প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আড়াই শতাধিক মামলার আসামি আনোয়ারুজ্জামান!

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২১, ২০২৪, ০৫:১২ পূর্বাহ্ণ
আড়াই শতাধিক মামলার আসামি আনোয়ারুজ্জামান!

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোরুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে আড়াই শতাধিক মামলা হয়েছে বলে তিনি নিজে জানিয়েছেন। সম্প্রতি একটি পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।

Manual3 Ad Code

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর পুরো সিলেট বিভাগেও এত পরিমাণ মামলা হয়নি।

মামলার বিষয় ছাড়াও আনোয়ারুজ্জামান ৫ আগস্টের পর কয়েকদিন কোথায় আত্মগোপনে ছিলেন সেই তথ্যও প্রদান করেন। তবে কীভাবে বা কোন পথে তিনি সিলেট ছেড়েছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্য দেননি।

ছাত্র-জনতার মরণপণ আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এদিন ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সিলেটসহ সারা দেশে এরপর দলটির অনেক নেতাকর্মীই চলে যান আত্মগোপনে। এখন পর্যন্ত অনেকেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন, আর কেউ বা গ্রেপ্তার হয়ে আছেন জেলে। পালিয়ে যেতে সফল নেতাদের মধ্যে একজন সিসিকের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বর্তমানে লন্ডনে আছেন।

সাক্ষাৎকারে আনোয়ারুজ্জামান বলেছেন, ‘আমি ৫ই আগস্ট থেকে ৮ই আগস্ট পর্যন্ত সিলেট ক্যান্টনমেন্টে ছিলাম। সেখানে থেকে ১৪ই আগস্ট বের হয়েছি।’

Manual2 Ad Code

ক্যান্টনমেন্টে নিজ থেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, তারা আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছিলো। প্রত্যেকটা মানুষের কাছে তার ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার প্রথম। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে, আপনি আশা করেন না যে, রাস্তায় কেউ আমাকে হত্যা করবে। আমি নির্বাচিত মেয়র সিলেটের। আমি যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঙ্গে কথা বলেছি তারা আমাকে ওয়েলকাম করেছে। তারা বলেছে, আপনি যেহেতু সিলেট সিটির নির্বাচিত মেয়র, সেহেতু আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। তারা আমাকে সসম্মানে সেখানে রেখেছেন।’

আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘আমি ১৭ই আগস্ট লন্ডনে এসেছি। দীর্ঘদিন লন্ডনে ছিলাম। আমার পরিবার এখানে ছিলো। আমি সিলেটের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর প্রায় ৮ মাস দায়িত্ব পালন করেছি। তখন গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় ছিল জীবন রক্ষা। এজন্য প্রথম যে জিনিসটা সেটা হলো, নিরাপদ স্থানে যাতে আমরা নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারি। আমাদের কলিগ বা সহযোদ্ধাদের অর্থাৎ ছোট কর্মী থেকে বড় নেতা পর্যন্ত সবাইকে এই জিনিসটা বলেছিলাম যে, সেইফলি সবাই যেন সেফ জায়গায় চলে যায়।’

Manual4 Ad Code

শোনা গেছে, আপনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ফ্লাইটে আসেননি (লন্ডনে)। তাহলে আপনি কোন রাস্তায় এসেছেন-এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার পাসপোর্ট দিয়েই আমি লন্ডনে এসেছি।’

ভারত হয়ে লন্ডনে গিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই খবরটা সঠিক না। রাইট চ্যানেল দিয়ে, বৃটিশ পাসপোর্ট দিয়েই আমি লন্ডনে এসেছি।’

চ্যানেলটা কী এমন প্রশ্নে সাবেক মেয়র বলেন, ‘যেভাবে মানুষ সবসময় আসে, এটাই।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতা করেছে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে সাবেক মেয়র বলেন, ‘তখন পর্যন্ত আমার নামে কোনো মামলা ছিলো না। আসার পর মিথ্যা মামলা দিয়েছে। প্রায় ২৬০টার উপর মামলা দিয়েছে এখন পর্যন্ত। যেহেতু আমার নামে কোনো মামলা ছিলো না, এজন্য তখন আসতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি।’

এদিকে, আড়াই শতাধিক মামলা মাথায় নিয়েও ফেসবুকে সরব রয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান। দেশ ছাড়ার ২০ দিনের মাথায় তিনি ‘অজ্ঞাত স্থান’ থেকে প্রথম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। এরপর থেকে ফেসবুকে পুরোপুরি সরব রয়েছে তিনি। ফেসবুকের প্রতিটি পোস্টেই তিনি দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও তার উপদেষ্টা পরিষদের সমালোচনায় মেতে উঠছেন আনোয়ারুজ্জামান। সর্বশেষ আজ বুধবার (২০ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকালে ফেসবুকে ইউনুস সরকারের সমালোচনা করে আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। তার প্রতিটি পোস্ট বা ভিডিও’র কমেন্ট বক্সে নেটিজেনদের থাকে মিশ্রপ্রতিক্রিয়ামূলক মন্তব্য।

অপরদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন আনোয়ারুজআমান চৌধুরী। গত ৮ নভেম্বর নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে এই অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে ওই সময় ফেসবুকে দেওয়া ভিডিও-তে তিনি বলেন- ‘আমি একজন ভিকটিম। আমার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি একজন নির্বাচিত মেয়র, কিন্তু আমাকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবং আমিসহ আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপর তারা আক্রমণ করেছে, নির্যাতন করেছে। এ জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মামলা করলাম।’

তিনি আরও বলেন- আমার মনে হয় আমিই প্রথম (অভিযোগ) শুরু করলাম। প্রায় ১৫ হাজার ভিক্টিম আছেন যারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করবেন।

ড. ইউনূস ছাড়াও ৬২ অভিযুক্তদের মাঝে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নাম রয়েছে।

এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, আব্দুল হান্নান, হাসিব আল ইসলাম ও আবু বকর মজুমদারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই অভিযোগে প্রায় ৮০০ পৃষ্ঠার নথি-পত্র যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, হাসিনা সরকার পতনের আগে সিলেট অগ্নিগর্ভ ছিলো ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। আন্দোলনের বিভিন্ন দিন- বিশেষ করে ৪ আগস্ট সিলেট মহানগরের বন্দরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার তুমুল সংঘর্ষ হয়। অভিযোগ রয়েছে- সংঘর্ষকালে পুলিশের সঙ্গে মাঠে থাকা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা আনোয়ারুজ্জামানের অনুসারী ছিলেন।

অবস্থা পরিবর্তনের পর সিলেটের আদালত ও বিভিন্ন থানায় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করা হয়। এখনও হচ্ছে। এসব মামলার প্রধান ও অন্যতম আসামি আনোয়ারুজ্জামান।

গত বছরের ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পঞ্চম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান। ওই বছরের ৭ নভেম্বর নগরভবনে মেয়রের বসে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

তবে হাসিনা সরকার পতনের পর গত ১৯ আগস্ট সিলেটসহ দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করা হয়। তাদের অপসারণের পর সব সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশ মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের বদলে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার সিসিক প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নব্বইয়ের দশকে লন্ডনে পাড়ি জমিয়ে আনোয়ারুজ্জমান প্রথমে লন্ডন মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য হিসেবেও মনোনীত হন। যুবলীগের রাজনীতি থেকে তিনি সরাসরি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন এবং বর্তমানে তিনি এ পদেই আছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code