প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বিয়ানীবাজারে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের ভ্রম কাটছেনা, রাজনীতি ছাড়তে চান অনেকে

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ০৮:০৭ অপরাহ্ণ
বিয়ানীবাজারে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের ভ্রম কাটছেনা, রাজনীতি ছাড়তে চান অনেকে

Manual5 Ad Code

 

Manual7 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:

কী হতে কী হয়ে গেল, কেন এমন হল, ভ্রম কাটছেনা। এভাবে পালিয়ে থাকতে হবে হয়তো কল্পনাও করেনি তারা। শেখ হাসিনা জীবিত থাকবেন আর আওয়ামীলীগ ক্ষমতা ছাড়া হবে-এমন কথা আওয়ামীলীগ কিংবা বিরোধী রাজনীতিক দলের নেতাকর্মীরা চিন্তাও করতে পারেনি। কথার ছলে কেউ এমন আশঙ্কা প্রকাশ করলে তাকে নিয়ে বিদ্রুপ করতো আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

অথচ মাত্র অল্প দিনের ব্যবধানে পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি পাল্টে গেছে। গত পাঁচই অগাস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিবাদী তকমা পাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শীর্ষ নেতারাও অনেকে দেশ ছেড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেউ কেউ ‘দেশ ছাড়ার চেষ্টাকালে’ গ্রেফতার হয়েছেন।

 

“আমাদের দলের নেতাকর্মীরা এখন দিশাহারা, বিপর্যস্ত অবস্থা হয়ে গেছে। ৮ মাস হয়ে গেলো অথচ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ফিরে আসার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা। ফোন দিলেও নেতারা কেউ ধরে না। হামলা-মামলা সব মিলিয়ে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে,” -এমন কথা জানালেন বিয়ানীবাজার আওয়ামীলীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের এক নেতা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নেতাকর্মীদের অনেকে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Manual2 Ad Code

“ক্ষমতা হারালে এমন অবস্থা যে হতে পারে, সেটা দেখেনি বর্তমানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা,” বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ কর্মী। এলাকা ছেড়ে একমাস আগে তিনি ঢাকায় এক মেসে আশ্রয় নিয়েছেন। “ক্রিম খাইলো নেতারা, কোটি কোটি টাকা বানাইলো তারা; আর তাদের পাপের শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের মতো তৃণমূলের নেতাকর্মীদের” ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বিয়ানীবাজার থানায় দায়ের হওয়া ৪টি মামলার দু’টিতে এজাহারে নাম থাকা এক আওয়ামীলীগ নেতা।

 

Manual7 Ad Code

গত ৮ মাসে বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বেশীরভাগ। যত সময় যাচ্ছে তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।

দল ক্ষমতা হারানোর পর বিয়ানীবাজার পৌরশহরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যারা বাড়িঘর ফেলে অন্যত্র গিয়েছিলেন, তারা এখনও এলাকায় ফিরতে পারেননি। গ্রেফতার-হামলার ভয়ে স্থানীয় শীর্ষ নেতারা গা ঢাকা দিলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বেশিরভাগের পরিবার-পরিজন তাদের এলাকাতে নিরাপদে রয়েছেন।

“এভাবে কতদিন থাকবো? ভাবতে গেলেই কান্না আসে। মনে হচ্ছে, রাজনীতি করাই পাপ হয়েছে। তাই আর রাজনীতি করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিছি,”-বলেন চারখাই ইউনিয়নের এক আওয়ামী লীগ কর্মী। কর্মীদের মধ্যে আরও অনেকেই এমন সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার বেশ কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে একটি গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে শেখ হাসিনা পলায়ন করেছেন। তখন এর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছিলেনে যে, শেখ হাসিনা পালায় না।

“শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, শেখ হাসিনা নাই, শেখ হাসিনা চলে গেছে; শেখ হাসিনা পালায় না,” গত ২৪শে জুলাই সংবাদ সম্মেলনে বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

অথচ এ ঘটনার ঠিক ১০ দিন পরে লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমে আসার পর গত পাঁচই অগাস্ট দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান, যা এখনও মানতে পারছেন না দলটির নেতাকর্মীরা।

“আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারি না। আপা পালাইছে, মানতেই কষ্ট হয়,” -বলেন আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়েল এক জনপ্রতিনিধি। “ক্ষমতা হারানোর পর খালেদা জিয়া ছাড়েননি, এমনকী এরশাদের মতো স্বৈরাচারও পালায়নি। সেখানে নেত্রী কেন দেশ ছাড়লো , সেটাই আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারছি না,” বলছিলেন ওই চেয়ারম্যান।

 

পালিয়ে থাকা অবস্থাতেই একের পর এক মামলায় আসামি হচ্ছেন বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগ নেতারা। মামলা-গ্রেফতারের ভয়ে উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগের সহস্রাধিক চেনামুখের দেখা নেই। জরুরী কিংবা ব্যক্তিগত কাজেও তারা শহরমুখি হচ্ছেননা। পৌরশহরে থাকা আওয়ামীলীগের পৃথক অঘোষিত কার্যালয় দু’টি তালাবদ্ধ। যেসব স্থানে দলীয় নেতাকর্মীদের জঠলা দেখা যেত, সেখানে শূণ্যতা।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার থানায় ৩টি হত্যাসহ ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন থানায় দেড় ডজন মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code