প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নতুন আয়নাঘরের সন্ধান

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ০৭:১৯ অপরাহ্ণ
নতুন আয়নাঘরের সন্ধান

Manual4 Ad Code

 

Manual8 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছিল টর্চার সেল। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর রাজধানীতে কয়েকটি ‘আয়নাঘরে’র সন্ধান পাওয়া যায়। এরমধ্যে ভুক্তভোগীদের নিয়ে তিনটি ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। যার নেতৃত্ব দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সম্প্রতি অনুসন্ধানে আরও একটি ‘আয়নাঘরে’র সন্ধান পেয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। যার অবস্থান ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে একটি সামরিক ঘাঁটিতে। খুব সম্প্রতি সেখানে তড়িঘড়ি করে একটি গাঁথা দেয়াল হঠাৎ ভেঙে ফেলা হয়।

ফলে তদন্তকারীরা একাধিক গোপন জেলখানা আবিষ্কার করেন। ইট দিয়ে সদ্য বন্ধ করে রাখা একটি দরজার পেছনে লুকিয়ে ছিল ঘন অন্ধকার, জানালাহীন ছোট ছোট অনেকগেলো কক্ষ।

Manual4 Ad Code

এই গোপন বন্দিশালার খোঁজ মেলে মীর আহমদ বিন কাসেম ও অন্যান্য ভুক্তভোগীদের স্মৃতির ভিত্তিতে। সরকারের সমালোচক মীর আহমদ বিন কাসেম আট বছর ধরে সেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। বন্দিত্বের সময় তিনি প্রায়ই চোখ বাঁধা অবস্থায় ছিলেন, কিন্তু নিয়মিত বিমানের অবতরণের শব্দ শুনে বুঝতে পারেন এটি বিমানবন্দরের কাছাকাছি।

তদন্তকারীরা অনুসরণ করে পৌঁছান একটি সামরিক ঘাঁটিতে, যেখানে মূল ভবনের পেছনে মেলে একটি ছোট, পাকা, শক্ত প্রহরায় ঘেরা ভবন। সেখানেই ছিল এই গোপন জেল, যা কার্যত ছিল ‘প্রকাশ্যেই লুকানো’।

গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুতের পর তদন্তকারীরা শতাধিক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেন। অনেকেই এখনও নিখোঁজ। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের অবৈধভাবে হত্যা করা হয়েছে।

তদন্তে জানা যায়, এসব গোপন জেল পরিচালনা করছিলেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা, যারা সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাজ করতেন। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, সব গুমের ঘটনাই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে হয়েছে।’

তবে শেখ হাসিনার দল দাবি করেছে, এসব কর্মকাণ্ড তাদের অজান্তে ঘটেছে এবং সেনাবাহিনী এককভাবে এসব পরিচালনা করেছে; যদিও সেনাবাহিনী এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

জীবন্ত কবরের মতো জেলখানা

Manual6 Ad Code

মীর আহমেদ বিন কাসেম বিবিসির দলকে নিয়ে যান সেই কারাগারে, যেখানে তিনি আট বছর বন্দি ছিলেন। ভারী দরজা ঠেলে, নিচু হয়ে প্রবেশ করেন তার কক্ষে। এটি ছিল যেন জীবন্ত কবর—বাইরের দুনিয়া থেকে একদম বিচ্ছিন্ন, বলেন তিনি।

বদ্ধ ও আলোহীন এ কক্ষে দিনের সঙ্গে রাতের কোনো পার্থক্য ছিল না। একজন গড়পড়তা মানুষ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না—এতটাই ছোট কক্ষটি। দুর্গন্ধে ভরা ঘরের দেয়াল ভাঙা, মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ইট-পাথরের টুকরো, যেন প্রমাণ ধ্বংস করার শেষ চেষ্টা।

প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫০০ থেকে ৭০০ এমন সেল খুঁজে পেয়েছি, যা প্রমাণ করে এটি ছিল একটি পরিকল্পিত, পদ্ধতিগত বন্দিশালা নেটওয়ার্ক।

মাটিতে ছড়িয়ে থাকা ভাঙা নীল টাইলস দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, এটি প্রয়াত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আরমানের সেল। অন্য কক্ষগুলোর চেয়ে একটু বড়—প্রায় ১০ বাই ১৪ ফুট, পাশে ছিল বসে ব্যবহারযোগ্য একটি টয়লেট।

মৃত্যুর চেয়েও খারাপ অভিজ্ঞতা

গ্রীষ্মকালে ছিল অসহনীয় গরম। আরমান দরজার নিচে মুখ রেখে হাওয়া নেওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি বলেন, এটি ছিল মৃত্যুর চেয়েও খারাপ। আবার সেখানে ফিরে যাওয়া তার জন্য কষ্টকর হলেও আরমান চান, বিশ্ববাসী যেন এ নির্যাতনের বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করেন।

আরমান বলেন, ‘যারা এ ফ্যাসিবাদী শাসনকে সহায়তা করেছে, তারা এখনো ক্ষমতায় আছে। আমরা চাই আমাদের গল্প বিশ্ব জানুক—যারা ফেরেনি তাদের জন্য ন্যায়বিচার হোক, আর যারা এখনো বেঁচে আছে তারা যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।’

মীর আহমেদ বিন কাসেম আরমান জানান, প্রথম ১৬ দিন ছাড়া পুরো সময় তাকে রাখা হয়েছিল র‌্যাবের ঘাঁটিতে। প্রথম স্থান ছিল ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজত। তিনি মনে করেন, পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই তাকে গুম করা হয়। ২০১৬ সালে তিনি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা ও তার বাবার পক্ষের আইনজীবী—যিনি পরে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code