প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

জাতীয় ঐক্য কত দূর

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ১৭, ২০২৪, ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ
জাতীয় ঐক্য কত দূর

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিল রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্ন। সঙ্গত কারণেই অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব নিয়েই ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ বিষয়টির ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে দেখা গেছে।

Manual6 Ad Code

 

সরকারের এক মাসের মাথায় সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও জনপ্রশাসন সংস্কারে ছয়টি আলাদা কমিশন গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এই তালিকায় যুক্ত করা হয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। রাষ্ট্র সংস্কারে কমিশন গঠনকে সবাই ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে সাধুবাদ জানালেও সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য হয়নি।

 

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পার হওয়ার পর কতদিন ক্ষমতায় থেকে তারা কী প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র সংস্কার করতে চায়, সেটি স্পষ্ট করা হয়নি। সংবিধান বাতিল কিংবা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে রাজনৈতিকভাবে বিরোধিতার মুখে পড়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য থেকেও কেউ কেউ সংস্কার প্রক্রিয়ায় ধীরগতির অভিযোগ তুলেছে। অনেক সংস্কার কমিশন এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল দ্রুত সংস্কার শেষ ও নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি তুলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার পতনের পর মানুষ দ্রুত কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখার অপেক্ষায় ছিল, কিন্তু সরকার তাদের সেই আকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

 

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রতিবার রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে দেখা গেছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। গত ২৫ আগস্ট ভাষণে তিনি বলেছিলেন, জনস্বার্থের বিপরীতমুখী এক কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে হয়েছে। আমরা এখান থেকেই বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন এ দেশে জনগণই সত্যিকার অর্থে সব ক্ষমতার উৎস হয়। সেদিনে ভাষণে তিনি আরও বলেন, তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী ও জনতার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে সফল আমাদের হতেই হবে। এর আর কোনো বিকল্প নেই।

 

অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুতে সাধারণ মানুষকে সমর্থন দিতে যেমন দেখা গিয়েছিল, তেমন প্রত্যাশাও ছিল বিপুল। কিন্তু সরকারের নানা বিষয় নিয়েই সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। সংবিধান সংশোধনের মতো একটি বিষয়ে বর্তমান সরকারের ম্যান্ডেট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কেউ কেউ। ফলে জাতীয় ঐক্যের সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

Manual6 Ad Code

 

‘এক দফা ঘোষণার দিনই সংবিধান বাতিল হয়ে গেছে’ এবং ‘সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ এই সরকারই বাস্তবায়ন করবে,’ উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এমন বক্তব্য দেওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বলছে, সংবিধান সংশোধন করা কিংবা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের এখতিয়ার ও ম্যান্ডেট একমাত্র জাতীয় সংসদের। এমনকি উভয় দলই মনে করে সংবিধান সংশোধন হবে নাকি নতুন করে লেখা হবে সেটিও শুধু সংসদের এখতিয়ার।

Manual6 Ad Code

 

অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সংবিধান সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে সংস্কার প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করার জন্য কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি আলী রীয়াজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জনগণ, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি ও আন্দোলনে প্রাণ দেওয়া মানুষের পক্ষের বক্তব্য শুনে তারা ঠিক করবেন সংবিধানের কোন কোন দিকে তারা দৃষ্টি দেবেন। সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, শিক্ষার্থীদের যা দাবি ছিল তা পূরণ হয়েছে। সংস্কারের ম্যান্ডেট তাদের ছিল না।

 

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ প্রণয়ন করবে তার ভিত্তিতে নতুন সংসদে সংবিধান সংশোধন করা হবে-এমন একটি ঐকমত্য নির্বাচনের আগে হতে পারে। আর জামায়াতে ইসলামী বলছে, সরকার সংবিধানের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারে না, এমনকি সংবিধান সংশোধন নাকি পুনর্লিখন হবে সেটিও ঠিক করবে নির্বাচিত সংসদ।

 

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সামনে আরও অনেক ইস্যু আছে। সেগুলো সমাধান করলে জাতি আরও বেশি উপকৃত হবে। মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। অনেক সংস্কার কমিশন এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি। এর মধ্যে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন একটি। জানা গেছে, কমিশন গঠন করা হলেও দফতর কিংবা লোকবল এখনও পায়নি।

 

 

Manual1 Ad Code

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সরকার গঠন থেকে শুরু করে দেশ পরিচালনার বিভিন্ন বিষয়ে সক্রিয় থেকেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সে সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের কাছ থেকে সমর্থনও পেয়েছে তারা। সংবিধান ও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে রাজনৈতিকভাবে বিরোধিতার মুখে পড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলার দিন আন্দোলনের দুই নেতার ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) দলভুক্ত করা নিয়েও আপত্তি ওঠে। বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনের নেতাদের নানা বক্তব্য এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে যে, আন্দোলনের নেতারা কতটা সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন? সরকারের ১০০ দিনে এসে দেখা যাচ্ছে ছাত্রদের নানা সিদ্ধান্ত, বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

 

 

পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতি ভবন ঘেরাও করলে সেটির সমালোচনা হয়েছে। পরবর্তীকালে বিশেষত বিএনপি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়, এমন কোনো বিষয়ে দলটি সমর্থন জানাবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা করলেও এসব ইস্যুতে কোনো ঐকমত্য তৈরি হয়নি। বরং বিএনপি প্রকাশ্যে বিরোধিতা করার পর অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলকেও কম-বেশি কৌশলী অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এসব দাবির পেছনে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার মতো ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না রাজনৈতিক মহলে এমন আলোচনাও উঠেছে।

 

 

ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসপূর্তিতে নিজেদের বিভিন্ন কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেখানে মোটাদাগে পাঁচটি ক্ষেত্রে নিজেদের অর্জনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সরকার মনে করে যে, ক্ষমতায় বসার প্রথম তিন মাসে তারা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণভাবে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। একইভাবে দেশের ভঙ্গুর অবস্থা থেকে অর্থনীতি বেশ খানিকটা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। এর বাইরে সংস্কার কাজ পরিচালনায় ব্যাপকভাবে বিদেশি আর্থিক সহায়তা পাওয়া, সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা এবং বন্যা মোকাবিলার পাশাপাশি তৈরি পোশাক শিল্পের সংকট ও অস্থিরতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

 

 

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, সরকার কী প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র সংস্কার করতে চায়, সেটি স্পষ্ট করা প্রয়োজন। এতে সরকারের সংস্কার কাজেও গতি আসবে। শেখ হাসিনার পতনের পর মানুষ দ্রুত কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখার অপেক্ষায় ছিল, কিন্তু সরকার তাদের সেই আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারেনি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code