প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

গ্যাসের আগুনে পুড়ছে মানুষ

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ২৮, ২০২৫, ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ
গ্যাসের আগুনে পুড়ছে মানুষ

প্রজন্ম ডেস্ক:

ঢাকার ফকিরাপুলের বাসিন্দা রোজিনা আক্তার গ্যাস সিলিন্ডারের চুলায় রান্না করছিলেন বোন কুলসুমা আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে। ছেলে রিয়াজসহ তারা তিনজন গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হলে তাদের নেওয়া হয় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।

রোজিনা বলছিলেন, গত রোববার (২০ এপ্রিল) রান্না করার জন্য চুলা জ্বালতেই ঘরে জমা গ্যাসে আগুন লেগে যায়। তাদের চিৎকারে ছুটে এসে রিয়াজও দগ্ধ হন।

ওই ঘটনায় শরীরের ২ শতাংশ পুড়ে যায় রোজিনার। তিনি চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরতে পারলেও রিয়াজ ১২ শতাংশ এবং কুলসুমা ১৫ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের আগুনে প্রায়ই দগ্ধ হচ্ছে মানুষ। তাদের অনেকে চিকিৎসা নিতে ঢাকায় আসছেন। কিন্তু সবাইকে বাঁচানো যাচ্ছে না।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের হিসাবে, ২০২৪ সালে আগুনে দগ্ধ হয়ে ১২ হাজার ৮১১ জন রোগী জরুরি বিভাগে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হন ৪৬৮০ জন রোগী।

ভর্তি রোগীদের মধ্যে মারা যান ১০০২ জন। অর্থাৎ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

পুরোনো গ্যাসের লাইনের লিকেজ, সিলিন্ডারের রেগুলেটর বা পাইপ লিকেজ থেকে অনেক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। মানুষের সচেতনতার অভাবও বিপদ ডেকে আনছে।

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, ঢাকাসহ পাশের সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্যাসের আগুনে পোড়া রোগী বেশি আসছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোনো সরবরাহ লাইন বা চোরাই সংযোগ নেওয়ায় পাইপ ফেটে গ্যাস জমে আগুনের ঝুঁকি তৈরি হয়। এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের মান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না, তাতেও বাড়ছে অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ত্রুটি থেকেও অগ্নিকাণ্ড হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের আগুনে দগ্ধ হয়ে এ বছর ঢাকায় একজন মারা গেছেন। এ কারণে গ্রীষ্ম শুরুর আগেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় মেরামতের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

ছিদ্র থেকে মৃত্যু

গত ১৫ এপ্রিল গাজীপুর মহানগরের ছয়দানা এলাকায় ঘরে জমে থাকা গ্যাসে আগুন ধরে গেলে এক পরিবারের তিনজন গুরুতর দগ্ধ হয়ে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে হারিস মিয়া নামে একজন শুক্রবার মারা যান। মঙ্গলবার মারা গেছেন হারিসের ছেলে মো. মাইনুল ইসলাম। হারিসের শরীরের ৬৫ শতাংশ এবং মাইনুলের ৩৩ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।

হারিসের স্ত্রী আয়েশা বেগম ৬০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

হারিসের পুত্রবধূ হাফসা আক্তার বলেন, তারা ডেগেরচালা বালিয়ারা এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। সেদিন সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে ভয়াবহ ওই ঘটনা ঘটে।

“আমরা আরেক ঘরে ঘুমাইছিলাম। সকালে জোরে শব্দ শুইনা বাইরে গিয়া দেছি আব্বা, আম্মার ঘরে আগুন। তাদের শরীরেও আগুন লাগছে। আর ঘরের দরজা, জানালা উইড়া গেছে। পরে লোকজন তাদেরকে হাসপাতালে নিয়া যায়।”

গত ৩ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পশ্চিম ধনকুন্ডা এলাকার একটি বাসায় জমে থাকা গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হন আটজন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই পরিবারের তিনজনসহ চারজনের মৃত্যু হয়।

ওই ঘটনায় মারা যাওয়া লাকী আক্তারের ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, যে বাসায় তার বোন থাকতেন, তার নিচ দিয়ে গ্যাস লাইন গেছে। পাইপের লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়ে বদ্ধ ঘরে জমে গিয়েছিল। সেখানে কোনোভাবে আগুনের স্পর্শে বিস্ফোরণ ঘটে।

“আমরা শুনছি অনেকদিন আগেও অনেক জোরে গ্যাসের আওয়াজ হইছিল। কয়দিন আগেও একটা বার্স্ট হইছে। বাড়িওলারে বললেও কোনো ব্যবস্থা নেয় নাই।”

ফকিরাপুলের রোজিনা আক্তারের বাসায় রান্না হয় সিলিন্ডারের গ্যাসের চুলায়। গত রোববার কীভাবে সেখানে আগুন লাগল, সেই বর্ণনা পাওয়া যায় রোজিনার ভাই মাঈন উদ্দিনের কথায়।

তিনি বলেন, “সিলিন্ডারের যেখানে রেগুলেটর ফিট করতে হয়, ওই জায়গায় একটা প্লাস্টিকের নাট টাইপের থাকে। ওই সিলিন্ডারে সম্ভবত ওটা ছিল না। এ কারণে গ্যাস লিক হয়ে ঘরে জমে ছিল। চুলা ধরানোর জন্য আগুন জ্বালাতেই ঘরে থাকা গ্যাসে আগুন ধরে যায়।”

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগুনে ভর্তি রোগীদের একটি হিসাব দিয়েছে।

 

বার্ন ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ফ্লেম বার্ন নিয়ে যে ৬৫৭ জন ভর্তি হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই গ্যাস লাইন লিকেজ, গ্যাসের সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে আগুন লেগে দগ্ধ হন।

 

সমস্যা কোথায়?

ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান বলেন, গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, গ্যাস লিকেজ এবং লাইনের ত্রুটির কারণে বাসায় জমে থাকা গ্যাসের আগুনে দগ্ধ প্রচুর রোগী আসছে।

“চুলা জ্বালাতে গিয়ে সুইচ অন করা বা ম্যাচ জ্বালাতে গেলেই পুরো ঘরে আগুন ধরে যাচ্ছে। অসচেতনতা, অবহেলার পাশাপাশি কারিগরি ত্রুটিও দায়ী। ঘরে গ্যাস জমে ছিল, দরজা-জানালা বন্ধ, কিন্তু তারা খেয়াল না করে ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে দিয়েছেন।”

ডা. শাওন বলেন, গ্যাসের সিলিন্ডার এবং যন্ত্রাংশের মানও খতিয়ে দেখা উচিত।

“আমার কাছে মনে হচ্ছে যেসব সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমার মনে হচ্ছে, সিলিন্ডারের মুখে যে স্ক্রু থাকে, কেবলের মান খারাপ। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এতে মনে হচ্ছে ওইদিকে নজর দেওয়া দরকার।”

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, গ্যাসের চুলার বার্নার, রেগুলেটর, পাইপ দীর্ঘদিন পরীক্ষা করা হয় না। এসব যন্ত্রাংশের ত্রুটি থেকেও আগুন ধরে।

“গ্যাস জমে থাকে, জ্বালাইতে গেলে আগুন ধরে যায়। গৃহস্থালির সমস্যাগুলো বার্নার, কেবল আমাদের নিজেদেরই পরীক্ষা করতে হবে। আর সিলিন্ডার প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোকে বলা আছে প্রতি ৫ বছর পরপর সিলিন্ডার চেক করতে হবে। তারা সেটা করে কি না সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।”

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের একটি অফিস কক্ষে এসি বিস্ফোরণে দুজন আহত হয়। এদের মধ্যে আবদুল মালেক খান নামে একজন অফিস সহায়ক মারা যান।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সার্ভিসিং খুব জরুরি।

“এটা আমরা অনেকসময় করি না, এসির লাইনটাও ঠিক থাকে না। এতে এসিতে আগুন লাগে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নাই, এজন্য জনগণকেই সতর্ক হতে হবে।”

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ খান বলেন, “বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত সিলিন্ডার ব্যবহার করবে, রেগুলেটরসহ যন্ত্রপাতির মান নিয়ন্ত্রণ করবে–এটা বলা আছে। তা করা হয় না, বিষয়গুলো দেখভাল করারও কেউ নাই। সংস্থাগুলোর সক্ষমতাও নেই।”

গ্যাসের সিলিন্ডার ও যন্ত্রাংশের মান যাচাইয়ের দায়িত্ব বিস্ফোরক অধিদপ্তরের।

প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক হায়াত মো. ফিরোজ বলেন, “আমি মাত্র গতকাল দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়গুলো কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে জেনে এ বিষয়ে কথা বলতে হবে।”

 

পুরোনো গ্যাসের লাইন প্রতিস্থাপন কবে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাসের লাইন পুরোনো হয়ে যাওয়া, পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ নেওয়ায় গ্যাসের সরবরাহ লাইনে লিকেজ হচ্ছে। জমে থাকা গ্যাস থেকে হচ্ছে বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আলী আহম্মেদ খান বলেন, বিভিন্ন এলাকায় চোরাই লাইন, গ্যাসের পুরোনো জরাজীর্ণ লাইন ফেটে বাড়ির নিচতলা, রান্নাঘরে গ্যাস জমে ঝুঁকি তৈরি করে। এ কারণে লাইনগুলো মেরামত বা প্রতিস্থাপন খুবই জরুরি।

“পুরোনো লাইন প্রতিস্থাপন, চোরাই লাইন চিহ্নিত করে বন্ধ করতে হবে। পুরোনো লাইন প্রতিস্থাপনের জন্য একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল কিন্তু তা স্থবির হয়ে আছে।”

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ আশপাশের এলাকার পুরোনো গ্যাসের সরবরাহ লাইন মেরামতে একটি প্রকল্প হাতে নেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। তবে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন কবে হবে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

কোম্পানির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক সত্যজিৎ ঘোষ বলেন, “ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের একটা অংশ নিয়ে একটি প্রকল্প, আর গাজীপুর আশপাশের এলাকা নিয়ে আরেকটি প্রকল্প আছে। আমরা প্রজেক্ট প্রোফর্মা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছি, মন্ত্রণালয়ও দেখছে এ পর্যায়ে আছে। এটা কবে বাস্তবায়ন হবে বলা যাচ্ছে না। প্রকল্প অনুমোদন হলে বলা যাবে।”

তার ভাষ্য, “অনেক জায়গায় দুর্ঘটনা হয়, সেগুলো শুধুই গ্যাসের লাইন পুরোনো বা লিকেজের কারণে হচ্ছে এমন নয়।

“লিকেজ থাকলেও দুর্ঘটনায় বেশি লোক মারা যাবে না। কারণ সেখানে বাতাস থাকে, সেখানে বিস্ফোরণ হয় না। বিস্ফোরণ হয় বাসায়, এখানে বেশিরভাগ সময় অসতর্ক ব্যবহার থেকে হয়।”

 

কোন বছরে কত আগুন, যত ক্ষতি

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অগ্নি দুর্ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করে। গত চার বছরের হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি বছরই লাইনের লিকেজ এবং সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের শতশত ঘটনা ঘটছে।

# ২০২০ সালে গ্যাসের সরবরাহ লাইনের লিকেজ এবং গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে ৯৫৭টি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থেকে ৩২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। গ্যাসের সরবরাহ লাইনের আগুনে ৪০ জন দগ্ধ হন, চার জনের মৃত্যু হয়। সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও আগুনে ৬৭ জন দগ্ধ হন, ছয় জনের মৃত্যু হয়।

# ২০২১ সালে গ্যাস লাইন এবং গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে ৮৯৪টি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে ত্রুটির কারণে ৩৯টি অগ্নিকাণ্ড হয়। গ্যাসের আগুনের কারণে ৮৮ জন দগ্ধ এবং দুইজনের মৃত্যু হয়। গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ এবং বিস্ফোরণের কারণে আগুনে ৭৫ জন আহত হন, মারা যান ৮ জন।

# ২০২২ সালে গ্যাস লাইন এবং সিলিন্ডার লিকেজ ও বিস্ফোরণ থেকে ৭৬৭টি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থেকে ৪৮টি অগ্নিকাণ্ড হয়। গ্যাস লাইনের লিকেজের আগুনে ২১ জন দগ্ধ হন, ৭ জনের মৃত্যু হয়। সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বা লিকেজের আগুনে ৩০ জন আহত হন এবং এক জনের প্রাণ যায়।

# ২০২৩ সালে সারাদেশে গ্যাস লাইন লিকেজের ৬৯৪টি, সিলিন্ডার থেকে ২১০টি এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ত্রুটির কারণে ৮৮টি অগ্নিকাণ্ড হয়। গ্যাস লাইনের আগুনে ৬৭ জন দগ্ধ হন, ২১ জনের প্রাণ যায়। গ্যাসের সিলিন্ডারের আগুনে ২৩ জন দগ্ধ হয়েছিলেন, মৃত্যু হয়েছিল চার জনের।

# ২০২৪ সালে সারাদেশে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে ৫৩৯টি, সিলিন্ডার বিস্ফোরণজনিত ২৯টি, গ্যাসের সরবরাহ লাইনের লিকেজ থেকে ৩৭৯টি এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থেকে ৬১টি আগুনের ঘটনা ঘটে। গ্যাসের সিলিন্ডার লিকেজ থেকে আগুনে আটজন দগ্ধ হন, কেউ মারা যাননি। গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৫৩ জন আহত এবং ৮ জনের মৃত্যু হয়।

 

যা জানা জরুরি

বাসাবাড়িতে গ্যাস থেকে অগ্নি দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু সচেতনামূলক পরামর্শ দিচ্ছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর।

গ্যাসের গন্ধ: গ্যাস লিকেজ হলে গন্ধ বের হয়। সেটা পেলে সাবধান হতে হবে। গ্যাসের গন্ধ নাকে এলে কোনো রকম আগুন বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি না চালিয়ে দরজা-জানালা খুলে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করতে হবে।

লাইনের প্রিপেইড গ্যাসের মিটার চুলা বন্ধ থাকলেও যদি ঘোরে তাহলে বুঝতে হবে লিকেজ হয়েছে।

শব্দ: গ্যাস লিকেজ হলে চুলা বা সিলিন্ডার থেকে শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বাতাস চলাচল: যেখানে গ্যাসের চুলা বা সিলিন্ডার রয়েছে সেই জায়গায় বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। রান্নার সময় রান্নাঘরের জানালা খোলা রাখতে হবে।

সিলিন্ডার সংরক্ষণ: গ্যাস সিলিন্ডার সমতল জায়গায় রাখতে হবে। এটিকে শুইয়ে রাখা যাবে না। ভরা সিলিন্ডার গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। গ্যাসের চুলা থেকে সিলিন্ডার দূরে রাখতে হবে। চুলার অবস্থান সিলিন্ডারের চেয়ে ওপরে থাকবে। সিলিন্ডারের সেইফটি ক্যাপ লাগিয়ে রাখতে হবে।

পাইপ, নব ও রেগুলেটর পরীক্ষা: গ্যাসের সিলিন্ডারে সাধারণত বিস্ফোরণ বা লিকেজ হয় না। সিলিন্ডারের ভাল্ব বা ‘ও রিং’ ত্রুটিপূর্ণ হলে মুখ থেকে গ্যাস বের হতে পারে। এছাড়া সিলিন্ডারের রেগুলেটর ও চুলার নব ত্রুটিপূর্ণ হলে গ্যাস বের হতে পারে। হোস পাইপেও লিকেজ থাকতে পারে।

বছরে অন্তত একবার গ্যাসের চুলার সরঞ্জামগুলো পেশাদার লোককে দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। সাবান-পানি ছিটিয়ে লিকেজ শনাক্ত করা সম্ভব।

সাধারণ সতর্কতা: প্রতিবার রান্নার পর মনে করে চুলা বন্ধ করতে হবে। রান্নাঘরের জানালা খোলা রাখতে হবে এবং প্রতিবার চুলা জ্বালানোর আগে গন্ধ বা শব্দের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

Sharing is caring!