প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে কাজ চলছে জোরেশোরে

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২৬, ২০২৪, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ণ
পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে কাজ চলছে জোরেশোরে

Manual2 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা বিপুল পরিমাণ অর্থ ফিরিয়ে আনতে আঁটঘাট বেঁধে নেমেছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশ থেকে পাচার করা অর্থের খোঁজ পেতে দ্বৈত কর চুক্তির আওতায় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমেও পাচার করা অর্থ উদ্ধারের কাজ চলছে। পাচার করা অর্থ উদ্ধারের দায়িত্বে থাকা দেশের সরকারি সংস্থাগুলো সমন্বয় করে কাজ করছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিবাচক ভাবমূর্তি এবং বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সুসম্পর্ক থাকায় অর্থ পাচার-সম্পর্কিত তদন্তে সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।

Manual5 Ad Code

প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে, শেয়ারবাজার এবং বৈদেশিক বাণিজ্য- এই তিন খাতে দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ সবচেয়ে বেশি পাচার করা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরেই ঘুষের লেনদেন হয়েছে। ঘুষের প্রায় সবটা পাচার করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে অনেকে নতুনভাবে মানি এক্সচেঞ্জার খুলে বা পুরোনো মানি এক্সচেঞ্জার কিনে নিয়েও অর্থ পাচার করেছেন বলেও তদন্তে বেরিয়ে আসছে। এসব মানি এক্সচেঞ্জারের মাধ্যমে হুন্ডিতে অর্থ পাচার করা হয়েছে। কে বা কারা এসব করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Manual6 Ad Code

 

বিগত সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ এক হাজারের বেশি প্রভাবশালী ব্যক্তির অর্থ পাচার ও পাচার করা অর্থ থেকে রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

অর্থ পাচারে জড়িত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৯৭ জন দ্বৈত নাগরিক বলে তদন্তে দেখা গেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে আন্তসংস্থা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করা হয়েছে।

Manual1 Ad Code

টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে আছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, এনবিআর এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একজন করে উপযুক্ত প্রতিনিধি। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই টাস্কফোর্স এরই মধ্যে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা তদন্তের অগ্রগতি, হালনাগাদ তথ্য আদান-প্রদান এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে একাধিক বৈঠক করেছেন। টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ পাচার নিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সহজে পাচারের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া পাচারের অর্থ দেশে আনার আইনি কৌশল নির্ধারণ, ল ফার্ম ঠিক করা এবং পাচার করা অর্থে কেনা ফ্ল্যাট, প্লট ও বাণিজ্যিক স্থাপনা বিক্রির বিষয়ে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে কারা কী পরিমাণ জমি, ফ্ল্যাট বা প্লট কিনেছেন তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। ওই সব সম্পদ কিনতে ব্যয় করা অর্থ কোন উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং বিদেশে কী পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রাখা হয়েছে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমেও এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, ভ্যাট নিরীক্ষা-গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল এবং ট্যাকসেস অ্যান্ড লিগ্যাল এনফোর্সমেন্ট শাখার কর্মকর্তারা অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করতে এবং পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে যে যার অবস্থান থেকে কাজ করছেন।

এনবিআর সংস্কারে গঠিত পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে এবং পাচার করা অর্থ থেকে রাজস্ব আদায় করা হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিগত সরকারের আমলে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে প্রকৃতপক্ষে কী কাজ হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে! তবে বর্তমান সরকার পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। বিগত সরকারের আমলে এসব ব্যক্তি অর্থ পাচারসংক্রান্ত বিদ্যমান আইন ভঙ্গ করে বাংলাদেশ থেকে কোন কোন দেশে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার করেছেন তা দেখা হচ্ছে।

Manual2 Ad Code

৪০টির বেশি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বৈত কর চুক্তি আছে। এসব দেশের মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ভারত, বেলজিয়াম, ইন্দোনেশিয়া, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, মায়ানমার, ফিলিপাইন, সুইডেন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলারুশ, বাহরাইন।

রাজস্ব বিশেষজ্ঞ এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুল করিম বলেন, দ্বৈত কর চুক্তি, বাংলাদেশের সঙ্গে করা অন্যান্য চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে কেনা ফ্ল্যাট, জমি, খামার, দোকান বা এজাতীয় সম্পদ জব্দ করতে কার্যক্রম পরিচালনা করার আইনি সুযোগ পাওয়া যাবে। পাচার করা অর্থ চুক্তিবদ্ধ কোনো দেশের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত রাখা হলে তাও জব্দ করার জন্য আইনি পদক্ষেপ এবং চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিদেশে অর্থ পাচারকারীর পরিচালিত ব্যবসা বন্ধ করারও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, সেসব দেশে অর্থ পাচারকারীদের পাচারের অর্থ নিরাপদ রাখার জন্য কিছু আইন সংস্থা, ট্রাস্ট কোম্পানি, অফশোর বিশেষজ্ঞ, রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, হিসাবরক্ষক, নিয়ন্ত্রক বিশেষজ্ঞসহ শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। এরা মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে পাচারের অর্থ নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করে থাকে। ওই সব দেশের সরকারের সহায়তায় এদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে পাচারের অর্থ সহজে দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code