প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

উচ্চশিক্ষায় এবার ১১ লাখ আসন ফাঁকা থাকবে

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০৫:০৯ পূর্বাহ্ণ
উচ্চশিক্ষায় এবার ১১ লাখ আসন ফাঁকা থাকবে

Manual5 Ad Code

আসনসংখ্যা পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ শিক্ষাবিদদের
স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে আসন রয়েছে ১৮ লাখ ৭ হাজার
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাশ করেছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার
মেডিক্যাল, বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আসনে লড়বেন ১২ শিক্ষার্থী

Manual5 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
এবার এইচএসসিতে পাশের হার গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হওয়ায় সব শিক্ষার্থী স্নাতকে ভর্তি হলেও ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে উচ্চশিক্ষায় ফাঁকা থাকবে প্রায় ১১ লাখ আসন। জানা গেছে, সঠিক পরিকল্পনা ছাড়াই গত এক যুগে উচ্চশিক্ষায় আসন বেড়েছে দ্বিগুণ। প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন ফাঁকা থাকছে। তবে এবার ন্যূনতম একজন শিক্ষার্থীও পাবে না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেশ কিছু কলেজ ও পিছিয়ে পড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো, এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলেও উচ্চ শিক্ষায় ৬ লাখ আসন ফাঁকা থাকতো। যাচাই-বাছাই ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং পরিকল্পনা ছাড়াই আসন বাড়ানোর ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

Manual7 Ad Code

বর্তমানে দেশের পাবলিক-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল-ডেন্টাল, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ মিলিয়ে অনার্স ও সমমান পর্যায়ে ১৮ লাখ ৭ হাজার ৫৭৬ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি হওয়ার আসন রয়েছে। তবে এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ শিক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। এদের প্রায় সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির লড়াইয়ে অংশ নেবেন।

Manual7 Ad Code

পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন জিপিএ-৪ ও ৩.৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও। জিপিএ-৪ পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার এবং জিপিএ-৩.৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষাবিদদের মতে, জিপিএ কেবল শিক্ষার্থীর একাডেমিক সাফল্যের সূচক। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে মূল নির্ধারক হলো ভর্তি পরীক্ষার ফল। তাই একাডেমিক ভালো ফল করলেও সবার জন্য স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত নয়। গত বছর দেখা গেছে, জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে স্বপ্নভঙ্গের শিকার হন। জিপিএ-৪ বা ৩.৫ পাওয়া কিছু শিক্ষার্থী ভালো পরীক্ষা দিয়ে সফলভাবে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। পরীক্ষার প্রস্তুতি, কৌশল ও কিছুটা ভাগ্যও ভর্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন না। তবে আগের বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী কম হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কিছুটা কম। জানা গেছে, এ বছর মেডিক্যাল, প্রকৌশল ও শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৪০ হাজার আসনের বিপরীতে লড়বেন প্রায় ৪ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষার্থী। অর্থাত্ প্রতিটি আসনের জন্য গড়ে ১২ জন শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় থাকবেন। ফলে এইচএসসিতে ভালো ফল করেও অনেকে নিশ্চিতভাবেই ভর্তির দৌড়ে পিছিয়ে পড়বেন। বর্তমানে ৩৬টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও পাঁচটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন ১৩ হাজার ৫০০। প্রথম সারির পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়) আসন সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। বিশেষ করে মেডিক্যাল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শিক্ষাবিদদের মতে, যেখানে শিক্ষার্থীরা যেতে চায় সেখানে আসন খুবই সীমিত। আর যেখানে আসন বেশি, সেখানে ভর্তির আগ্রহ তুলনামূলক কম। এবারও তীব্র প্রতিযোগিতা হতে পারে- ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, বুয়েট ও মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক। আগের বছরগুলোতে এসব প্রতিষ্ঠানে গড়ে প্রতিটি আসনের বিপরীতে ২০ জন পর্যন্ত আবেদনকারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক বলেন, দেশের চাহিদার কথা মাথায় না রেখে যাচাই-বাছাই ছাড়াই যততত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে উচ্চশিক্ষায় বেড়েছে আসন। তাই আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাসের পাশাপাশি সবাইকে প্রচলিত উচ্চশিক্ষা গ্রহণ না করে কর্মমুখী শিক্ষাগ্রহণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষায় কেবলি আগ্রহী এবং যার সক্ষমতা ও যোগ্যতা আছে তাদের জন্য। উচ্চ শিক্ষা সবার জন্য না। এইচএসসি পর্যন্ত ঠিক আছে। এরপর সবাইকে আপনার স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করাতে হবে, বিষয়টা কিন্তু তা নয়। কেউ হয়ত কর্মমুখী পড়ায় যাবে, কেউ ব্যবসায়ী হবে আবার কেউ অন্যান্য কাজে যাবে। কেউ টেকনিক্যালে যাবে, কেউ স্বাধীন পেশায় যাবে এটা হতেই পারে। উচ্চশিক্ষায় সংখ্যা নয় বরং মানসম্মত শিক্ষা ও শিল্পের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মানবসম্পদ তৈরি করতে পারাই বড় চ্যালেঞ্জ।

Manual5 Ad Code

শেষ ভরসা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়: যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না, তাদের শেষ ভরসা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত কলেজগুলোতে স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান), স্নাতক কারিগরি/সমমান পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি কলেজে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫টি আসন রয়েছে। এছাড়া ঢাকার সাত সরকারি কলেজে ২৩ হাজার ৬৩০টি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৬৪ হাজার ৫২৯টি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৭ হাজার ৫৯৩টি, নার্সিং ও মিডওয়াইফারিতে ৫ হাজার ৬০০টি এবং টেক্সটাইল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ১ হাজার ৪৪০টি আসন রয়েছে। অর্থাত্, শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প পথও খোলা রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, গত বছর থেকে আমরা ভর্তি পরীক্ষা চালু করেছি। এতে মেধাভিত্তিক নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হয়েছে, ফলে যোগ্য শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code