প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

দল নিষিদ্ধের আইনগত প্রক্রিয়া

editor
প্রকাশিত মে ১১, ২০২৫, ০৯:০০ পূর্বাহ্ণ
দল নিষিদ্ধের আইনগত প্রক্রিয়া

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এর মাধ্যমে দলটিকে পূর্ণাঙ্গরূপে নিষিদ্ধ করা হয়নি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনরতরা শনিবার (১০ মে) রাতে কার্যক্রম নিষিদ্ধের খবরে উল্লাস করেছে। একই সঙ্গে দলটিকে পরিপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার দাবিতে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করেছে।

ভবিষ্যতে এর আইনগত প্রক্রিয়া কী হতে পারে সে বিষয়ে জানতে চাইলে রাজনীতিবিদরা গত এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দুই মেরুর রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার উদাহরণ দেন। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরাও একই উদাহরণ দিয়ে বলেন, আইনের ব্যাখ্যা সব সময় একই থাকে। তাই কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ সামনে এসেছে, তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই বিষয়ে দেশে কী আইন আছে?

রাজনীতিবিদ ও আইনজীবীরা জানান, কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এ যাবৎ সিদ্ধান্ত এসেছে নির্বাহী আদেশ থেকে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া কোনো দল বা গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করতে আদালতও সরকারেক সুপারিশ করতে পারেন। আদালতের রায়ের সুপারিশে সরকার প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠিকে নিষিদ্ধ করতে পারে।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী ও এবি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছে। গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, সরকারও তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থায় এরই মধ্যে আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এসব অভিযোগের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে গত শুক্রবার রাতে ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম বলেন, আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দলের বিরুদ্ধে আমাদের (প্রসিকিউশন) কাছে এবং তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ জমা আছে। তবে এখনো কোনো দলের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়নি।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবির পক্ষে-বিপক্ষে মতামত থাকায় উদ্ধৃত না হয়ে শুধু আইনটি তুলে ধরেন রাজনীতিবিদ-আইনজীবীরা। তারা বলেন, আদালত থেকে কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার উদাহরণ না থাকলেও নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করার উদাহরণ আছে। দল বা সংগঠনকে সম্প্রতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে আইনের অধীনে সেটি হচ্ছে- সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ১৮(১) ধারা। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন এর মধ্যে বাতিলও করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই গত ২৮ আগস্ট ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়। ২৮ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ নতুন আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাস-সহিংসতার সঙ্গে সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সরকার বিশ্বাস করে, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর অঙ্গসংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নয়।

তাই সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ১৮(১) ধারার ক্ষমতাবলে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণাসংক্রান্ত ১ আগস্টের প্রজ্ঞাপন বাতিল করল। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার সময়ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের কথা গতকাল রাতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিন আগে গত ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা এই আইনে ‘নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তালিকাভুক্তকরণ’ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসীকার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে মর্মে যুক্তিসংগত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে।’

প্রসঙ্গত, গত ২ অক্টোবর আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরিক দলগুলোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়। দলগুলোর বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার হুকুমদাতা’ অভিযোগ আনা হয় এতে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ অভিযোগ দাখিল করেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। তিনি কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলনে আওয়ামী লীগসহ ১৪-দলীয় জোটভুক্ত দলগুলো গণহত্যা চালাতে সরাসরি হুকুম দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তখন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম জানান, গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৩১টি পৃথক অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি অভিযোগ জমা পড়ে চিফ প্রসিকিউটরের দপ্তরে। বাকিগুলো ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় দাখিল করা হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে আগে কয়েকটিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও তার বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নাম আছে। তবে ১৪ দলের শরিকদের বিরুদ্ধে এই প্রথম অভিযোগ এসেছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটিকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিটও হয়েছিল, যা সরাসরি খারিজ করে গত ১ সেপ্টেম্বর আদেশ দেন উচ্চ আদালত।

‘সারডা সোসাইটি’ নামে একটি সংগঠনের পক্ষে এর নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া গত ১৯ আগস্ট ওই রিট করেছিলেন। রিটের পক্ষে তিনি নিজেই আদালতে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। শুনানিতে রিট আবেদনকারী বলেন, আওয়ামী লীগকে পক্ষ না করা ভুল হয়েছে। রিটটি ‘নট প্রেস’ করে নেওয়ার কথা জানান তিনি।

আদালত শুনানি নিয়ে একপর্যায়ে বলেন, রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়। রিটটি সরাসরি খারিজ করা হলো।

Sharing is caring!