প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

আবদুল হামিদের দেশত্যাগে আবারও ‘চাপে’ রাষ্ট্রপতি!

editor
প্রকাশিত মে ৯, ২০২৫, ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ
আবদুল হামিদের দেশত্যাগে আবারও ‘চাপে’ রাষ্ট্রপতি!

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

সাবেক রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের দেশত্যাগকে কেন্দ্র করে ‘নতুন শোরগোলে দেশ’। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে দিনভর ছিল আলোচনা-সমালোচনা ও নানাবিধ প্রশ্ন। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে হয়েছে প্রতিবাদ। বঙ্গভবনের সামনে হয়েছে বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের প্রশ্ন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুই মেয়াদের রাষ্ট্রপতি, যার নামে রয়েছে মামলা; তিনি কীভাবে দেশত্যাগ করার সুযোগ পেলেন? তারা বলছেন, যারা সুযোগ করে দিয়েছেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠন রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবি জোরালো করে তুলেছে। গতকাল রাতে এসব সংগঠনের ব্যানারে বঙ্গভবনের সামনে খণ্ড খণ্ড মিছিল করা হয়। তীব্র প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বেশ কয়েকজন নেতা।

 

আবদুল হামিদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যে তার নিজের জেলা কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার এবং উপপরিদর্শক ও সহকারী উপপরিদর্শক পদমর্যাদার দুজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত আইজিপিকে (প্রশাসন) প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

গতকাল আওয়ামী লীগ ছাড়া প্রায় সব মহল আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার খবরে ক্ষোভ-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ ঘটনায় আবারও নতুন করে আলোচনায় এসেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির নির্দেশে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ক্রস করার সুযোগ ঘটেছে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের। এ ইস্যুটি সামনে এনে আবারও রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিও উঠেছে।

 

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অফিস থেকে ফোনকল পেয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে এয়াপোর্টে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এমন অভিযোগ করেন তিনি।

 

আব্দুল হান্নান মাসুদ লিখেছেন, ‘আব্দুল হামিদকে বিমানবন্দরে আটকানো হলো, তারপর নাকি চুপ্পুর (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) অফিস থেকে ফোনকল পেয়ে ছেড়ে দেওয়া হলো।’

 

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র ও ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবি করেছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী। গতকাল বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি। হাদী বলেন, ‘আজকে আমাদের কারও প্রতি কোনো দায়ও নেই, দরদও নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আজকে দশ মাস পার হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সরকারের রীতিমতো প্রসব বেদনা থাকার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে তারা রাতের আঁধারে ঢাকঢোল পিটিয়ে পরিবারসহ দেশত্যাগের সুযোগ করে দিয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে।’

 

অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের দশ মাস পর এসেও আমাদের বলতে হচ্ছে, আপনারা কী করেন? আপনারা চুপ্পুকে (রাষ্ট্রপতি) অপসারণ করতে পারেন নাই, জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারেন নাই, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে পারেন নাই, আপনারা ক্ষমতায় বসে করেনটা কী?’

 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত নেতারা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝেড়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ওপর। বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ, গণ অধিকার পরিষদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে যাত্রা কর্মসূচি পালন করে। তারা স্মারকলিপিও দেয়।

 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ নেই বলে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের মন্তব্য একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন মহল থেকে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবি ওঠে। বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ তৈরি হয়। সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এরপর সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগ ইস্যুতে আবারও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি আবারও চাপে পড়তে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি?

 

তবে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ করা নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের যে দাবি উঠছে, সেটি নন-ইস্যুকে ইস্যু করা। নির্বাচন বিলম্বিত করার অপচেষ্টা একটি বিশেষ মহলের। রাষ্ট্রপতির প্রতি আমাদের কোনো মোহ নেই, কিন্তু সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হোক, সেটাও চাই না।’

গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকার ও তার দল আওয়ামী লীগের। এরপর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। অনেকে ইতিমধ্যে দেশ ছাড়লেও এতদিন দেশেই ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। অবশেষে তিনিও গত বুধবার মধ্যরাতে দেশ ছেড়ে যান। এ সময় ছেলে ও শ্যালক তার সঙ্গে ছিলেন। রাত ৩টা ৫ মিনিটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

 

সূত্রটি জানিয়েছে, রাত ১১টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ। এ সময় তার সঙ্গে ছেলে রিয়াদ আহমেদ ও শ্যালক ড. এএম নওশাদ ছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর ইমিগ্রেশনে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে দেশ ছাড়ার সবুজ সংকেত পান সাবেক রাষ্ট্রপতি।

 

জানা গেছে, আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কোনো সংস্থার কাছে কোনো অভিযোগ ছিল না। রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের টিজি ৩৪০ নম্বর ফ্লাইটে তারা তিনজন ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা দেন।

 

আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগের সময় ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আগে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের আরও অনেককে আসামি করা হয়।

 

দুজন প্রত্যাহার, দুজন বরখাস্ত : আবদুল হামিদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনায় তার নিজের জেলা কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার এবং উপপরিদর্শক ও সহকারী উপপরিদর্শক পদমর্যাদার দুজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

 

গতকাল রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনা তদন্তে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মতিউর রহমান শেখকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের সদর থানায় হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

Sharing is caring!