প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মাদকাসক্ত বাবার হাতে প্রাণ গেল ছেলের, অতঃপর…

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০১:১৬ অপরাহ্ণ
মাদকাসক্ত বাবার হাতে প্রাণ গেল ছেলের, অতঃপর…

Manual6 Ad Code

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা:
মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ী বাবার হাতে নির্মমভাবে খুন হলেন মাহিদ নামে ৭ বছরের এক শিশু। ঘটনার পর শিশুর বাবা খোকন মিয়া ও দাদি হাওয়া বেগম নিজ ঘরে লাশ রেখে আত্মগোপন করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘাতক বাবাকে আটক করে।

রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের জগন্নাথপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।

Manual5 Ad Code

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খোকন মিয়া চিহ্নিত মাদক কারবারি। এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ব্যবসা করে আসছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। রবিবার বিকালে খোকনের দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশু মাহিদ বিছানায় মল ত্যাগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের বাহিরে এনে পেটাতে থাকে।

একপর্যায়ে শিশু মাহিদ সেখান থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী যবেদা খাতুনের ঘরে আশ্রয় নিলে সেখান থেকে ফের ধরে এনে ওপর থেকে মাটিতে ছুড়ে মারেন। এর পর শিশু মাহিদের দুই পা ধরে কংক্রিটের পিলারের সঙ্গে আছাড় দিতে থাকলে শিশু মাহিদের নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে। এ সময় প্রতিবেশী যবেদা বেগম শিশুটিকে রক্ষা করতেও ব্যর্থ হন। এমন পরিস্থিতিতে শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় খোকন মিয়া নিজেই শিশু মাহিদকে নিয়ে হাজির হন মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে।

Manual6 Ad Code

এ সময় গাছ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল কতৃপক্ষকে জানান খোকন। এরপর হাসপাতাল থেকে লাশ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে যায় খোকন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সদর মডেল থানা পুলিশ উপস্থিত হলেও সেখানে লাশ ও খোকন মিয়াকে না পেয়ে আশপাশে অভিযান চালায় পুলিশ। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশের অনুপস্থিতিতে লাশ নিয়ে খোকন নিজ ঘরে হাজির হয়ে সেখানে লাশ রেখেই সটকে পড়ে। তবে তার প্রথম স্ত্রী ও নিহত শিশু মাহিদ এর আরেক ভাইকে ঘরেই পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আশপাশে তল্লাশি চালিয়েও পুলিশ সেখানে খোকন ও তার মা হাওয়া বেগমের কোন খোঁজ না পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার জেলগেট এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

প্রতিবেশি যবেদা বেগম জানান, বাচ্চাটাকে দুই পা ধরে কংক্রিটের পিলারের সাথে মাথায় মারতে থাকে। তখন তাঁর নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল। মারধর করার সময় তাঁকে উদ্ধারে আমি এগিয়ে গেলে আমাকে অন্তত দশহাত দূরে টেনে নিয়ে যায়। তবে এসময় অন্য কেউ সেখানে ছিলনা বলে জানান ওই নারী।

জানা যায়, ১৫ বছর আগে প্রথম স্ত্রী রেখে তানিয়া আক্তার নামে এক নারীকে বিবাহ করে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তুলেন খোকন। ওই স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় কয়েক বছর আগে স্বামী খোকন মিয়াকে ছেড়ে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও মাহিদ ও রাফিদ নামে ৬ ও ৭ বছর বয়সী দুই শিশুকে রেখে দেন খোকনের কাছে। এরপর মায়ের আদর-স্নেহ ছাড়া বাবা খোকন মিয়ার কাছেই থাকত ওই দুই শিশু। ঘরে খোকনের প্রথম স্ত্রী ও তাদের ৩ ছেলে এবং ১ মেয়ে সন্তান থাকলেও দ্বিতীয় স্ত্রীর দুই সন্তান নিহত মাহিদ ও ফাহিদকে অমানবিক নির্যাতন করত খোকন। নির্যাতনের দৃশ্য দেখেও প্রথম স্ত্রী কখনো এগিয়ে আসতেনা বলে জানান প্রতিবেশিরা। পরিবারের সবাই যখন রাতে ঘুমিয়ে পড়ত তখন মাহিদ ও ফাহিদকে রাতে ঘরের বাহিরের বারান্দায় হাঁস-মুরগির সাথে ফ্লোরে চটের বস্তা ও খাতা দিয়ে ঘুম পাড়াতেন বাবা। এমন কী তাদেরকে নিয়মিত খাবারও দেয়া হতোনা।

Manual4 Ad Code

স্থানীয়রা বলছেন, অনেক দিন যাবত তুচ্ছ কারণে তাদের দুই ভাইয়ের প্রতি অমানবিক নির্যাতন চালাতেন মাদকাসক্ত বাবা খোকন মিয়া। নির্যাতনের নির্মম দৃশ্য প্রতিবেশির চোখে ধরা পড়লেও ভয়ে তাদের কেউ এগিয়ে আসার সাহস করেনি।

এদিকে খুন হওয়া মাহিদ এর মরদেহ রবিবার রাতেই পুলিশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যায় হাসপাতালে। সেখানে ময়না তদন্ত শেষে সোমবার দুপুরে লাশ হস্তান্তরের কথা থাকলেও বিকেল পর্যন্ত লাশ হস্তান্তর হয়নি বলে জানা গেছে।

মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মাহবুবুর রহমান সোমবার বিকেলে জানান, এঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবা খোকন মিয়াকে সদর উপজেলার জেলগেট এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়েছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি বলে ওসি জানান।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code