প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

জনশক্তি রপ্তানিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

editor
প্রকাশিত মে ২১, ২০২৫, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ
জনশক্তি রপ্তানিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় বাংলাদেশি কর্মীদের বিদেশমুখী প্রবণতা ও ঝুঁকি দুটিই বেড়েছে। দক্ষতার অভাবে উন্নত দেশগুলোতে অভিবাসনের সুযোগ কম থাকায় এসব কর্মীদের এখন প্রধান গন্তব্য হয়ে উঠেছে সৌদি আরব।

 

বাংলাদেশ বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মোট বিদেশ যাওয়া কর্মীর ৭৩ ভাগ গিয়েছেন সৌদি আরবে। শুধু সৌদিনির্ভর শ্রমবাজার বেশিদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকরা।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশ যাওয়া ৩ লাখ ১৫ হাজার কর্মীর মধ্যে সৌদি আরবেই গিয়েছেন ২ লাখ ৩০ হাজার। জানুয়ারিতে ৯৮ হাজার কর্মী বিদেশে গিয়েছেন। এর মধ্যে ৭৭ হাজারই গেছেন সৌদি আরবে। ফেব্রুয়ারিতে মোট ৬২ হাজারের মধ্যে সৌদিতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪৪ হাজারের, মার্চে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫ হাজার কর্মী বিদেশে গিয়েছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবে গিয়েছেন ৮১ হাজার। এ ছাড়া এপ্রিলে মোট ৫০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে গিয়েছেন, এর মধ্যে সৌদি আরবে চাকরি হয়েছে ২৯ হাজার কর্মীর।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মতে, সৌদি আরবের পর বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় শ্রমবাজারের মধ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া। কিন্তু এক বছর ধরে এই দুটি শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য বন্ধ রয়েছে। সৌদি আরবের তুলনায় এই দুটি শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের বেতন অনেকটা বেশি। কিন্তু বাজার দুটি বন্ধ থাকায় এখন অনেকটা বাধ্য হয়ে সৌদি আরবে কম বেতনে বাংলাদেশি কর্মীদের যেতে হচ্ছে।

সৌদি আরবের বিকল্প কোনো বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় এই শ্রমবাজারের মধ্যেই ঘুরপাক খেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তবে সৌদি আরবেও বাংলাদেশের মতো আধা-দক্ষ কর্মীর চাহিদার একটি সীমাবদ্ধতা আছে। এই চাহিদা কমে এলে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ কোনো একটি দেশের ওপর নির্ভর করলে যেকোনো সময় এই খাতে বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাই বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য নতুন শ্রমবাজার জরুরি হয়ে পড়েছে।

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মী তৈরি না হওয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে না। উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির উদ্যোগও তেমন চোখে পড়ে না। এ ছাড়া বাংলাদেশি কর্মীদের প্রতি একটি নেতিবাচক ধারণা থাকায় উন্নত দেশগুলো এ ব্যাপারে আগ্রহও দেখায় না। বাংলাদেশ থেকে যেসব কর্মী উন্নত দেশগুলোতে গিয়েছেন, সেখানে কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষে তারা ফিরে আসতে চান না।

বাংলাদেশি কর্মীরা চুক্তির মেয়াদ শেষে এক কোম্পানি ছেড়ে অন্য কোম্পানিতে চলে যান। এতে যে কোম্পানি কর্মী নিয়োগ দেয়, তারা সে দেশের সরকারি নানা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে। অথচ ইউরোপের অনেক দেশেই কৃষি বা অন্য খাতে আধা-দক্ষ কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তারা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে প্রতিবছর সিজনাল কর্মী নিয়ে যায়। কিন্তু কর্মীরা সেখানে গিয়ে চুক্তির মেয়াদ শেষে ফিরে না আসায় সেই শ্রমবাজারটি হারাতে হয়। পূর্ব-ইউরোপের দেশ রোমানিয়াতেও বাংলাদেশের শ্রমবাজার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু দেশটির চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির ভিসায় গিয়ে বাংলাদেশি কর্মীদের একটি বড় অংশ ইতালি বা ইউরোপের অন্য দেশে চলে যান। এতে এই শ্রমবাজারটিও বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে যায়। একই কারণে এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়া সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া সীমিত করেছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইউরোপের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সুযোগ ছিল। কিন্তু ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বা অন্য অবৈধ উপায়ে যেসব বাংলাদেশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঢুকেছে, তাদের নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছে মহাদেশটির দেশগুলো। বিশেষ করে, ইতালি রয়েছে সবচেয়ে বেশি সমস্যায়। তাই সেই দেশটিসহ ইউরোপের দেশগুলো এসব অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশকে বিভিন্ন সময় চাপ দিচ্ছে। এর মধ্যে ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, মাল্টা, গ্রিস, অস্ট্রিয়াসহ অন্য আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে।

সূত্র জানায়, ইউরোপের সব দেশেই কমবেশি বাংলাদেশিরা কর্মরত আছেন। বৈধ ও অবৈধ মিলে শুধু ইতালিতে আছেন আড়াই লাখ বাংলাদেশি, ফ্রান্সে আছে এক লাখ, স্পেনে ৬০ হাজার, গ্রিসে ৪০ হাজার, জার্মানিতে ২৫ হাজার এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। যুক্তরাজ্যও সে দেশে বসবাসকারী অবৈধদের ফিরিয়ে নিতে বারবার বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে।

Sharing is caring!