প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

‘গণহারে বদলি’ কৌশলে থেমেছে প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ০১:০৮ অপরাহ্ণ
‘গণহারে বদলি’ কৌশলে থেমেছে প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন

Manual5 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

তিন দফা দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনে বার্ষিক পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটে। অনেক বিদ্যালয়ে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শুরু হয়নি। দাবি পূরণে আশ্বাস, চাকরিবিধি ও ফৌজদারি আইনে শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েও শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরানো যায়নি। বাধ্য হয়ে গণহারে বদলি ও শোকজের পথে হাঁটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত ১, ২, ৩ ডিসেম্বর দেশের অনেক জেলার সব বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের গণহারে শোকজ করা হয়। এরপর ৪ ডিসেম্বর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া একজন প্রধান শিক্ষক, চারজন সহকারী শিক্ষকসহ মোট ৪৩ জন শিক্ষককে রীতি ভেঙে ভিন্ন জেলায় বদলি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এরপরই আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসে।

 

Manual8 Ad Code

এ দফায় ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’র ডাকে মূলত শিক্ষকরা আন্দোলন করেছেন। তাদের সঙ্গে একাত্ম ছিল ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’। দুটি সংগঠনের নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, গণবদলির শিকার শিক্ষকদের বদলির আদেশ প্রত্যাহারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করবেন।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি, তারা বদলি নিয়ে উদ্বিগ্ন বা ভীত নয়। তবে সাধারণ অনেক শিক্ষক, যারা বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন; তাদের অনেককে বিনা কারণে প্রশাসনিক বদলি করা হয়েছে। তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ঢাকার ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন বদলি করা হয়েছে।

 

 

শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেসব সাধারণ শিক্ষককে বিনা কারণে ভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়েছে; যাদেরকে গণহারে শোকজ করা হয়েছে; তা প্রত্যাহারের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি বরাবর আবেদন করবো। আশা করি, অধিদপ্তর শিক্ষকদের হয়রানির বিষয়টি বিবেচনা করে বদলি ও শোকজ প্রত্যাহার করবে।’

 

বার্ষিক পরীক্ষার কাজে ফিরছেন শিক্ষকরা

গণবদলি ও শোকজের মুখে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করে অবশেষে বার্ষিক পরীক্ষায় ফিরছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। রোববার (৭ ডিসেম্বর) দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। এ পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেবেন আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষকরা।

Manual4 Ad Code

এ প্রসঙ্গে শিক্ষক নেতা শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্বার্থ, অভিভাবকদের দাবির মুখে আমরা পরীক্ষার কাজে ফিরছি। পাশাপাশি গণহারে যেভাবে শিক্ষকদের শোকজ, বদলি করে হয়রানি করা হচ্ছে; তা বিবেচনায় নিয়ে আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে আমরা আবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবো।’

গত ২৭ নভেম্বর থেকে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের ডাকে লাগাতর কর্মবিরতি শুরু করেন শিক্ষকরা। এরপর ১ ডিসেম্বর থেকে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন এবং ২ ডিসেম্বর থেকে কমপ্লিট শাটডাউন বা বিদ্যালয়ে তালা ঝুলানোর কর্মসূচি করেন তারা। তবে ৪ ডিসেম্বর একযোগে ৪২ জন শিক্ষককে ভিন্ন জেলা ‘প্রশাসনিক বদলি’ করার পর কর্মসূচি স্থগিত করে পরীক্ষায় ফেরার ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।

Manual3 Ad Code

 

এদিকে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিছু বিদ্যালয়ে দুই থেকে তিনটি বিষয়ের বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। কোথাও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায়, কোথাও অভিভাবকদের সহযোগিতায় পরীক্ষা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষকরা। তবে সাড়ে ৬৫ হাজার বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪২ হাজার বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকরাই প্রধান শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত বা চলতি দায়িত্বে থাকায় অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়নি।

 

কিছু বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়েছে, কিছু বিদ্যালয়ে হয়নি। ফলে যেসব বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়েছে, তার প্রশ্নপত্র অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে চলে গেছে। এতে পরীক্ষার প্রশ্নে মিল থাকবে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকসহ অনেকে।

বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও কয়েকটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্দেশনা অনুযায়ী-স্ব স্ব বিদ্যালয় পৃথক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে। সে ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে কোথাও যদি উপজেলাভিত্তিক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মডারেট করা হয়, সে ক্ষেত্রে প্রশ্নে মিল থাকতে পারে। এমন উপজেলাগুলোতে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা না নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রায় এক কোটি। আর তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সহকারী শিক্ষক।

Manual7 Ad Code

প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বর্তমানে দশম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন। তবে সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তারা এ নিয়ে অসন্তুষ্ট। গ্রেড উন্নীতকরণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন তারা।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code