প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

শিক্ষাঙ্গনে আবার অস্থিরতা

editor
প্রকাশিত মে ১৯, ২০২৫, ০৯:২৬ পূর্বাহ্ণ
শিক্ষাঙ্গনে আবার অস্থিরতা

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা কাটছে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক স্বার্থেও অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে কোথাও কোথাও। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের চেয়ে আন্দোলন-কর্মসূচিতে বেশি মনোযোগী। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের আলাপ হলেও তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রকাশ করা হয়নি। ফলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়েও মতানৈক্য দেখা দিয়েছে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজচিন্তক বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘বহু বছর ধরে নানা রকমভাবে নিয়মনীতির বাইরে কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়ার কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। যার ফলে যারা ন্যায় অনুযায়ী কাজ করতে চায় তাদের ওপর অনেকে অসন্তুষ্ট। ফলে ছাত্র-শিক্ষকরা আন্দোলন করেন। এই অবস্থাটা অস্বাভাবিক। একটার পর একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব ঘটনা ঘটছে। ফলে সরকার সেসব বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় পরিবর্তন আনছে। মবের মাধ্যমে আন্দোলন হলে তখন চাপে পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এসবের ফলে এক খারাপ থেকে অন্য খারাপের দিকে যাচ্ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষাঙ্গনে ঘটনা তো ঘটছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সবকিছু এগোচ্ছে। আমরা যারা শিক্ষক, আমাদের দায়িত্ব অনেক। আমরা যদি ভালো করে পড়াই, শ্রেণি কার্যক্রমে নিয়মিত থাকি, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বাস্তবতা হলো- পলিটিক্যাল সরকার না আসা পর্যন্ত এ অবস্থা থাকবে। একটা উদ্বেগ থাকবে। অনেকে মনে করে, সবকিছু এখনই করে নেওয়ার সময়।’

তিনি বলেন, এ কারণে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া দরকার। মানুষের একটা ম্যান্ডেট থাকে। এই সরকারেরও ম্যান্ডেট নেই, তা না। এই সরকার তো মানুষের সমর্থন নিয়ে আসছে। কিন্তু দেখভালের লোকসংখ্যা কম। অনেকের দুটি মন্ত্রণালয় একসঙ্গে দেখতে হচ্ছে। তখন সঠিক মনোযোগ দিয়ে কাজ করা যায় না। অনেকেই সুযোগ পেলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়। এসব থেকে বের হওয়ার সহজ পথ হচ্ছে দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাওয়া।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আল সাম্যের হত্যার ঘটনায় ক্যাম্পাসে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি করছে ছাত্রদল। সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন ও শোক দিবস ঘোষণা করে। ছাত্রদল শোক কর্মসূচি পালনের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা লাগায়। পরে কর্মসূচি পালনকালে ক্যাম্পাসে ঢাকা মহানগরের নেতা-কর্মীদের জমায়েত করে, যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ সমালোচনা মুখর হন। ঢাবির ছাত্র নয়, এমন লোকজনের উপাচার্যের পদত্যাগ চাওয়া নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন তারা। অনেকে ডাকসু নির্বাচন পেছানোর জন্য চক্রান্ত চলছে বলেও মন্তব্য করেন। উপাচার্য, প্রক্টরের পক্ষে-বিপক্ষেও নানা মতামত আসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। এ ছাড়া জুলাই আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ।

 

একই সঙ্গে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ইস্যুও প্রকট হয়েছে। শৃঙ্খলা ছাড়াই ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে চলছে যানবাহন। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে যান চলাচল সীমিত করা হলে তা নিয়ে একটি পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে। পরে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সাম্য হত্যার পর আবারও ক্যাম্পাসে যান চলাচল সীমিত করার দাবি উঠেছে।

 

আবাসিক হল না থাকায় শিক্ষার্থীদের আবাসন বৃত্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ইস্যুতে আন্দোলনে নামেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের টানা কর্মসূচির কারণে অন্তর্বর্তী সরকার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। তাদের দাবি মেনে নেওয়ায় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, যেখানে আবাসিক হল নেই তারাও আবাসন বৃত্তির জন্য দাবি জানানোর পরিকল্পনা করছে বলে জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ৫ আগস্টের পর থেকে কয়েক দফায় আন্দোলনে নামেন। একই ধরনের দাবিতে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও। বিভিন্ন সময়ে তারা আলটিমেটাম দিয়েছেন।

 

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলা নিয়ে উত্তাল ছিল অনেক দিন। যার কারণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণ করা হয়। নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। উপাচার্যের পক্ষ নেওয়া শিক্ষক সমিতি এখনো কর্মবিরতি পালন করছে। নিয়োগ পাওয়ার পর একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শারমিনের বিরুদ্ধে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রশাসনের শীর্ষ তিনজনকেই সরিয়ে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

ছয় দফা দাবিতে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সারা দেশে কর্মসূচি পালন করে। দাবি আদায়ে তারা এখনো নানা কর্মসূচি পালন করছে। অস্থিরতা চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্যসহ প্রশাসনের অনেকেই পদত্যাগ করেন। বিষয়টির এখনো সমাধান হয়নি।

 

শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সবাই মিলে ভালোভাবে কাজ করতে হবে জানিয়ে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে এক রকম না, বিভিন্ন রকম অনাচার হয়েছে। এখন নির্দলীয় সরকার, সমাজের সমস্যাগুলো ঠিকমতো ধরতে পারছে না। রাজনৈতিক নেতারা যদি উন্নত চরিত্রের হন, তাহলে তারা সমস্যা দ্রুত ধরতে পারেন এবং সহজে সমাধান করতে পারেন। অরাজনৈতিকরা সেটা সহজে পারেন না। অনির্বাচিত সরকারের দ্বারা একটা জাতি সাময়িকভাবে ভালোর দিকে গেলেও দীর্ঘমেয়াদে ভালো করা কঠিন। অল্পদিনের মধ্যে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। দেশে যদি ভালো নির্বাচন হয়, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। ভালোর দিকে যেতে হলে অবশ্যই ভালো রাজনৈতিক দল দরকার। উন্নত রাজনীতির চর্চা না করলে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এদের দিয়ে হবে না। যদি তারা ভালো চরিত্র নিয়ে দল আনে, তাহলে অবশ্যই ভালো করতে পারে।

Sharing is caring!