প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মৃত হারিছ চৌধুরীকে ধরতে রেড নোটিশ ঝুলছে ইন্টারপোলে!

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৬:১৮ পূর্বাহ্ণ
মৃত হারিছ চৌধুরীকে ধরতে রেড নোটিশ ঝুলছে ইন্টারপোলে!

Manual7 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব আবুল হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন, গত তিন বছর ধরেই তা বলে আসছেন পরিবারের সদস্যরা। চলতি মাসের শুরুর দিকে ডিএনএ পরীক্ষার পর পুলিশও নিশ্চিত হয়েছে, মারা গেছেন তিনি। এরপরও মৃত হারিছ চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে ঝুলছে রেড নোটিশ!

Manual7 Ad Code

আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ২০২১ সালে বিএনপির সাবেক এই নেতার মৃত্যুর বিষয়টি জানার পরও তা নিশ্চিত হতে তৎকালীন পুলিশ প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এতে ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে তাকে ধরিয়ে দিতে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে জারি করা রেড নোটিশ জারি থেকে যায়। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে সাভারের বিরুলিয়া এলাকার একটি মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ডিএনএ পরীক্ষা করে পুলিশ।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মতিউর রহমান শেখ গতকাল রোববার বলেন, ‘হারিছ চৌধুরীর লাশ শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। লাশটি যে হারিছ চৌধুরীর, পরীক্ষায় তা নিশ্চিত হওয়া গেছে।’ কিন্তু তাকে ধরিয়ে দিতে এখনো ইন্টারপোলের রেড নোটিশে তার নাম ও ছবি ঝুলছে—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিআইডি প্রধান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলা হবে।’

সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী বলেন, আদালতের নির্দেশে গত ১৬ অক্টোবর বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর জালালাবাদ এলাকার জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থান থেকে হারিছ চৌধুরীর মরদেহের অংশ উত্তোলন ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ৫ নভেম্বর পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। পরের দিনই তা আদালতে জমা দেন তিনি।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, হারিছ চৌধুরীকে ওই কবরস্থানে মাহমুদুর রহমান নামে ২০২১ সালে দাফন করা হয়েছিল।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীকে আসামি করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ওই মামলার রায়ে তার যাবজ্জীবন শাস্তির রায় দেন আদালত। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়। ওই বছরই পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারপোলে তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করা হয়।

Manual1 Ad Code

অবশ্য হারিছ চৌধুরীর রেড নোটিশ প্রত্যাহারের জন্য গতকাল রোববার পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি থেকে ইন্টারপোলে কোনো আবেদন করা হয়নি বলে জানা গেছে।

গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে হারিছ চৌধুরীর নামে রেড নোটিশ ঝুলতে দেখা গেছে। ইন্টারপোল ওয়েবসাইটের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে রেড নোটিশ কর্নারে ঢুকে দেখা গেছে, বিভিন্ন অপরাধে বাংলাদেশের পলাতক রেড নোটিশধারী ৬৪ জনের নাম ঝুলছে। তাদের মৃত হারিছ চৌধুরীর নাম ও ছবি ১৮ নম্বরে রয়েছে। সেখানে তার নাম চৌধুরী আবুল হারিছ লেখা রয়েছে। এতে তার জন্মতারিখ থেকে শুরু করে জন্মস্থান, জাতীয়তা, উচ্চতা, ওজন, চুল, চোখের রংসহ দৈহিক বিবরণ রয়েছে। রেড নোটিশে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ রয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, কোনো পলাতক আসামিকে ধরিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ইন্টারপোলে চিঠি পাঠায়। সেটি যাচাই করে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থাটি নিজেদের ওয়েবসাইটের রেড নোটিশ জারি করে। কিন্তু নোটিশ জারি করা কোনো আসামি মারা গেলে বা গ্রেপ্তার হলে বিষয়টি ইন্টারপোলকে অবহিত করে সেই নোটিশ প্রত্যাহারের আবেদন করতে হয় এনসিবিকে।

চারদলীয় জোট সরকারের সময় হারিছ চৌধুরী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময় তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিবেরও দায়িত্বও পালন করেন। তবে ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি তাকে।

তবে ২০২১ সালের শেষের দিকে হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন বলে তার স্বজনের বরাতে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তাকে ঢাকার অদূরে একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে বলা হয়। যদিও ওই সময় পুলিশ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়নি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত অক্টোবরে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর বাবার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য আদালতে আবেদন করেন।

Manual3 Ad Code

গত ১৬ অক্টোবর কবর থেকে লাশ উত্তোলনের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী। তখন তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এক-এগারোর পর তার বাবা আত্মগোপনে চলে যান। তিনি দেশ ছেড়ে যাননি। তিনি দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না, আবার নিজের পরিচয় নিয়ে দেশে থাকার মতো পরিবেশও ছিল না, এ জন্য তিনি বাধ্য হয়ে পরিচয় পরিবর্তন করেন। মাহমুদুর রহমান নামে তার একটি জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল। তার পাসপোর্টে ওমরাহ করার জন্য ভিসা লাগানো ছিল, তবু তিনি দেশ ছাড়েননি।

Manual7 Ad Code

সামিরা তানজিন জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি কখনো তার পরিচয় গোপন করেননি। যখনই কেউ জিজ্ঞাসা করেছে, বলেছেন সাভারে দাফন করা মাহমুদুর রহমান নামে ব্যক্তি বাবা হারিছ চৌধুরী এবং তিনি বাংলাদেশেই মারা গেছেন।

বাবা মারা যাওয়ার পর দাদাবাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জানিয়ে বলেন, ‘কিন্তু আমাকে ওই সময়ের স্বৈরাচারী সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বাধা দেওয়ায় বাধ্য হয়ে সাভারে কবর দেওয়া হয়। বাবাকে দাফন করার পর আমি নিজে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বাবার মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছিলাম। বাবার মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল থাকতে পারে না।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code