প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

এক রাতে বাড়ল অনেক পণ্যের দাম‌

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১১, ২০২৫, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ
এক রাতে বাড়ল অনেক পণ্যের দাম‌

Manual8 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

কারওয়ান বাজারে ইউনিলিভার বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত ১০০ গ্রামের একটি লাক্স সাবান শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়, যা কয়েক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়। শুধু সাবান নয়, টিস্যু, জুসসহ বেশ কিছু পণ্য কিনতে এক রাতের ব্যবধানেই বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

গত বৃহস্পতিবার রাতে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর দুটি অধ্যাদেশ জারি করে সরকার, যা তাৎক্ষণিক কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এক রাতের মধ্যে লাক্স সাবানসহ ইউনিলিভারের প্রায় সিংহভাগ পণ্যের দাম ৫ থেকে ৬ টাকা কীভাবে বাড়ল- এমন প্রশ্নে হাস্যোজ্জ্বল উত্তর মেসার্স রশিদ স্টোরের রাকিব হাসানের।

তিনি বললেন, দাম বাড়াতে সরকারের নির্দেশ লাগে না। সরকার দাম বাড়াবে এটা কোম্পানি আগে থেকেই জানে।

রাকিব হাসান বলেন, ইউনিলিভারের সব পণ্যের দাম আরও দুই-তিন দিন আগে থেকেই ৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। বিক্রি করা হচ্ছে বাড়তি দামেই। ফলে ১০০ গ্রামের লাক্স সাবান কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা।

একইভাবে দাম বেড়েছে বাজারে সব ধরনের টিস্যুর। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানি থেকে আগে এক কার্টন টিস্যুতে ৬ পিস ফ্রি দেওয়া হতো। ফলে প্রতি ১২ পিস বিক্রিতে লাভ হতো ১৫ থেকে ২০ টাকা। ক্রেতাদের কাছে টিস্যুর গায়ের দামের থেকে কিছু কমে বিক্রি করা যেত। কিন্তু শুক্রবার সকালে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কোম্পানিগুলো আর ফ্রি টিস্যু দেবে না।

মেসার্স রশিদ স্টোরের রাকিব হাসান বললেন, ‘এতে আমাদের কিছুটা লাভ কমে যাবে; কিন্তু ক্রেতাদের আমাদের পক্ষ থেকে যে ছাড় দেওয়া হতো, সেটি আর দেওয়া যাবে না।’

Manual6 Ad Code

ইউনিলিভার বাংলাদেশ-এর করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান শামিমা আক্তার বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের পণ্যের যে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে, তা সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে নয়। যেকোনো মূল্যবৃদ্ধির জন্য সময় লাগে এবং এটি রাতারাতি করা যায় না। এটি একটি আনুষ্ঠানিক এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়।’

শামিমা আক্তার বলেন, ‘আমরা মিডিয়ার খবরে ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয়টি দেখেছি। আমাদের এ বিষয়ে পর্যালোচনা করতে হবে এবং তার পরই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব।’

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। এ জন্য দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ দুটি হলো মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫। এই দুটি অধ্যাদেশ জারির প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। এর ফলে এই অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে।

এই অধ্যাদেশের কারণে এলপি গ্যাস, মিষ্টি, বিস্কুট, ফলের রস, কোমলপানীয়, চশমার ফ্রেম, সিগারেটসহ শতাধিক পণ্যের দাম বাড়বে।

Manual7 Ad Code

কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা সালেহিন আহমেদ বলেন, ‘আমি ধানমন্ডিতে থাকি। কারওয়ান বাজার থেকে বাজার করি মূলত এখানে সব পণ্যের কিছু না কিছু ছাড় পাওয়া যায়, যা এলাকার দোকানগুলোতে পাওয়া যায় না।’

সালেহিন বলেন, সরকার পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়িয়েছে কারণ সরকারেরও আয় প্রয়োজন। কিন্তু এমন সময় বাড়ানো হয়েছে, যখন সব পণ্যের দামই আকাশচুম্বী। এক রাতেই অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। কয়েক দিন পর কোম্পানিগুলোর নতুন পণ্য এলে বাড়তি দামে কিনতে হবে। সরকারের উচিত, আয়ের জন্য জনগণ যা নিত্যব্যবহার করে, এমন পণ্যের চেয়ে বিলাসী পণ্যের দিকে নজর দেওয়ার।

কারওয়ান বাজারে আব্দুল্লাহ স্টোরে দেখা মিলল মনির হোসেনের। তিনি দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চকবাজারের জিহাদ স্টোরের মালিক। তিনি মূলত চকলেট, জুস পণ্য সরবরাহ করেন কারওয়ান বাজারে।

Manual2 Ad Code

মনির হোসেন বলেন, কিটক্যাট চকলেটের ২০ প্যাকেটের দাম এখন ১ হাজার ৭৫০ টাকা, আগে যা ছিল ১ হাজার ৪৯০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। সরকারের সিদ্ধান্তের পর আমদানি করা জুস বিক্রি করতে হবে প্যাকেটপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বেশি দামে।

আমদানি ছাড়াও দেশের চকলেট ও জুস তৈরিকারক কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে পণ্যভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বলে জানান মনির হোসেন।

সরকারের ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ভোজনরসিক হোক বা রাজধানীতে বাধ্য হয়ে হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করেন, এমন ব্যক্তিদের এখন বাড়তি বিল গুনতে হবে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তে রেস্তোরাঁর বিলের ওপর ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এখন ১ হাজার টাকা খাবারের বিলে খরচ বাড়বে ১১৫ টাকা। কারওয়ান বাজারের চারুলতা রেস্তোরাঁর ম্যানেজার উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত জেনেছি। কিন্তু আমরা এখনো খাবারের দাম বাড়াইনি। বাজারে সবজির দাম এখন অনেক কম। আমরা সবজি আইটেম বেশি দিচ্ছি।’

Manual6 Ad Code

তিনি বলেন, ‘আমাদের আশপাশে অনেকগুলো রেস্তোরাঁ আছে। আমরা শিগগিরই সবাই একসঙ্গে বসে খাবারের দাম কত, কী পরিমাণ বাড়ানো যায় সেটি সিদ্ধান্ত নেব। তবে বাড়তি যে দাম, সেটি অবশ্যই ভোক্তাকেই পরিশোধ করতে হবে। দাম বাড়লেও ভোক্তাকে সন্তুষ্ট করে মান ঠিক রাখার চেষ্টা করব।’

এমন সিদ্ধান্তের পর মিষ্টির দোকানেও এর প্রভাব দেখা গেছে। আলাউদ্দিন সুইটসে গিয়ে দেখা গেছে, মিষ্টির দাম আগের মতোই আছে। তবে দাম বাড়বে সে আভাস দিলেন দোকানের ম্যানেজার। অধ্যাদেশে মিষ্টির দোকানের ভ্যাটও সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code