প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

খালেদা জিয়া ফিরছেন শিগগিরই, সঠিক সময়ের অপেক্ষায় তারেক

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ১০, ২০২৫, ১২:৪৫ অপরাহ্ণ
খালেদা জিয়া ফিরছেন শিগগিরই, সঠিক সময়ের অপেক্ষায় তারেক

Manual5 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

• ৮০ মামলার মধ্যে ৭৯টি থেকে মুক্ত তারেক রহমান, একটি বিচারাধীন
• তারেক রহমানের ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টির অভিযোগ বিএনপির
• নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার আগে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা ‘খুবই কম’

 

লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চলতি মাসেই দেশে ফিরতে পারেন বলে জানিয়েছেন তার দলের নেতারা। চিকিৎসকরাও মনে করছেন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বর্তমান যে অবস্থা তাতে তিনি এই মাসে দেশে ফিরতে পারবেন।

লন্ডন বিএনপির নেতারা বলছেন, গত কয়েক দিনে খালেদা জিয়ার অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিনে আরও কিছু পরীক্ষা করা হবে। এসব পরীক্ষার রিপোর্টগুলো হাতে পাওয়ার পর তার দেশে ফেরার তারিখ চূড়ান্ত হতে পারে। তবে, বর্তমানে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের যে কোনো সময়ে তুলনায় ভালো। মানসিকভাবে তিনি খুব ভালো আছেন।

 

লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এক অনুষ্ঠানে বলেন, আগামী কয়েক দিন খালেদা জিয়ার পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলবে। কিছু পরীক্ষার জন্য তাকে লন্ডন ক্লিনিকেও নেওয়া হতে পারে।

ডা. জাহিদ বলেন, ‘এখন ম্যাডামের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল। তিনি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ভালো আছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের অন্যতম সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘চলতি মাসেই ম্যাডামের দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’

আর খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, এই মাসে ম্যাডামের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। সেই পরীক্ষাগুলোর রিপোর্টের ওপর ওনার দেশে ফেরার বিষয়টি নির্ভর করছে।

এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছিলেন, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার সম্ভাবনা আছে।

উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়া হয়। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাকে দ্য লন্ডন ক্লিনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এখন তিনি এই চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসাধীন আছেন।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, ‘ম্যাডামের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন গত ২ দিন ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। হয়তো আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হতে পারে। আসলে ম্যাডামের দেশে ফেরার বিষয়টি ওনার চিকিৎসকদের অনুমতির ওপর নির্ভর করবে।’

Manual2 Ad Code

 

Manual3 Ad Code

তারেক রহমানের দেশে ফেরা কতদূর?

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এ মাসেই ফেরার সম্ভাবনা থাকলেও তার ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছেন না দলটির নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি আইনি ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছে।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

Manual6 Ad Code

২০০৭ সালে এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। ২০০৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন চলে যান তিনি। সেই থেকে গত ১৮ বছর লন্ডনে আছেন তারেক রহমান।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হলে তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। লন্ডন থেকেই দল পরিচালনা করে আসছেন তিনি।

এরমধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরির্তনের পর তারেক রহমানও আগের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে এসেছেন। বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, তারেক রহমানের নামে থাকা ৮০টির মধ্যে ৭৯টি মামলা থেকে এখন মুক্ত তিনি। আর একটি মামলা বিচারাধীন আছে। ফলে, এখন আইনগতভাবে তারেক রহমানের দেশে ফিরতে তেমন বাধা নেই।

Manual6 Ad Code

 

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও তারেক রহমানের অন্যতম আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমল পর্যন্ত ৮২টি মামলা হয়েছিল তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে অধিকাংশ ছিল মানহানির মামলা। এসব মামলা ফ্যাসিস্ট পলাতক শেখ হাসিনার নির্দেশে দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলাগুলো সিআরপিসি নিয়ম মেনেই খারিজ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় তারেক রহমানের নামে ১৮টি মামলা হয়েছিল। তারমধ্যে অধিকাংশ মামলাই চাঁদাবাজির। আর ১/২টি ছিল রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা। তবে মেরিট না থাকায় সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।

৫টি মামলায় আওয়ামী লীগ সরকার তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছিল উল্লেখ করে কায়সার কামাল বলেন, এরমধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ চারটিতে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। একটি মামলা বিচারাধীন, সেটিও আইন ও সংবিধান মেনে সমাপ্ত করা হবে।

তারেক রহমানের কোনো মামলা রাষ্ট্রীয় অনুকম্পায় ও প্রশাসনিক আদেশে খারিজ করা হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তার এই আইনজীবী।

বিএনপি নেতারা বলছেন, লন্ডন থেকে তারেক রহমান দেশে ফিরতে হলে সেখানকারও কিছু আইনগত বিষয় রয়েছে। যদিও সেগুলোর কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু দেশে নিরাপত্তাসহ সবকিছু বিবেচনা করে তাকে ফিরতে হবে।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়া আগে তার যাত্রা নিয়ে একটা পক্ষ বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। এখন একইভাবে একটি পক্ষ তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন।

দলটির নেতারা আরও বলছেন, আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে তিনি যেকোনো সময় দেশে ফিরে আসবেন।

তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, উনার দেশে ফেরার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। যদিও তার দেশে ফেরা নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে উনাকে দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এই তরুণ নেতা বলেন, তবে এটুকু বলতে পারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরা নিয়ে চূড়ান্ত কোনো তারিখ এখনও ঠিক হয়নি।

বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের তফসিল কিংবা চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা হলেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে আমার ব্যক্তিগত অভিমত।

নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার আগে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভবনা খুবই কম বলেও মনে করেন এই নেতা।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা সম্পর্কে জানতে চাইলে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, ‘ম্যাডাম লন্ডন থাকাকালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। উনার এখানে থাকাকালে এই বিষয়ে কিছু বলাও যাবে না।’

এখন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য বিএনপির এই নেতা বলেন, “ম্যাডাম চলে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে।”

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘আইনগত জটিলতা বাংলাদেশে যেমন আছে, তেমনি দেশের বাইরেও আছে। সবকিছু শেষ হলে শিগগিরই তিনি (তারেক রহমান) দেশে আসবেন। এতদিন হয়ে গেছে, তিনি যেহেতু আসতে পারেননি, এখন আর অল্প সময়ের জন্য অপেক্ষা করি।’

তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশের মানুষ, তার অনুসারী এবং আমাদেরও তার দেশে ফেরা নিয়ে আগ্রহ আছে। তবে, তিনি কবে আসবেন নাকি আসবেন না, এটা নিয়ে আমরা কখনও আলাপ করি না। সুতরাং তিনি (তারেক রহমান) নিজেই বলতে পারবেন, তিনি কবে আসবেন।’

তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে দলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলেও মনে করেন গয়েশ্বর চন্দ্র। তিনি বলেন, বরং তারেক রহমান দেশে থাকলে দলে যে সময় দিতেন, বিদেশে থেকে তার চাইতেও বেশি সময় দেন।

 

বাংলাদেশ ও লন্ডনের সময়ের ব্যবধানের কারণে সময় দিতে গিয়ে তারেক রহমানের কষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা। তার মতে, তারেক রহমানকে তো বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী কথা বলতে হয়। বাংলাদেশের মানুষ যখন ঘুম থেকে ওঠে, তখন লন্ডনে রাত। এরপর নানা দরকারে লন্ডনে রাত থাকলেও বাংলাদেশের সময় সকাল ৭-৮টার দিকে দলের নেতাকর্মীদের ফোন দিয়ে তিনি দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপির বিগত দিনের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘আমরা ১৬-১৭ বছর আন্দোলন করেছি একটা সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের জন্য। এই নির্বাচনটা হবে না এটা আমি বলছি না। তবে, কবে হবে সেই নির্বাচন সেটা কিন্তু এখনও নিশ্চিত নয়। সুতরাং নির্বাচন যখন নিশ্চিত হবে, তার শিডিউল ঘোষণা হবে তখন তো নিশ্চয়ই তিনি (তারেক রহমান) আসবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাডাম খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার আগেও বলা হয়েছিল, এতদিন তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে চেয়েছিল, এখন কেন পাঠাচ্ছে না। আসলে তিনি বিদেশে যাওয়ার জন্য ফিট কি না, দীর্ঘ ভ্রমণ করতে পারবেন কি না সেটা তো চিকিৎসকের অনুমতির ওপর নির্ভর করতে হয়েছিল।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code