প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১০ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বাংলাদেশি কর্মীদের অভিবাসন বাড়ছে

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৩, ২০২৪, ০২:১৩ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশি কর্মীদের অভিবাসন বাড়ছে

Manual1 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

বিদেশে দক্ষ বাংলাদেশি কর্মীদের অভিবাসনের সংখ্যা বাড়ছে। এই বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অভিবাসনে গতিশীলতা লক্ষ করা গেছে, যেখানে ৫ লাখেরও বেশি কর্মী বিদেশে কাজের জন্য গেছেন। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার অভিবাসী কর্মী সৌদি আরবকে তাদের পছন্দের গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সরকারের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত একটি অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

 

একই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৩ হাজার অ্যাকাউন্টেন্ট বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হয়েছেন। বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের শীর্ষ ১০টি কাজের তালিকায় উঠে এসেছে এই পেশা।

Manual3 Ad Code

 

প্রসঙ্গত, বিদেশ যেতে হলে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র নিতে হয়। বিগত সরকারের আমলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এই অ্যাপের মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীদের নিবন্ধন এবং অভিবাসন খাত ডিজিটালাইজেশনের কাজ শুরু করে।

 

প্রতিষ্ঠানটির অর্ধবার্ষিকী প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরব বর্তমানে বেশিরভাগ অভিবাসী জনসংখ্যার প্রথম পছন্দে পরিণত হয়েছে। সৌদি নীতিনির্ধারকদের স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক মনোযোগ দেওয়ার কারণে সেখানে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের কাজের সুযোগ বেড়েছে, যার ফলে সৌদি আরবকে একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্যে পরিণত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

মালয়েশিয়া প্রায় ৯৩ হাজার কর্মরত অভিবাসী নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কাতার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সেখানে এই সময়ে ৩৯ হাজার ৫১৭ জন অভিবাসী কর্মী কাজের জন্য গেছেন।

 

‘আমি প্রবাসী’র প্রতিবেদনে এসব অভিবাসী কর্মীদের কাজের ধরন সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ অভিবাসী কর্মী ‘সাধারণ’ শ্রেণিতে পড়েন, সংখ্যায় যা ১ লাখ ৫০ হাজারের মতো। সাধারণ শ্রেণিতে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের কাজ অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নির্মাণকাজ, যেখানে ৬৩ হাজার ৪৬৯ জন অভিবাসী কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ৩৩ হাজার ৭৪৮ জন কর্মী নিয়ে কারখানার কাজ তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

Manual5 Ad Code

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট অভিবাসী শ্রমিকের ১০ দশমিক ৪ শতাংশ দক্ষ, যার মধ্যে ৩ দশমিক ২ শতাংশ দক্ষ পেশাজীবী, যেমন– সফটওয়্যার ডেভেলপার। বাকি ৭ শতাংশ অদক্ষ অভিবাসী।

 

Manual4 Ad Code

কর্তৃপক্ষ মনে করে, অদক্ষ থেকে দক্ষ অভিবাসনের এই পরিবর্তন বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। ঐতিহাসিকভাবে অদক্ষ শ্রম রফতানির জন্য পরিচিত এই দেশের শ্রমশক্তি এখন বেশি দক্ষ ও বহুমুখী হয়ে উঠছে। শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সঠিক প্রশিক্ষণের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ভবিষ্যতের জন্য শুভ লক্ষণ, যা নীতিনির্ধারক, গবেষক ও শ্রমবাজারে আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্যে আশার সঞ্চার করছে।

 

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, যদিও প্রতি বছর অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে, তবু এই শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ কম রয়েছে। এই ছয় মাসের সময়কালে মোট শ্রমশক্তির মাত্র ৬ শতাংশ নারী। এর মধ্যে বেশিরভাগই গৃহকর্মী, যার সংখ্যা ১৩ হাজার ১৯০।

জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের অভিবাসন প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগ ১ লাখ ২১ হাজার ৫২০ অভিবাসী নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। ৯১ হাজার ৫৩০ জন অভিবাসী নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে চট্টগ্রাম। খুলনা ও রাজশাহী থেকে যথাক্রমে ৩৭ হাজার ২৯০ এবং ৩৫ হাজার ৬৬০ অভিবাসী কর্মী ও ময়মনসিংহ থেকে ২৬ হাজার ১০ জন কর্মী বিদেশ গিয়েছেন। সিলেট থেকে অভিবাসী হয়েছেন ১৭ হাজার ৩৮০ জন। সবচেয়ে কম অভিবাসী হয়েছে রংপুর বিভাগ থেকে, যা সংখ্যায় ১৪ হাজার ৪১০ জন।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়কালে ১ লাখ ৮৩ হাজার ২৭৪টি ব্যক্তিগত ভিসা ইস্যু করা হয়। গ্রুপ ভিসার সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ২২৩ এবং ২৪ হাজার ৬৩৮টি ভিসা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়। পূর্ববর্তী মাসগুলোর তুলনায় স্বয়ংক্রিয় বা ওয়ান-স্টপ ভিসার সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সে সময় এ সংখ্যা মোট ভিসার ১ শতাংশেরও কম ছিল। এই উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের সাফল্যের উদাহরণ, যা অভিবাসীদের আরও ক্ষমতায়িত করছে। একইসঙ্গে এটি ভিসা প্রসেসিং সহজ করছে এবং মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা কমানোর মাধ্যমে প্রতারণা ও হয়রানি হ্রাসেও অবদান রাখছে।

 

Manual2 Ad Code

প্রতিষ্ঠানটির মতে, এই বছরের প্রথমার্ধের অভিবাসন পরিস্থিতি ইতিবাচক ছিল। ইতালিতে ২০ হাজার নতুন ভিসা অনুমোদনের খবর এসেছে, যা ইউরোপীয় বাজার খোলার পথে একটি সম্ভাবনাময় অগ্রগতি। আশা করা যাচ্ছে, এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে শ্রমবাজারে আরও স্থিতিশীলতা আসবে। তবু স্বচ্ছ, খরচ-সাশ্রয়ী ও দ্রুতগতির অভিবাসন এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code