প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১০ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

দুবাইয়ে সম্পদ গড়া ৭০ ‘ভিআইপি’ চিহ্নিত, এনবিআরের কাছে কর নথি তলব

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ০১:০৭ অপরাহ্ণ
দুবাইয়ে সম্পদ গড়া ৭০ ‘ভিআইপি’ চিহ্নিত, এনবিআরের কাছে কর নথি তলব

Manual5 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

দুবাইয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন এমন অন্তত ৭০ জন ‘ভিআইপি’ বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই তালিকায় রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীসহ বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাও আছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে (দুবাই) তাদের ৯৭২টি স্থাবর সম্পত্তি কেনার অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

Manual6 Ad Code

এদিকে গত ১৬ এপ্রিল সংশ্লিষ্টদের কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন), আয়কর রিটার্নসহ যাবতীয় তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে তথ্য তলব করেছে সংস্থাটি।

দুদকের উপপরিচালক রাম প্রসাদ মন্ডলের সই করা চিঠিতে বলা হয়, দুবাইয়ে যেসব সম্পদ কেনা হয়েছে, তার অর্থের উৎস হিসেবে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকে রাখা অর্থ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআরের কাছে বিস্তারিত আর্থিক তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

 

৯৭২টি বিদেশি সম্পত্তির খোঁজ

 

দুর্নীতি দমন কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে ৪৫৯ জন বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে (দুবাই) ৯৭২টি স্থাবর সম্পত্তি কেনার অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে। এসব ব্যক্তি সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার করে পরবর্তী সময়ে সেই অর্থের বিনিময়ে ‘গোল্ডেন ভিসা’ সুবিধার আওতায় আমিরাতে সম্পত্তি অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে জারি করা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, অর্থপাচারের অভিযোগের অনুসন্ধানে দুদক উপপরিচালক রাম প্রসাদ মন্ডলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সংশ্লিষ্ট অভিযোগের নিরপেক্ষ অনুসন্ধান নিশ্চিত করতে ৪৫৯ ব্যক্তির নাম-পরিচয়সহ কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সার্টিফিকেট এবং সংশ্লিষ্ট কর সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য (ভিউ ডিটেইলস) সংগ্রহ জরুরি। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের কর সংক্রান্ত রেকর্ড আগামী ২৯ এপ্রিলের মধ্যে দুদকে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী অর্থপাচারবিরোধী লড়াইয়ের অংশ হিসেবে এ ধরনের অনুসন্ধানকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে দুদক। সংস্থাটি মনে করছে, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ এবং সম্পদ শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে।

Manual6 Ad Code

দুদকের এই অনুসন্ধান এমন সময়ে সামনে এলো, যখন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ’ ও ইউরোপীয় সংস্থা ‘ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি’ জানিয়েছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৫৯ বাংলাদেশি নাগরিক দুবাইয়ে মোট ৯৭২টি আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পত্তি কিনেছেন। যার কাগজে-কলমে মূল্য প্রায় ৩১৫ মিলিয়ন ডলার। তবে প্রকৃত বিনিয়োগ আরও বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

তালিকাভুক্ত ৭০ জনের মধ্যে রয়েছেন– রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, আমলা, বিদেশে বসবাসরত প্রবাসী বিনিয়োগকারীসহ নানা পেশার লোকজন। যদিও দুদক এখনও কারও পূর্ণ পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। সূত্র জানায়, দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সহযোগিতায় তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়। ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে তাদের আয়কর রিটার্ন ও টিআইএনসহ যাবতীয় করসংক্রান্ত তথ্য তলব করা হয়েছে।

এর আগে, ২০২৩ সালে দুদক এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) তথ্য পাঠায়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট এক আদেশে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের পাচার অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ তৈরি করে। বিশেষ করে দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগ না করে বাইরে সম্পদ গড়ার প্রবণতা নীতিনির্ধারকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

সরকার ইতিমধ্যে পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে ‘বিশেষ আইন’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলে প্রেস সচিব জানিয়েছেন। এনবিআরও ‘আন্তর্জাতিক কর বিশেষজ্ঞ’ নিয়োগের চিন্তা করছে।

দুদকের অনুসন্ধান ও এনবিআরের তথ্য যাচাইয়ের পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

Manual8 Ad Code

দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদেশে সম্পদ রাখার বৈধ উপায় থাকলেও অনেকে তা গোপন করে পাচার করেছেন বলে প্রাথমিক তথ্য রয়েছে। এনবিআরের কর রেকর্ডের সঙ্গে এসব তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। অপরাধের প্রমাণ মিললে মামলা করা হবে।’

Manual1 Ad Code

তিনি জানান, দুবাইয়ে ‘গোল্ডেন ভিসা’ নেওয়ার শর্ত অনুযায়ী, নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সেখানে বিনিয়োগ বা জমা রাখতে হয়। সেই অর্থ বাংলাদেশ থেকে কীভাবে পাঠানো হয়েছে, বৈধ রেমিট্যান্স নাকি হুন্ডি—তা বিশ্লেষণ করছে দুদক।

নিচে দুবাইয়ে অর্থপাচারের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে চিহ্নিত সন্দেহভাজন ৭০ ভিআইপি-এর নাম দেওয়া হলো, যাদের বিষয়ে কর নথি তলব করা হয়েছে:

আহসানুল করীম, আনজুমান আরা শহীদ, হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল, হুমায়রা সেলিম, জুরান চন্দ্র ভৌমিক, মো. রাব্বী খান, মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, এস এ খান ইখতেখারুজ্জামান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সৈয়দ ফাহিম আহমেদ, সৈয়দ হাসনাইন, সৈয়দ মাহমুদুল হক, সৈয়দ রুহুল হক, গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া, হাজী মোস্তফা ভূঁইয়া, মনজ কান্তি পাল, মো. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, মো. মাহবুবুল হক সরকার, মো. সেলিম রেজা, মোহাম্মদ ইলিয়াস বজলুর রহমান, এস ইউ আহমেদ, শেহতাজ মুন্সী খান, এ কে এম ফজলুর রহমান, আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, গুলজার আলম চৌধুরী, হাসান আশিক তাইমুর ইসলাম, হাসান রেজা মহিদুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ, এম সাজ্জাদ আলম, মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী, মোস্তফা আমির ফয়সাল, রিফাত আলী ভূঁইয়া, সালিমুল হক ঈসা /হাকিম মোহাম্মদ ঈসা, সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান /সৈয়দ কামরুজ্জামান, সৈয়দ সালমান মাসুদ, সৈয়দ সাইমুল হক, আবদুল হাই সরকার, আহমেদ সামীর পাশা, ফাহমিদা শবনম চৈতি, মো. আবুল কালাম, ফাতেমা বেগম কামাল, মোহাম্মদ আল রুমান খান এবং মায়নুল হক সিদ্দিকী।

এছাড়াও তালিকায় আরও যেসব নাম রয়েছে- মুনিয়া আওয়ান, সাদিক হোসেন মো. শাকিল, আবদুল্লাহ মামুন মারুফ, মোহাম্মদ আরমান হোসেন, মোহাম্মদ শওকত হোসেন সিদ্দিকী, মোস্তফা জামাল নাসের, আহমেদ ইমরান চৌধুরী, বিল্লাল হোসেন, এম এ হাশেম, মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন চৌধুরী, নাতাশা নূর মুমু, সৈয়দ মিজান মোহাম্মদ আবু হানিফ সিদ্দিকী, সায়েদা দুররাক সিনদা জারা, আহমেদ ইফজাল চৌধুরী, ফারহানা মোনেম, ফারজানা আনজুম খান, কে এইচ মশিউর রহমান, এম এ সালাম, মো. আলী হোসেন, মোহাম্মদ ইমদাদুল হক ভরসা, মোহাম্মদ ইমরান, মোহাম্মদ রোহেন কবীর, মনজিলা মোর্শেদ, মোহাম্মদ সানাউল্যাহ চৌধুরী এবং মোহাম্মদ সরফুল ইসলাম।

এই তালিকা অনুসারে এনবিআর-এর কাছে তাদের ই-টিআইএন, আয়কর রিটার্নসহ যাবতীয় কর সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code