প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

এক যুগে দেশে ফলের উৎপাদন বেড়েছে ৫০ লাখ টন

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ
এক যুগে দেশে ফলের উৎপাদন বেড়েছে ৫০ লাখ টন

Manual5 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

দেশে এখন বছরে দেড় কোটি টন ফল উৎপাদন হচ্ছে, যা এক যুগ আগেও ছিল এক কোটি টন। ফলের বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়ায় টেকসই ও ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি এসেছে। এই সময়ে আম, জাম, লিচু, কলা ও আনারসসহ কয়েকটি ফলের উৎপাদন বেড়েছে, কমেছে কাঁঠাল ও নারিকেলের।

Manual7 Ad Code

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছর (২০২৪-২৫) দেশে এক কোটি ৫০ লাখ ৩৩ হাজার টন ফল উৎপাদন হয়েছে। এসব ফল চাষ হয়েছে দেশের ৭ লাখ ৬৫ হাজার ৫৫৯ হেক্টর জমিতে।

Manual4 Ad Code

 

তথ্য বলছে, ঠিক একযুগ আগে অর্থাৎ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে ফলের উৎপাদন ছিল ৯৯ লাখ ৭২ হাজার টন। ওই সময় ৬ লাখ ৭৮ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে ফল চাষ হতো।

এরপর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ কোটি ৬ লাখ টন, পরের বছর ১ কোটি ১০ লাখ, এরপর ১ কোটি ২০ লাখ টন ফল উৎপাদন হয় দেশে। পরের দুই বছর (২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছর) উৎপাদন ছিল ১ কোটি ২১ লাখের ঘরে। এর পরের অর্থবছরগুলো যথাক্রমে উৎপাদন হয় ১ কোটি ২৩ লাখ টন, ১ কোটি ২২ লাখ, ১ কোটি ৪৩ লাখ ও ১ কোটি ৫০ লাখ টন।

 

গত অর্থবছর (২০২৩-২৪) উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার টন ফল। গত অর্থবছর ফল চাষের জমির পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯৬ হেক্টর।

 

আম, জাম, লিচু, কলা ও আনারসের উৎপাদন বেড়েছে

 

দেশের প্রধান প্রধান দশটি ফল উৎপাদনের আলাদা আলাদা তথ্য রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে। তবে ২০২৪-২৫ সালের তথ্য এখনো হালনাগাদ হয়নি। আলাদা উৎপাদনের সবশেষ তথ্য ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত।

 

ওই তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে প্রধান দশটি ফলের মধ্যে আম, জাম, লিচু, কলা, বরই, পেঁপে, পেয়ারা ও আসারসের উৎপাদন বেড়েছে।

 

দেশে এক যুগে (২০১২-১৩ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর) আমের উৎপাদন ১৫ লাখ ৪ হাজার টন থেকে বেড়ে হয়েছে ২৫ লাখ ০৮ হাজার টন। আগে দেশে ১ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টরে আম চাষ হলেও এখন হচ্ছে ২ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে।

 

একই সময়ে জামের উৎপাদন ৩৭ হাজার টন থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫ হাজার টন, লিচু ১ লাখ ১৯ হাজার থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টন, কলা ১৫ লাখ ১ হাজার থেকে ২৪ লাখ ৩৮ হাজার টন, পেঁপে ৪ লাখ ৫২ হাজার থেকে ৭ লাখ ২৬ হাজার টন, পেয়ারা ৩ লাখ ১৪ হাজার থেকে ৬ লাখ ১৩ হাজার টন, বরই ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭৬ হাজার টন ও আনারসের উৎপাদন ২ লাখ ৩৯ হাজার থেকে বেড়ে ৫ লাখ ৮০ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে।

 

কমেছে কাঁঠাল ও নারিকেল

 

গত এক যুগে প্রধান ফলের মধ্যে কাঁঠাল ও নারিকেলের উৎপাদন কমেছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩২ লাখ ১২ হাজার টন কাঁঠাল উৎপাদন হলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে কমে হয়েছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। এক যুগে কাঁঠাল উৎপাদনের জমি ৮২ হাজার ৬৯১ হেক্টর থেকে কমে এসেছে ৫৮ হাজার ৭০০ হেক্টরে। এছাড়া নারিকেলের উৎপাদন এক যুগে ৫ লাখ ৯১ হাজার টন থেকে কমে হয়েছে ৫ লাখ ৫ হাজার টন।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদিও ভূ-প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় বাংলাদেশে প্রচুর কাঁঠাল উৎপাদিত হয়, তবে কাঁঠাল ও কাঁঠালজাত পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানিতে বাংলাদেশ একদম পিছিয়ে। কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার না বাড়ায় এর দাম থাকছে না, যে কারণে বাণিজ্যিক উৎপাদন নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. মইনুল হক বলেন, ‘অন্য ফলের উৎপাদন বাড়লেও কাঁঠাল খাওয়ার বিষয়ে মানুষের অনীহা রয়েছে। যে কারণে আম, লিচুর মতো বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়নি এ ফলের। এ কারণে উৎপাদন কমছে।’

 

 

বাড়ছে বিদেশি ফলের চাষাবাদ

 

প্রধান প্রধান দেশি ফল ছাড়াও দেশে ড্রাগন, স্ট্রবেরি ও মাল্টাজাতীয় বিদেশি ফলের উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। এসব ফল এখন বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ফলে পরিণত হয়েছে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, গত তিন বছরে ড্রাগন ফলের উৎপাদন প্রায় ৪০০ শতাংশ বেড়েছে।

 

 

এক যুগে দেশে ফলের উৎপাদন বেড়েছে ৫০ লাখ টন

 

২০২১-২২ সালে ১ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ হয়। ড্রাগন ফল উৎপাদন হয় ১৩ হাজার ৮৭২ টন। ২০২২-২৩ সালে ২ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের উৎপাদন দাঁড়ায় ৫১ হাজার ২৮৭ টন। ২০২৩-২৪ সালে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮ হাজার ৮১৩ টন।

 

উদ্যানতত্ত্ববিদ মইনুল হক বলেন, ‘থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনাম থেকে বিভিন্ন জাত এনে বাংলাদেশে ড্রাগনের চাষাবাদ শুরু হয়। এখন এ ফল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে। এ জাতের ফল মাঝারি, মিষ্টি। উৎপাদনও ভালো হয়।’

এছাড়া শীতপ্রধান দেশের আকর্ষণীয় ফল স্ট্রবেরির বাণিজ্যিক চাষ বাংলাদেশে শুরু হয় ২০০৭ সালে। নানান ধরনের প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে দেশে স্ট্রবেরি উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।

পাশাপাশি দেশে প্রায় সব জেলায় এখন দেশি মাল্টার চাষ হয়। বছর বছর বাগান ও উৎপাদন বাড়ছে।

Manual3 Ad Code

তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মাল্টার উৎপাদন ছিল ১৭ হাজার টন, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেড়ে ৮৪ হাজার টন ছাড়িয়েছে। একই সময়ে মাল্টার বাগানের পরিমাণ ২ হাজার ৪৩৩ হেক্টর থেকে বেড়ে প্রায় আট হাজার হেক্টরে উঠেছে।

এখন পার্বত্য জেলাগুলোতে মাল্টা বেশি চাষ হয়। দেশে মাল্টা উৎপাদনে শীর্ষে বান্দরবান। এরপরই রয়েছে খাগড়াছড়ি। তৃতীয় অবস্থানে আছে রাজশাহী।

 

 

চাষ হচ্ছে আরও অনেক ধরনের বিদেশি ফল

 

ড্রাগন, মাল্টা, স্ট্রবেরি ছাড়াও রাম্বুটান, অ্যাভোকাডো, পার্সিমন, কাঠলিচু, সাম্মামের মতো উচ্চমূল্যের বিদেশি ফল এখন চাষাবাদ হচ্ছে দেশে।

 

উদ্যানতত্ত্ব শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ক্রমবর্ধমান ফলের চাহিদা মেটানো, ফল আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি লাভজনক হওয়ার কারণে কৃষকরা বিদেশি ফল চাষে উৎসাহী হচ্ছেন।

 

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যানুসারে, বিভিন্ন ধরনের বিদেশি ফলের মোট উৎপাদন ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯২২ থেকে বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৭ টন। এক বছরে উৎপাদন ২১ হাজার টনেরও বেশি বেড়েছে। একই সময়ে বিদেশি ফল চাষের জমির পরিমাণ ১৫ হাজার ৪৩১ থেকে বেড়ে ১৬ হাজার ৫৬৮ হেক্টর হয়েছে।

 

বিদেশি ফল আমদানির হালচাল

 

দেশে উৎপাদনের পাশাপাশি চাহিদা মেটাতে বর্তমানে ৩৮ ধরনের ফল আমদানিও করা হয়। এনবিআরের হিসাবে বিদেশি ফল আমদানিতে সবশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

তবে কোন ফল আমদানিতে কত খরচ তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান মেলেনি। অ কৃষি সম্প্রসারণের কাছে সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত আলাদা আলাদা ফল আমদানির তথ্য পাওয়া গেছে।

তাতে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৭০ হাজার টন আপেল, ১ লাখ ৯৪ হাজার টন কমলা, ৯৫ হাজার ১৩০ টন আঙুর, ৭৫ টন আম, ৬ হাজার ৯৩ টন বেদানা, ৬০ হাজার ৫৩৮ টন মাল্টা, ২১ হাজার ৫৮৫ টন কেনু ও ৪৯০ টন ড্রাগন আমদানি হয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ফল আমদানি খরচ এখন বেড়েছে। তাই বিদেশি ফলের ওপর নির্ভরতা কমছে, আমদানিও কমছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে বর্তমানে আমদানি আরও অনেক কম হচ্ছে।’

 

নীতি-সহায়তা বাড়াতে প্রকল্প

 

Manual8 Ad Code

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পটি দেশে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছিল। ওই প্রকল্প শেষ হয়েছে চলতি বছর।

তবে ওই প্রকল্পের আদলে আরেকটি নতুন প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছেন বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের সবশেষ প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ‘আবারও ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নতুন একটি প্রকল্প নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর আগে সরকারের প্রচেষ্টায় দেশি ফল উৎপাদনের মাধ্যমে বিদেশি ফল আমদানিনির্ভরতা দারুণভাবে কমে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন মানুষের দেশি ফল খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। প্রচুর তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান হচ্ছে এ দেশি-বিদেশি ফল চাষাবাদে। এছাড়া ফলের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের পরিধি বাড়ছে। প্রক্রিয়াকরণেও ঝোঁক বাড়ছে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের। এ খাতে উৎপাদন বাড়াতে ও উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে আরও কিছু নীতি-সহায়তা দিতে সরকার কাজ করছে।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code