প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভারতকে দুটি বার্তা দিলো অন্তর্বর্তী সরকার

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৭, ২০২৪, ০৭:১৩ পূর্বাহ্ণ
ভারতকে দুটি বার্তা দিলো অন্তর্বর্তী সরকার

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
সাম্প্রতিক ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে দেশের সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং বিভিন্ন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব বৈঠক থেকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থক ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে দুটি বার্তা দিতে চেয়েছে। একটি হলো দেশের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে সরকার আপসহীন। দ্বিতীয়টি হলো, ফ্যাসিবাদ হটাতে গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সব পক্ষ তাদের প্রতিহত করতে এখনো এককাট্টা। এই ঐক্য ধরে রেখে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় আগামী দিনে স্বৈরাচারী শাসনমুক্ত একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এগোতে চায় রাজনৈতিক দলগুলো।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার, তার জামিন আবেদন নাকচকে কেন্দ্র করে আইনজীবী হত্যা, ভারতীয় গণমাধ্যমে উসকানিমূলক নানা অপপ্রচার, এর জের ধরে ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা এবং জাতীয় পতাকার অবমাননা, বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পাঠাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরজিসহ বেশ কিছু ঘটনা উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলছেন, এসব ঘটনার জেরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েনের সম্মুখীন হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজনৈতিক দল, সংগঠনসহ বিভিন্ন ধর্মের নেতাদের এক কাতারে আনার উদ্যোগ নেন ড. ইউনূস। এর মধ্যে গত বুধবার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সম্মিলন ঘটে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে। সেদিন ৩৫টির বেশি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দেন।

সে বৈঠকে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘এই বৈঠকের মাধ্যমে একটি পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে যে আমরা ঐক্যবদ্ধ। সংখ্যালঘুদের নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে, ষড়যন্ত্রের গন্ধও পাচ্ছি। এটা মোকাবিলার জন্য এই সময়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত। এ পরিস্থিতিতে পতিত স্বৈরাচারী গোষ্ঠী ও দল এবং তাদের সমর্থকেরা ছাড়া সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিহত করতে প্রস্তুত আছে।

রাজনীতি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার প্রশ্নে এ ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি অতীতে আর কখনো হয়নি। আবার সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ ধরনের জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ এবং তাতে ব্যাপকভাবে সাড়া দেওয়ার ঘটনাও আগে কখনো দেখা যায়নি।

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়

প্রধান উপদেষ্টা গত বৃহস্পতিবার সব ধর্মের নেতাদের সঙ্গেও আলোচনায় বসেন। তার আগে রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক হয় প্রধান উপদেষ্টার। এ ধরনের যৌথ সংলাপের দৃষ্টান্ত দেশের রাজনীতিতে অতীতে দেখা যায়নি।

এই সংলাপ সম্পর্কে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ধর্মকে ব্যবহার করে দেশে বিভক্তি সৃষ্টির পেছনে বাইরের শক্তির প্রভাব, দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো ঘটনা এভাবে অতীতে কখনো ঘটেনি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দেশের স্বাধীন অস্তিত্বের প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য থাকতে হয়, এ বৈঠকে সেটিই হয়েছে। সংলাপে জাতীয় ঐক্যের একটা প্রকাশ ঘটেছে।

Manual5 Ad Code

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, শিগগিরই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশনসহ অভ্যুত্থান-সংশ্লিষ্ট ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক হবে। এর মধ্য দিয়ে এই সংলাপ শেষ হবে।

Manual3 Ad Code

বুধবারের সংলাপে অংশ নিয়েছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান নেতা জোনায়েদ সাকি। সেদিনের রাজনৈতিক সম্মিলনের নির্যাস সম্পর্কে তিনি গ বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ—এটি ছিল মূল কথা। বিশেষ করে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী আমরা সব শক্তি আমাদের গর্বিত অর্জনকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রক্ষা করতে চাই, এই বৈঠক সেটিরই একটি প্রকাশ।’

Manual3 Ad Code

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা সরকারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন। সেই সঙ্গে তারা সরকারকে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচার এবং অপতথ্যের বিরুদ্ধে সরকারের দিক থেকে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন প্রায় সবাই।

এছাড়া জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে ৬৪ জেলায় সম্প্রীতি সমাবেশ করা, জাতীয় ঐক্যের প্রতীকী সংহতি হিসেবে সর্বস্তরের নাগরিকদের নিয়ে সম্মিলিত কর্মসূচি করা এবং সারা দেশে একযোগে একই সময়ে যার যার অবস্থান থেকে জাতীয় পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনেরও প্রস্তাব দেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি) সদস্যসচিব মুজিবুর রহমানসহ অনেকে। শিগগিরই সম্মিলিত কোনো কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।

এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘ভারতের যে মিথ্যা প্রচারণা, বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড, এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা ছাড়া জাতি যে ঐক্যবদ্ধ আছে, এই বার্তা দেশে এবং বহির্বিশ্বে পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন ছিল। সে বার্তাটি গেছে। একই সঙ্গে এই সংলাপে বিভিন্ন বিষয়ে যে প্রস্তাব এসেছে, যেমন সবাই মিলে একটি সমাবেশ করা, পলিটিক্যাল কাউন্সিল করা, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল করা—এগুলো বিবেচনার অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘ভারতকে বুঝতে হবে, বাংলাদেশের মানুষ আর নতজানু নীতি মেনে নেবে না, আমরা সম–অধিকার ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব চাই।’

Manual7 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code