প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আফগানিস্তানে বোরকা না পরলে নারীদের চিকিৎসা নয়, ফের বিতর্কিত নির্দেশ

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ
আফগানিস্তানে বোরকা না পরলে নারীদের চিকিৎসা নয়, ফের বিতর্কিত নির্দেশ

Manual4 Ad Code

নিউজ ডেস্ক:
আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রবেশের জন্য নারী রোগী, সেবিকা ও কর্মীদের জন্য বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করেছে তালেবান প্রশাসন। আন্তর্জাতিক চিকিৎসাসেবা সংস্থা মেদসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ের (এমএসএফ) জানিয়েছে, ৫ নভেম্বর থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে।

সংস্থাটির আফগানিস্তান কর্মসূচির ব্যবস্থাপক সারা শাতো বিবিসিকে বলেন, ‘এই বিধিনিষেধ নারীদের জীবনে আরও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে এবং তাদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ সীমিত করছে।’ তিনি জানান, এমনকি যেসব নারী জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনেও এসেছেন, তাদেরও প্রভাবিত করা হয়েছে।

Manual4 Ad Code

তবে তালেবান সরকারের এক মুখপাত্র এমএসএফের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার পর কিছু এলাকায় বিধিনিষেধ আংশিক শিথিল করা হয়েছে।

এমএসএফ জানায়, হেরাত আঞ্চলিক হাসপাতালের শিশু বিভাগে সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাটি নতুন বিধিনিষেধ কার্যকর হওয়ার পর প্রথম কয়েক দিনে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন এমন নারী রোগীর ভর্তি ২৮ শতাংশ কমে গেছে। সারা শাতো বলেন, তালেবান সদস্যরা হাসপাতালের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে বোরকা না পরা নারীদের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। বোরকা একটি একখণ্ড পোশাক, যা পুরো মুখ ও শরীর ঢেকে দেয়, শুধু চোখের সামনে জালযুক্ত ফাঁকা থাকে।

তালেবান সরকারের ‘গুণ প্রচার ও অপকার প্রতিরোধ মন্ত্রণালয়’-এর মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম খায়বার বলেন, ‘এই খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের অবস্থান সাধারণভাবে হিজাব পরিধান নিয়ে।’ তিনি দাবি করেন, নারীদের বোরকা না পরলে চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে—এমন অভিযোগও সঠিক নয়।

তালেবান কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হিজাবের ব্যাখ্যা ভিন্নভাবে করা হয়, যা অনেক সময় শরিয়াহ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

Manual7 Ad Code

মানবাধিকারকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে তালেবান প্রহরীরা হাসপাতাল, স্কুল ও সরকারি দপ্তরে প্রবেশের ক্ষেত্রে নারীদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করছে। হেরাত প্রদেশের এক নারী অধিকারকর্মী বিবিসিকে জানান, এখন যে কেউ সরকারি ভবনে বা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশ করতে চাইলে বোরকা পরতে হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তালেবানের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। এক আফগান কর্মী প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যেখানে কয়েকজন নারীকে বোরকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়। তবে বিবিসি ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

১৯৯০-এর দশকে প্রথম ক্ষমতায় থাকাকালেও নারীদের জন্য বোরকা বাধ্যতামূলক করেছিল তালেবান। ২০২১ সালের আগস্টে পুনরায় ক্ষমতা দখলের পর তারা শরিয়াহ আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নারীদের ওপর একের পর এক বিধিনিষেধ জারি করেছে।

Manual6 Ad Code

২০২২ সালে তালেবান সরকার এক ডিক্রিতে নারীদের জনসমক্ষে মুখসহ পুরো শরীর ঢেকে রাখার নির্দেশ দেয়। তখনও তারা এটিকে ‘পরামর্শ’ হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। সারা শাতো বলেন, ‘আগেও বোরকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এবারই প্রথম আমরা হেরাতে বাস্তব প্রয়োগ দেখছি। গত কয়েক দিনে আরও বেশি নারীকে বোরকা পরে হাসপাতালে আসতে দেখা যাচ্ছে।’

তালেবান সরকার নারীদের অধিকাংশ কর্মক্ষেত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করেছে, মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষা বন্ধ রেখেছে। জাতিসংঘ একে বারবার ‘লিঙ্গবৈষম্যমূলক শাসন’ বা ‘জেন্ডার অ্যাপারথাইড’ বলে অভিহিত করে এর অবসান দাবি করেছে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ জানিয়েছে, আফগানিস্তান ও ইরানের সীমান্তবর্তী ইসলাম কালা চৌকিতে নারী কর্মীদের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে তারা সেখানে কার্যক্রম স্থগিত করেছে। হেরাত প্রদেশের এই সীমান্তপথ দিয়েই গত এক বছরে ইরান থেকে শত-সহস্র আফগান নাগরিক দেশে ফিরেছেন।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code