক জটিলতার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জুরাইন, খিলগাঁও ও আজিমপুর এই তিনটি কবরস্থান আছে, যা বেশ পুরোনো ও জায়গার সংকট আছে। এ জন্য হাসপাতালে যেসব লাশ আসে তার ৩ ভাগের এক ভাগ আমরা দাফন করে থাকি। সম্প্রতি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিটিং করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি ১২ লাশ দাফন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘লাশ দাফন একটি মানবিক বিষয়। তবে অনেক সময় সিটি করপোরেশনকে না জানিয়ে আঞ্জুমান মফিদুল লাশ দাফন করতে কবরস্থানে নিয়ে যায়। এ নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হয়। দক্ষিণে কোনো সমস্যা নেই। উত্তরে লাশ দাফনের জটিলতা রয়েছে। আশা করি দ্রুত বিষয়টির সমাধান হবে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢামেকে সারা দেশ থেকে লাশ আসে। সব লাশের দায়িত্ব আমরা নিতে পারব না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় উদ্ধার হওয়া লাশের ৩ ভাগের এক ভাগ তারা দাফন করে। অন্য কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না। দাফনের জন্য আমাদেরও জায়গার সংকট রয়েছে। এ জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় উদ্ধার হওয়া লাশের বাইরে অন্য লাশ আমরা দাফন করব না।
তিনি জানান, এই জটিলতার কারণে শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে মিটিং হবে। মিটিংয়ে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘লাশ দাফন বন্ধ নেই। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জটিলতা করছে, তারা একটি লাশও দাফন করছে না।’
Sharing is caring!