প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রে, লাভ-ক্ষতির নানান সমীকরণ বাংলাদেশে

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৫, ২০২৪, ০২:১৮ অপরাহ্ণ
নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রে, লাভ-ক্ষতির নানান সমীকরণ বাংলাদেশে

Manual2 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে চলছে নানান আলোচনা। মেলানো হচ্ছে লাভ-ক্ষতির সমীকরণ। কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প, কে হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? কার জয়ে কার কতটা লাভ-ক্ষতি, সেই হিসাব মেলাচ্ছে গোটাবিশ্ব। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের সম্পর্ক কী হবে সেটি নিয়েও চলছে নানান আলোচনা। একই সঙ্গে অভিবাসন নিয়ে নতুন সরকার কী নীতি গ্রহণ করে সেই বিশ্লেষণও চলছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। ৫ নভেম্বর দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে ভোটগ্রহণ হবে, তার ফল এলেই এমন সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে বাড়তি কোনো প্রভাব পড়বে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সেক্ষেত্রে সরাসরি সরকারের ওপর কোনো চাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে অভিবাসন, রেমিট্যান্সে ট্যাক্স আরোপসহ নানান ইস্যুতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের ওপরও বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠতায় বাংলাদেশের জন্য কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে তিনি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার চেষ্টাটাই বেশি করবেন। সে জায়গায় আমরা কিছুটা হলেও পরিবর্তন দেখতে পারবো। সামগ্রিক বিশ্ব পরস্থিতিতেও ট্রাম্প এলে একটি ভিন্ন অবস্থা দেখতে পাবো। ডেমোক্র্যাটরা থাকলে হয়তো তারা বাংলাদেশকে ভারতের মাধ্যমে দেখার চেষ্টা করে না, তাদের স্বতন্ত্র অবস্থান থাকে। তবে যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা চাইবে বাংলাদেশে নির্বাচনটা হোক। সেই সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক থাকুক।

প্রার্থী হওয়ার দৌড় থেকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হঠাৎ ছিটকে পড়া এবং ট্রাম্পের ওপর বন্দুক হামলাসহ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে নাটকীয় নানান ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এবারের প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংকট সমাধানের পাশাপাশি ইউক্রেন ও গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ, আফগানিস্তানে তালেবান ইস্যুসহ গুরুত্বপূর্ণ নানান বৈশ্বিক বিষয়গুলোও গুরুত্ব পেতে দেখা যাচ্ছে। এ কারণে মার্কিন নাগরিকদের বাইরেও সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ নজর রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের এ নির্বাচনের দিকে।

Manual6 Ad Code

 

 

নির্বাচনের শেষ দিকের প্রচারণায় ভোটারদের নানান ধরনের আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাম্প এবং কমলা। ভোটারদের উদ্দেশ্যে কমলা হ্যারিস বলেছেন, নির্বাচিত হলে প্রথম দিন থেকেই তিনি জীবনযাত্রার খরচ কমানোর দিকে মনোযোগ দেবেন। তার প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে খাদ্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণ, প্রথমবারের মতো বাড়ি কেনার সুবিধা, আবাসনের ব্যবস্থা ও ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি।

অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রাকে সাশ্রয়ী করার অঙ্গীকার করেছেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, তেল উৎপাদন বাড়িয়ে জ্বালানির দাম কমানো হবে। যদিও সুদের হার কমানো এককভাবে প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণে নয়, তবুও তিনি এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

 

Manual1 Ad Code

 

সাবেক কূটনীতিক, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, এ বছর ইমিগ্রেশনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ট্রাম্প এটাকে হাইলাইটস করছেন বারবার এবং এটাকে নিরাপত্তার সংকট হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। যে কারণে মানুষ ইমিগ্রেশনের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। কমলা হ্যারিস বলছেন তিনি এলে অভিবাসন আইন করবেন, যাতে করে এ সমস্যার একটা টেকসই সমাধান করা যায়। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে ইমিগ্রেশন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটা নেতিবাচক বাতাবরণ বিদ্যমান এ মুহূর্তে। সেই প্রেক্ষাপটে যদি ট্রাম্প আসেন তিনি বলছেন অবৈধ যারা আছে তাদের বের করে দেবেন, তবে এটি বলা সহজ করা কঠিন। তার অর্থ এই না, ট্রাম্প কিছুই করবেন না।

Manual6 Ad Code

তিনি বলেন, এই ইস্যুটা যেহেতু একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে রূপান্তর হয়েছে সেহেতু দেখানোর জন্য হলেও কিছু কাজ করতে পারেন। সেটা যদি হয় তাহলে বাংলাদেশি যারা নিয়মিত হননি, তাদের জন্য একটি আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। ট্রাম্প আরও বলছেন তিনি সেন্ট্রাল আমেরিকা বা সেই এলাকা থেকে যারা রেমিট্যান্স পাঠান তাদের ওপর ট্যাক্স আরোপ করবেন। এটা কোনো নির্দিষ্ট দেশের জন্য হয় না, এটা একটা পলিসি হয়। এই পলিসি হলে আমরাও নেতিবাচক অবস্থায় পড়ে যেতে পারি। কমলা বা ট্রাম্প যেই জিতেন, ইমিগ্রেশন ইস্যু শক্তের দিকে যাবে সেটা মোটামুটি ধরে নেওয়া যায়।

নির্বাচনের ফলাফলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির বলেন, আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে যিনি আছেন, তার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটা সর্বজন গ্রহণযোগ্যতা আছে। তাকে সবাই সম্মান করে। সেটা ডেমোক্র্যাটরাও করে, রিপাবলিকানরাও করে। কাজেই এটা কিন্তু আমাদের জন্য একটি বড় সুবিধার জায়গা।

এদিকে নির্বাচনের কৌশল হিসেবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার এক্সে (টুইটার) পোস্ট করেন ট্রাম্প। পোস্টে দাবি করেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে এমনটা হতো না। ট্রাম্প বলেন, ক্ষমতায় এলে নরেন্দ্র মোদীর (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও বাড়বে। পরে সবাইকে হিন্দুদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দীপাবলির শুভেচ্ছাও জানান ট্রাম্প। তবে নির্বাচন সামনে রেখে আমেরিকান-ভারতীয় কমিউনিটির সমর্থন ও ভোটের জন্যই ট্রাম্প সংখ্যালঘুদের নির্যাতনে নিন্দা জানিয়ে নতুন কৌশল ব্যবহার করছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এ নিয়ে এম হুমায়ুন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো সরকার আসুক, আমার যদি সক্ষমতা না থাকে এবং মর্যাদার সঙ্গে থাকার ইচ্ছা না থাকে তাহলে যেকোনো সরকারের পক্ষেই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা চলে আসা সম্ভব। যতক্ষণ না আমরা জাতীয়ভাবে আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদা নিয়ে দাঁড়াতে পারি, ততক্ষণ এই ঝামেলা ও বিপদে আমরা থাকতে পারি।

Manual7 Ad Code

তিনি বলেন, আমি যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সবার জন্য টেকসই করতে পারি, তাহলে যিনিই থাকুন অন্যের চোখ দিয়ে আমাকে দেখতে হবে না। আমার সঙ্গে সরাসরি তারা কাজ করতে আগ্রহী হবে। কাজেই এখানে অন্যের ওপর দোষ না দিয়ে আমার কী করার আছে সে কাজটায় মনোযোগী হওয়া দরকার।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code