প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

প্রার্থীদের অস্ত্রে ঝুঁকির শঙ্কা

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ
প্রার্থীদের অস্ত্রে ঝুঁকির শঙ্কা

Manual3 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিকভাবে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তি ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স এবং গানম্যান নিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে নির্বাচনে প্রার্থীদের অস্ত্রের লাইসেন্স দিতে নীতিমালাও জারি করা হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত দেশ জুড়ে আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন নাজুক, ঠিক সে সময় নির্বাচনের মাঠে অস্ত্রের অনুমোদন ভোটের পরিবেশকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সিদ্ধান্তটি একভাবে নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঠে ইতিমধ্যেই সংঘাত-সহিংসতা শুরু হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে বৈধ অস্ত্র জমা না নেওয়া বা নতুন করে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত, তাতে নির্বাচনী সহিংসতার ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।

 

লাইসেন্স দেওয়া বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন ইসি সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যে নির্দেশনা বা অস্ত্রের ব্যবস্থার কথা বলেছেন, তা তিনি হয়তো নিরাপত্তার গুরুত্ব বিবেচনা করেই বলেছেন। তবে এ বিষয়ে আগে থেকে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। তাই বিস্তারিত ব্যাখ্যা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাই ভালো দিতে পারবেন।

 

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। প্রশাসনিক অস্থিরতা ও পুলিশ ব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া গত দেড় বছরে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে গত ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। তফসিল ঘোষণার এক দিন পর ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়া ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ হন।

এ ঘটনার পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার রাজনৈতিকভাবে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তি এবং নির্বাচনের প্রার্থীদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার এবং রিটেইনার (গানম্যান) নিয়োগের সুযোগ দিতে নীতিমালা জারি করেছে সরকার।

Manual4 Ad Code

এই বিশেষ নীতিমালার আওতায় দুই ধরনের ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স এবং গানম্যান নিয়োগের আবেদন করতে পারবেন। প্রথমত. সরকার-স্বীকৃত বা অনুমোদিত ‘রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’। দ্বিতীয়ত. সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল এবং গৃহীত হয়ে থাকলে।

এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তারা যদি আগ্নেয়াস্ত্র চান, তাদের লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া যাদের আগ্নেয়াস্ত্র সরকারের কাছে জমা থাকে, সেগুলো ফেরত দেওয়া হবে।

অস্ত্রের ব্যবহার নির্বাচনী আচরণবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, আপাতত এই নির্দেশনার সঙ্গে নির্বাচনী আচরণবিধির কোনো সংঘাত দেখা যাচ্ছে না। তবে পরিস্থিতির প্রয়োজনে কমিশন যেকোনো সময় কঠোর অবস্থান নিতে পারে। সময়ের প্রয়োজনে যদি আচরণবিধিতে কোনো সংশোধন, সংযোজন বা পরিমার্জনের প্রয়োজন হয়, কমিশন তা অবশ্যই করবে।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে ভোটার বা অন্য প্রার্থীদের মধ্যে কোনো ভীতি তৈরি হবে কি না এমন সংশয়ের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবারই কাম্য। নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে কেন ভীতিসঞ্চার হবে, সেটি একটি প্রশ্ন। আমরা চাইব ভোটার ও প্রার্থী সবার নিরাপত্তাই যেন প্রাধান্য পায়।

Manual3 Ad Code

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার
বলেন, নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত কাক্সিক্ষত না। অস্ত্র বৈধভাবে ব্যবহৃত হতে পারে ঠিকই, কিন্তু এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা অস্ত্র ব্যবহারেই সক্ষম নন। অনেকের ক্ষেত্রে সেই অস্ত্র শেষ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হতে পারে। ফলে এই সিদ্ধান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বদলে ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

Manual7 Ad Code

তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন। অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাঠামো শক্তিশালী করাই সহিংসতা কমানোর কার্যকরী উপায় হতে পারে।

সহিংসতার উৎস সম্পর্কে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমানে দেশে সহিংসতার দুটি প্রধান উৎস রয়েছে। একটি হলো স্বৈরাচারী ও পলাতক শক্তি, যারা নির্বাচনকে অস্থিতিশীল করতে পারে। অন্যটি হলো রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। বিশেষ করে, মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার এবং প্রার্থী ঘোষণার পর দলীয় মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রবল থাকে। পাশাপাশি আন্তঃদলীয় বিরোধও সহিংসতার বড় কারণ হয়ে ওঠে।

Manual3 Ad Code

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরাসরি সম্পৃক্ত এমন একটি বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা জরুরি ছিল। কারণ নির্বাচন পরিচালনার সাংবিধানিক দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তাই কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল বলে তিনি মনে করেন।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেই নেওয়া উচিত। বৈধ অস্ত্র কারও আত্মরক্ষার জন্য থাকতেই পারে। আগেও বিভিন্ন সময় প্রার্থীদের বৈধ অস্ত্র বহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে সারা দেশে ৯৬টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১২ জন নিহত এবং অন্তত ৮৭৪ জন আহত হয়েছে। এটি গত চার মাসের মধ্যে রাজনৈতিক সহিংসতায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক বিরোধ, সমাবেশকেন্দ্রিক সহিংসতা, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থিতা নিয়ে অন্তর্কোন্দল, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে এসব সহিংসতা ঘটেছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code