প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

কে সেই রহস্যময়ী রুমি, খুঁজছে পুলিশ

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১২, ২০২৫, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ণ
কে সেই রহস্যময়ী রুমি, খুঁজছে পুলিশ

Manual3 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসির) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা গোলাম রব্বানী টিপুকে কক্সবাজারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গোলাম রব্বানী টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে নেমেছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টার অভিযোগে রুমি নামে এক নারীকে খুঁজছে পুলিশ।

এ ঘটনায় শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে নিহতের ভগ্নিপতি মো. ইউনুস আলী সেখ বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াছ খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বৃহস্পতিবার রব্বানী, ইফতেখার এবং রুমি নামে এক নারী একইসঙ্গে কলাতলীর হোটেল গোল্ডেন হিলে কক্ষ বুক করেন বলে প্রচার পায়। তবে তারা একসঙ্গে হোটেলে ওঠেননি। কক্ষ বুকিংয়ের সময় রব্বানী তাদের তিনজনের পরিচয় দেন বলে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে মাস্ক পরা এক নারীকে রব্বানীর সঙ্গে হোটেল থেকে বের হতে দেখা যায়। হত্যার পর রাত ১টার দিকে র‌্যাব হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বলে জানান র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, রুমি খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তার সম্পর্কে জানা যায়, তিনি দেখতে সুন্দরী ও মেধাবী। পুলিশ এই রুমিকে খুঁজছে, কিন্তু এখনো পাওয়া যায়নি। কক্সবাজারের স্থানীয়দের মধ্যে একটাই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে, কে এই রুমি?

কক্সবাজারের গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, সেদিন সকালে কাউন্সিলর টিপু্র আবাসিক হোটেলে ওঠার কিছুক্ষণ পর রুমি ওই হোটেলে ঢোকেন। পরে সন্ধ্যায় টিপু ও রুমিসহ আরও একজন ওই হোটেল থেকে বের হন। এর পর রাত ৯টার দিকে সৈকতে কাউন্সিলর টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে রুমি উধাও হয়ে যান।

রব্বানীর বড় ভাই শিক্ষক গোলাম রসুল গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার পরপরই শৃঙ্খলাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যার আলামত সংগ্রহের চেষ্টা চালায়। নিহত টিপুর সঙ্গে তার সহকর্মী সাবেক এক কাউন্সিলর কক্সবাজার যান এবং তারা একসঙ্গে একটি হোটেলে যান বলেও জানতে পারি। টিপু হত্যার ক্লু বের করার চেষ্টায় খুলনার সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার ও কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার নুরুল কবির ভুট্টোকে হেফাজতে নিয়েছে র্যাব-১৫।

শুক্রবার দুপুরে নথিভুক্ত হওয়া মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ভিকটিম গোলাম রব্বানী টিপু (৫৫) আমার স্ত্রী নুরজাহান বেগম হ্যাপির আপন মেঝ ভাই। গোলাম রব্বানী টিপুর কক্সবাজার জেলায় পূর্বে চিংড়ি মাছের ঘেরের ব্যবসা ছিল। গত ৮ জানুয়ারি রাত ১১টার গ্রিনলাইন বাসে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন টিপু।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে টিপুর সঙ্গে বোন হ্যাপির (বাদীর স্ত্রী) মোবাইলে যোগাযোগ হয় এবং কক্সবাজারে বেড়াতে আসার কথা জানান। পরে একই দিন রাত প্রায় ১০টার দিকে খুলনা দৌলতপুর থানা পুলিশের মাধ্যমে খবর পাই গোলাম রব্বানী টিপুকে কক্সবাজার পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ডের সুগন্ধা পয়েন্টস্থ হোটেল সী-গাল’র পশ্চিম পার্শ্বে ফুটপাতের ওপর অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও লেখেন, স্থানীয় লোকজন ভিকটিম টিপুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের পর মরদেহ মর্গে পাঠায়। শুক্রবার সকালে বাদী ও পরিবারের লোকজন মর্গে উপস্থিত হয়ে মরদেহ শনাক্ত ও হত্যার বিষয়ে স্থানীয় লোকজনদের কাছে বিস্তারিত জানতে পারেন। আমাদের ধারণা ৯ জানুয়ারি রাত অনুমান সোয়া ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যবর্তী সময়ে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গোলাম রব্বানী টিপুকে মাথায় গুলি করে খুন করে।

Manual8 Ad Code

নিহত গোলাম রব্বানী টিপু (৫৫) খুলনার দৌলতপুরের দেয়ানা উত্তরপাড়ার বাসিন্দা গোলাম কবিরের ছেলে। তিনি খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতির পদে ছিলেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সঙ্গে তাকেও অপসারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।

রব্বানীর বড় ভাই শিক্ষক গোলাম রসুল গণমাধ্যমকে বলেন, টিপু এখানকার একজন জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিল। জনপ্রিয়তা এত বেশি ছিল যে, সে জীবিত থাকলে এখানে আর কেউ কাউন্সিলর হতে পারবে না। ৮ জানুয়ারি ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইফতেখারসহ কয়েকজন রব্বানীকে টোপ দিয়ে কক্সবাজারে নিয়ে গেছেন বলে জেনেছি। ব্যবসা বা অন্য কোনো কথা বলে হয়ত নিয়ে যান। ওখানে আগে থেকেই শুটার সেট করা ছিল।

গোলাম রসুলের মতে, কাউন্সিলরদের সঙ্গে কাউন্সিলরদের সম্পর্ক থাকে। হয়ত কারও না কারও প্ররোচনায় বা ব্যবসায়িক কথা বা অন্য কোনো প্রয়োজনের কথা বলে টিপুকে নিয়ে গেছে। যাই হোক না কেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা খুলনাকেন্দ্রিক। তার (রব্বানী) শত্রুরা তাকে হত্যা করিয়েছে। শত্রু কারা, সেটা আমি বলতে পারছি না।

Manual5 Ad Code

একজন রিকশা চালক টিপুকে রক্তাক্ত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। তিনি জানান, রাত পৌনে ৯টার দিকে সৈকতের সি’গাল পয়েন্টের কাঠের সাঁকোর পাশের ঝাউবনে হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। অকস্মাৎ হওয়া এ আওয়াজ গুলির শব্দ বুঝতে পেরে অনেকে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন। তারা দেখতে পান এক ব্যক্তিকে গুলি করে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ওই সময় গুলিবিদ্ধের চিৎকার শুনে এগিয়ে যান তিনি। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

Manual2 Ad Code

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েকজন লোক মোটরসাইকেলে এসে তাকে কপালে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পর্যাপ্ত লাইটিং না থাকায় গুলি করে পালিয়ে যাওয়াদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code