প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

জুলাই যোদ্ধাদের ওপর একের পর এক হামলা

editor
প্রকাশিত মে ৫, ২০২৫, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ
জুলাই যোদ্ধাদের ওপর একের পর এক হামলা

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

গত ৯ মাসে জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মী এবং তাদের ও শহীদদের পরিবারের ওপর মোট ৩৭টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার ৩৪টি ঘটেছে আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের পরিবারের ওপর। বাকি তিনটি ঘটেছে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের পরিবারের ওপর।

গত ৯ মাসে বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে হামলার এ হিসেব পেয়েছে বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান বাংলা ফ্যাক্টচ্যাক।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে শনিবার (৩ মে) পর্যন্ত মোট ৩৬টি হামলার হিসাব দেখানো হয়েছে। রোববার (৪ মে) জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭টিতে।

বাংলা ফ্যাক্টচ্যাকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই মোহম্মদপুরে আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন ঢাকার একটি এনজিওর গাড়িচালক জসিম উদ্দিন হাওলাদার। এর ১০ দিন পর, ২৯ জুলাই হাসপাতালে মারা যান তিনি। গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকীতে দাফন করা হয় তাকে।

তার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে গত ১৮ মার্চ ধর্ষণের শিকার হন শহীদ জসিমের ১৭-বছর-বয়সী মেয়ে। দীর্ঘ মানসিক পীড়নে ভোগার পর মেয়েটি গত ২৬ এপ্রিল ঢাকার শেখেরটেকের ভাড়া বাসায় আত্মহত্যা করেন। দৈনিক সমকাল এ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। শহীদ জসিমের স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রতিবেদককে বলেন, দুর্বিষহ ঘটনার পর মেয়েকে একলা ছাড়িনি। এতদিন লগে লগে রাখছি। জামাই গেল, মাইয়ারেও বাঁচাইতে পারলাম না।

এর ঠিক পরদিন নোয়াখালীর মাইজদীতে জুলাই আন্দোলনের আরেক শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোটভাই ১৬ বছর বয়সী শাহরিয়ার হাসানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। হামলার ঘটনা নিয়ে দৈনিক প্রথম আলোতে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলা সমন্বয়ক আরিফুল ইসলামের দৈনিকটিকে বলেন, কিশোর গ্যাংটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক রয়েছে।

বাংলা ফ্যাক্টচ্যাক বলছে, এখন পর্যন্ত (৩ মে পর্যন্ত) বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে গত নয় মাসে ৩৬টি হামলার তথ্য জানা গেলেও এর বাইরে আরও হামলার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি অথবা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও গবেষণা সীমাবদ্ধতার কারণে ফলাফলে উঠে আসেনি।

মোট নয়টি হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত সরাসরি রাজনৈতিক দল বা গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ান কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে হামলাকারীদেরকে সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত অথবা ছিনতাইকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক কবিরুল ইসলাম জয়কে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। জুলাই আন্দোলনে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সে সময় পুলিশের গুলিতে তিনি আহত হন। তার চোখেও গুলি লাগে। চোখের চিকিৎসার জন্য ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় গিয়েছিলেন।

শুক্রবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে রাত দুইটার দিকে একজন তার কাছে ফোন করে জানতে চান, তিনি কোথায় আছেন। সে সময় কবিরুল তাকে ঠাকুরগাঁও ফিরছেন বলে জানান। কবিরুল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নেমে অটোরিকশায় বাড়ির দিকে রওনা হলে পাঁচটার দিকে ভুল্লী এলাকায় পৌঁছালে দুইটি মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়।

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্তর্বর্তী বিরোধের জের ধরে আরও ২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে খুলনা ও বরগুনাতে।

গত ৩ জানুয়ারি খুলনার শিববাড়ি মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক গ্রুপের আক্রমণে আহত হন অন্য গ্রুপের ৮ জন শিক্ষার্থী। বরগুনাতেও সমন্বয়ক মীর নীলয়ের গ্রুপের হামলায় আহত হন সমন্বয়ক রেজাউল করিমসহ ৪ জন।

এছাড়া, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের শিবির ট্যাগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ১ জন সমন্বয়ক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেমঘটিত কারণে ভুল বোঝাবুঝির জের ধরে আরেকজন সমন্বয়কের ওপর হামলা করা হয়েছে।

বাংলা ফ্যাক্টচ্যাকের মতে, এ ৩৬টি ঘটনায় কমপক্ষে ৮৯ জন আহত হয়েছেন। মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে কেবল আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িকেন্দ্রিক সংঘর্ষের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায়। এই ঘটনায় ১৭ জন আহত হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল কাসেম (২০) নামের এক যুবক মারা যান।

জুলাই আন্দোলনে জড়িত থাকা জীবিত ব্যক্তি ও তার পরিবারদের ওপর যে ৩৬টি হামলার সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে, এগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯টি হামলা হয়েছে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে। এছাড়াও এই বছরের ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসে ৫টি করে ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে।

গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ ৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে সেপ্টেম্বর মাসে। আর আন্দোলনের পরপরই আগস্ট মাসে ৪টি এবং নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ৩টি করে ঘটনা ঘটেছে।

এই ৩৬টি হামলার ঘটনা মধ্যে সর্বোচ্চ ৪টি ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীতে। ৩টি করে ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম এবং গোপালগঞ্জে। এছাড়া, ঢাকা, খুলনা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও রাজশাহীতে ২টি করে ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে, শরিয়তপুর, জামালপুর, সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রাম, নাটোর, বরগুনা, পিরোজপুর, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, চুয়াডাঙা, ঠাকুরগাঁও, বরিশাল, বাগেরহাট, ময়মনসিংহ ও যশোরে একটি ১টি করে ঘটনা ঘটেছে।

Sharing is caring!