
প্রজন্ম ডেস্ক:
গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই সারা দেশের প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী সরকারের দোসর, সুবিধাভোগী, সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, প্রশাসনকে দলীয়করণসহ এমন নানা অভিযোগে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে।
এতে একদিকে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের অভ্যন্তরে শুরু হয় অস্থিরতা। কর্মকর্তাদের মাঝে চলে আসে অনিশ্চয়তা, ভীতি ও আতঙ্ক।
এদিকে আওয়ামী সরকারের আমলে পদোন্নতিবঞ্চিত ও বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের দাবি আদায়ে শুরু করেন আন্দোলন। চলে মিটিং-মিছিল।
পাশাপাশি সচিবালয়ের বাইরে আনসার বাহিনীর সদস্যদের চাকরিতে নিয়মিতকরণ, ৪৩ বিসিএস থেকে বাদ পড়া চাকরিপ্রার্থীদের চাকরির দাবি, অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অটোপাসের দাবিতে আন্দোলন চলতে থাকে। একই সময় প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিতে প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে পুলিশের এসআই পদে যোগ দিতে না পারায় সচিবালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা শুরু হয়। এভাবে নানা দল, নানা গোষ্ঠীর দাবিতে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয় সচিবালয়ের ভেতরে-বাইরে।
চলমান এমন নানা দাবি, কর্মসূচি ও আন্দোলনের মাঝেই সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে আজ রবিবার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।
গতকাল শনিবার এ-সংক্রান্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে ফোরামের সব সদস্যকে এই অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ও প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তারা একাধিকবার ঐক্য ফোরামের দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তব কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ছাত্র-জনতা, জুলাই ঐক্যসহ বিভিন্ন সংগঠন দিনের পর দিন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসরমুক্ত জনপ্রশাসন গড়ার দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম তাদের এসব দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে ছাত্র-জনতা ও জুলাই ঐক্য এর সঙ্গে আন্দোলন করছে। তারা সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আওয়ামী লীগের দোসর ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি জানিয়েছে।
কিন্তু দীর্ঘদিনেও ফোরামের এসব দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।
এদিকে নতুন করে আবার অস্থিরতা ফিরে আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা।
তারা বলছেন, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সচিবালয়ের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। অন্য ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রতি প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের বৈরী মনোভাব অস্থিরতার নতুন এক ক্ষেত্র তৈরি করছে। ফলে প্রশাসনের একপেশে সিদ্ধান্তের ফলে আন্দোলনে রয়েছেন এই অন্য ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারাও। এরই মধ্যে অন্য ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় তারা মানববন্ধন, নিজ নিজ দপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি, কলমবিরতির মতো কর্মসূচি পালন করেছেন। আরও কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন তারা।
এসব অস্থিরতা শেষ হতে না হতেই ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধন সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে ক্ষুব্ধ সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের অভিযোগ, অধ্যাদেশের খসড়ায় শৃঙ্খলা বিঘ্নিত, কর্তব্য সম্পাদনে বাধা, ছুটি ছাড়া কাজে অনুপস্থিত, কর্তব্য পালন না করতে উসকানির জন্য কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরিচ্যুতির বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২২ মে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাদেশের এ খসড়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এরই মধ্যে গতকাল শনিবার বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম তার সদস্যদের নিয়ে সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশের বিরোধিতা নিয়ে দেখা করেছে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিবের সঙ্গে। পরে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে দেখা করে অধ্যাদেশের নিবর্তনমূলক ধারা (এমন আইন বা ধারা যা সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা, অধিকার ও মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত করে) বাতিলের অনুরোধ জানান।
Sharing is caring!