প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১০ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বাণিজ্যিক কারণে জোরালো হতে পারে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৭, ২০২৪, ০২:৫৮ অপরাহ্ণ
বাণিজ্যিক কারণে জোরালো হতে পারে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক

Manual2 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজে ফিরতে নির্বাচনের প্রচারের সময় অর্থনীতি, অভিবাসন ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানান বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। সেই প্রেক্ষাপটে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক বিষয়টিতে জোর দেবে ট্রাম্প প্রশাসন- এমনটাই ধারণ করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও নানাভাবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে দেশটির সঙ্গে। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ সে দেশের জন্যও। অন্যদিকে কম দামের পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত বাংলাদেশ। সার্বিক বিবেচনায় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক বিবেচনায়ও বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও জোরালো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পোশাক আমদানিতে ৪ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ কমেছে। আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।

 

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। পাশাপাশি দ্বৈত কর এড়ানোর জন্যও চুক্তি করেছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ছিল ৪৬ কোটি ডলার, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ০.৪ শতাংশ বেশি। দুই সরকারের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বার্ষিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট (টিকফা) বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে বৃহত্তর সহযোগিতার সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। টিকফা বৈঠকের আলোচনায় বিশেষ করে বাংলাদেশের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার প্রবেশের সুযোগ, ডিজিটাল অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা এবং বাংলাদেশে শ্রম সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয়।

Manual2 Ad Code

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য রপ্তানি করে তার মধ্যে রয়েছে কৃষিপণ্য (খাদ্যশস্য, বীজ, সয়াবিন, তুলা, গম এবং ভুট্টা), যন্ত্রপাতি এবং লোহা ও ইস্পাত পণ্য। আর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য আমদানি করে তার মধ্যে রয়েছে- তৈরি পোশাক, জুতা, টেক্সটাইল সামগ্রী ও কৃষিপণ্য।

Manual6 Ad Code

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী হওয়ায় তিনি ব্যবসায়িক দিক বেশি বিবেচনা করবেন। যদি চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়, তাহলে অনেক মার্কিন বিক্রেতা খুচরা এবং ব্র্যান্ডের পোশাক পণ্যের সোর্সিং স্থানান্তর করার চেষ্টা করবেন। এতে অন্যান্য দেশ এবং একটি বড় সরবরাহকারী হিসেবে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

 

 

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব সাব্বির আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু ড. ইউনূসের সঙ্গে ডেমোক্র্যাট পার্টি থেকে নির্বাচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। পরে বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার প্রশাসনের সঙ্গেও ড. ইউনূসের একটি ভালো সম্পর্ক হয়। এখন আমার মনে হয় না ট্রাম্প আসায় এর কোনো প্রভাব পড়বে। যদিও এটি এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। তবে যেহেতু ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটা ভালো সম্পর্ক রয়েছে, ফলে অনেকে বলছেন, যেহেতু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সুতরাং সেটি নিয়ে ভাবছেন কেউ কেউ। আমার কাছে মনে হয় যেহেতু ট্রাম্প তার নির্বাচনে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে বেশি গুরুত দিয়েছেন, সেদিকে ফোকাস করবেন তিনি।’

 

তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ট্রাম্প আসায় বাংলাদেশের সঙ্গে খুব একটা সম্পর্কের ঘাটতি হবে না। কারণ অর্থনৈতিক নানান কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত আছে যুক্তরাষ্ট্র। সুতরাং শুধু ভারতের ইস্যু নয়, নিজেদের স্বার্থের দিকেও নজর রাখবে ট্রাম্প প্রশাসন। সুতরাং বাণিজ্যিক কারণে বরং সম্পর্ক আরও জোরালো হতে পারে।’

একসময় বাংলাদেশ বিবেচিত হতো ভারতবেষ্টিত এবং ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে অবস্থিত এক ক্ষুদ্র আয়তনের দরিদ্র দেশ হিসেবে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর বাংলাদেশের এ পরিচয় যতটা প্রাধান্য পেয়েছিল, মধ্য সত্তরে পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন এবং ১৯৯০-এর দশকে বৈশ্বিক রাজনীতিতে বড় ধরনের অদলবদল এ পরিচয়ে পরিবর্তন আনে। ভৌগোলিক গুরুত্ব, অবারিত প্রাকৃতিক সম্পদের আধার, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামগ্রিক উন্নয়ন, বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র অর্থনীতি ও ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের জন্যই বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Manual4 Ad Code

 

Manual8 Ad Code

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগে বঙ্গোপসাগরের ভূমিকা, ভূরাজনৈতিকভাবে বঙ্গোপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের প্রয়োজনীয়তা, চীনের অন্যতম বাণিজ্যিক পথ মালাক্কা প্রণালি, ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের সংযোগ, ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যের স্থিতিশীলতা, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং সর্বোপরি দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার মধ্যবর্তী দেশ হিসেবে এশিয়ার রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ রয়েছে বলেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি উদীয়মান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ। ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর চোখ এখন বাংলাদেশের দিকে।

 

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বর্তমানে শঙ্কার মধ্যে আছে। তারাও সংকটের মধ্যে আছে, ভয়াবহ সংকটের মধ্যে আছে। তাদের মধ্যে যে বিভাজন, সেটা ভয়ানক। এখান থেকে বাংলাদেশের শিক্ষনীয় যে, আমাদের স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও যে অস্থিতিশীল হতে পারে এবং (সেই) পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হতে পারে যদি আমরা দায়িত্বশীল না হই। আমরা যদি গণতান্ত্রিক চর্চা না করি তাহলে কিন্তু সংকট হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয়দের ভোট পাওয়ার জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতীয় ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভোট পেতেই তিনি এমনটা করেছেন। আমার মনে হয় না এটার খুব একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে। কারণ আমার আশঙ্কা, বাংলাদেশ কোথায় সেটাও ট্রাম্প জানেন না।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code