প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মৌলভীবাজারে ‘চার খলিফা’র খোঁজ নেই

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২৬, ২০২৪, ০৫:১৮ পূর্বাহ্ণ
মৌলভীবাজারে ‘চার খলিফা’র খোঁজ নেই

Manual4 Ad Code

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা:
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর গ্রেফতার আতঙ্কে দিন কাটছে মৌলভীবাজারের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের। এরইমধ্যে কিছু নেতাকর্মী সিলেট, জুড়ী ও কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি দিয়েছেন। পালিয়ে যাওয়ারা ভারতের গৌহাটি, শিলং, ডাউকি, জোয়াইসহ কয়েকটি এলাকায় বসবাস করছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

অনেকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা কানাডায় অবস্থান করা স্বজনদের কাছে চলে গেছেন। তবে দেশ ছেড়ে পালাতে গিয়ে বিমানবন্দরে আটকাও পড়েছেন কিছু নেতা। গত ২৯ আগস্ট সালেহ আহমদ জুয়েল ও জালাল আহমদ সৌদি আরব যাওয়ার পথে ওসমানী বিমান বন্দরে আটক হন। সালেহ আহমদ সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের ভাগনে ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। জালাল আহমদ বড়লেখা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, একসময় জেলা দাপিয়ে বেড়ানো আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাধারণ কর্মীরাও গ্রেফতার ও জনরোষ এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন। অনেকে সীমান্ত দিয়ে দেশত্যাগের চেষ্টায় আছেন।

বিগত সরকারের আমলে মৌলভীবাজার জেলার সর্বত্রই ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের দাপট। তারা ছিলেন সব কিছুর হর্তাকর্তা। নেছার আহমদ, মিছবাহুর রহমান, ফজলুর রহমান ও কামাল হোসেনকে ডাকা হতো ‘চার খলিফা’। এই খ্যাতির নেতাদের এখন সন্ধান নেই।

Manual7 Ad Code

মৌলভীবাজারে জেলার চারটি সংসদীয় আসনের এমপি ছিলেন সদ্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদ, সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ, শিল্পপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসীন, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন। এদের মধ্যে সুলতান মনসুর ছাড়া আর কেউই গ্রেফতার হননি। দুই নারী নেত্রী সায়রা মহসীন ও সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন ছাড়া সবাই নাশকতা ও সহিংসতা মামলার আসামি।

Manual4 Ad Code

মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন কামাল হোসেন, বড়লেখা পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান, জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান, কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলার চেয়ারম্যান—এদের কেউই এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার পতনের পর থেকে জেলার ভিন্ন থানা ও আদালতে ২০টির বেশি মামলা হয়েছে। মামলার বিষয়টি এখনো চলমান। এসব মামলায় সাবেক সরকারের মন্ত্রী, এমপি, পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও কর্মী এবং আওয়ামী লীগকে মদদ দেওয়া ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের আসামি করা হচ্ছে।

Manual7 Ad Code

জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার সাবেক এমপিরা দেশেই আত্মগোপনে আছেন। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন দূরের স্বজনের বাড়ি কিংবা নিরাপদ গোপন স্থানে। বাকি নেতাদের মধ্যে ব্রটিশ নাগরিক হওয়ায় লন্ডনে গেছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক তরফদান ভিপি সুয়েব। যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছেন যুবলীগের সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান সুমন, ছাত্র আন্দোলনের আগ থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল।

তবে মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ফজলুর রহমান ভারতে ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল হোসেন দেশেই বসুন্ধরা এলাকায় অবস্থান করছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের একজন কর্মী বলেন, ‘আমরা শুধু রাজনীতি করেই গেছি। কোনোসময় ভাবিনি যে সরকারের পতন হবে। পাসপোর্টটাও বানাইনি, নয়তো বিদেশে চলে যেতাম। এখন আতঙ্কে দিন কাটছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে নেতাদের জন্য এতকিছু করলাম তারা এখন কোনো খবর রাখে না। জীবনে আর রাজনীতি করবো না।’

Manual3 Ad Code

ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রবাসে অবস্থান করা জেলা আওয়ামী লীগের একজন সদস্য বলেন, “স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া এই দলকে ধ্বংস করেছেন হাইব্রিড নেতারা। এসব নেতারা মৌলভীবাজারে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও জমি দখল নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তারা দলকে সাংগঠনিকভাবে গঠন করতে চাইতেন না। মৌলভীবাজারের চার খলিফাসহ সব আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করে বিচার করা দরকার। আমাদের মতো ত্যাগী নেতাদের তারা কোনো মূল্যায়ন করেননি, বরং বঞ্চিত করেছেন।”

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code