প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

প্রস্তাবিত পোশাক নিয়ে ক্ষুব্ধ পুলিশ

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ
প্রস্তাবিত পোশাক নিয়ে ক্ষুব্ধ পুলিশ

Manual8 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকারি বাহিনী পুলিশের কোনো পর্যায়ের সদস্যই তাদের জন্য প্রস্তাবিত পোশাককে ইতিবাচকভাবে নেননি। প্রস্তাবিত পোশাক নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তারা বলছেন, গত সোমবার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে গোপন ভোটের মাধ্যমে পুলিশের পোশাকের জন্য যে লোহার রং (আয়রন) নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই নয় এবং এই ধরনের রঙের পোশাকে ডাস্ট বা ময়লা বেশি জমে। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এমন মনোভাব জানা গেছে।

Manual1 Ad Code

অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশ সদস্যদের মানসিকতা ও কার্যকলাপ যদি পরিবর্তন না হয়, সেক্ষেত্রে পোশাক পরিবর্তন করে লাভ হবে না। আগেও অনেকবার পোশাক পরিবর্তন হয়েছে; কিন্তু পুলিশের চরিত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। পোশাক পরিবর্তনের আগে পুলিশের মনোভাব পরিবর্তন জরুরি।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে তাদের দমাতে পুলিশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ এবং অপেশাদার আচরণের অভিযোগ ওঠে। সেই আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে, তার মধ্যে পুলিশ বাহিনী সংস্কারের জন্য পুলিশ সংস্কার কমিশনও রয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের পোশাকে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনার কথাও জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে গোপন ভোটের মাধ্যমে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর পোশাকের রং ঠিক করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুলিশের পরিবর্তিত পোশাক হবে লোহার (আয়রন) রঙের, র‌্যাবের পোশাক হবে জলপাই (অলিভ) রঙের, আর আনসারের পোশাক হবে সোনালি গম (গোল্ডেন হুইট) রঙের।

একজন পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমি পুলিশ বাহিনীর যতজনের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের কারোরই এই রং পছন্দ হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে পোশাক নির্ধারণ করে চাপিয়ে দিলে ভিন্ন কথা। আমরা যেহেতু সরকারি চাকরি করি আমরা সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য। কিন্তু কীসের ভিত্তিতে এই রং নির্ধারণ হলো, সেটা বোধগম্য নয়। তা ছাড়া কী ধরনের সুতা দিয়ে এই কাপড় তৈরি হবে, সেটাও আমরা জানি না। এই পোশাক কারা পরবে, সেটাও এখনো নির্ধারণ হয়নি। একই ধরনের পোশাক পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) জন্য নির্ধারিত হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের পোশাক কী হবে, কোন রেঞ্জের পোশাকের রং কী হবে, সদর দপ্তর, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) পোশাক কী হবে, সেটা নির্ধারণ হয়নি। সবমিলিয়ে একটা হযবরল অবস্থা তৈরি হবে।’

ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জানান, ‘এই রং আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই নয়। গ্রীষ্মের গরমে এই রঙের পোশাক পরা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। পুলিশের পোশাক পরে অনেক সময় টানা ১২ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই দীর্ঘ সময় এই রঙের পোশাক পরা যাবে কি না বা এই রং কত দিন টেকসই হবে ইত্যাদির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আছে কি না—এসব দিক বিবেচনায় না নিয়ে গোপন ভোটে একটি পোশাক নির্ধারণ করে দিলেই হয়ে যায় না। এ বিষয়ে আরও যথেষ্ট কাজ করা জরুরি।’ তিনি বলেন, এখই পুলিশের পোশাক পরিবর্তন হয়ে যায়নি। এর পেছনে আরও অনেক বিষয় রয়ে গেছে।

রমনা থানার একজন এসআইয়ের কাছে প্রস্তাবিত পোশাক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই রং আমার মোটেও পছন্দ হয়নি।’ একই কথা বলেন আরও কয়েকজন এসআই ও কনস্টেবল।

জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকেই বাংলাদেশ পুলিশের পোশাক পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা চলছিল। ২০২১ সালের শুরুর দিকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য বেশ কয়েকটি পোশাকের ট্রায়ালও হয়। তার পরও নানা কারণে নতুন রঙের পোশাক পায়নি পুলিশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক দুইভাবে নির্ধারণ করা হয়। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা ও আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে। যেমন শীতপ্রধান দেশগুলোর পুলিশের পোশাকের রং হয় কালো। সেখানে তাপমাত্রা ধরে রাখার একটা বিষয় পোশাকে যুক্ত থাকে। গরম বা নাতিশীতষ্ণ দেশগুলোতে পুলিশের পোশাক সাদা, খয়েরি বা হালকা রঙের দেখা যায়। এসব রং কম তাপ শোষণ করে কম। ভারত বা এই অঞ্চলে পোশাকের রং খাকি হওয়ার কারণ ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিহাস। ব্রিটিশ পুলিশ হাফপ্যান্ট এবং সাদা রং নির্বাচন করেছিল। কারণ এই রংটি সূর্যের তাপ প্রতিফলিত করে গরম থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে তারা হাফপ্যান্ট পরত। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক আগেই তা বদলে গেছে।

Manual6 Ad Code

এদিকে পুলিশের স্বভাব পরিবর্তন না করে পোশাক পরিবর্তন করে কোনো লাভ হবে না বলে মনে করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। পুলিশের জন্য প্রস্তাবিত পোশাক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘স্বভাব, চরিত্র, খাসলত পরিবর্তন না করে পোশাক পরিবর্তনে কোনো লাভ নেই। সমস্যা পোশাকে না, পুরো সিস্টেমে।’

Manual3 Ad Code

পুলিশের নতুন রঙের পোশাকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ১৮ ধরনের পোশাকের ট্রায়াল দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে পাঁচ রঙের পাঁচটি পোশাক নির্ধারণ করা হয়। পরে সেখান থেকে তিনটি পোশাক বাছাই করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেবা সংস্থায় কর্মরত সবার মনমানসিকতা পরিবর্তন করা জরুরি। সেজন্য পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের পোশাক পরিবর্তন করা হচ্ছে।

Manual4 Ad Code

নতুন পোশাকের বিষয়ে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, ‘পোশাকের রং পরিবর্তন করলে বাহিনী পরিবর্তন হয় না। ব্রিটিশ আমলে পুলিশ খাকি পোশাক পরত। খাকি পোশাক এখনো শ্রীলঙ্কান পুলিশ পরে। তাদের দক্ষতা কমে যায়নি। এককথায় পুলিশ বাহিনীর কর্মক্ষমতার সঙ্গে পোশাকের কোনো সম্পর্ক নেই। সেটা ভালো কাপড়ের ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই হলেই হলো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘পোশাক পরিবর্তন কসমেটিকস চেঞ্জ। পুলিশের ট্রেনিং, মানসিকতা, কোড অব কন্ডাক্ট—এগুলো বেসিক ইস্যু। ইউনিফর্ম কোনো ইস্যু হতে পারে না। স্মার্ট ইউনিফর্ম সবসময় স্বাগতম। ইউনিফর্ম মেড ইন বাংলাদেশ হতে হবে। ইউনিফর্ম চেঞ্জ করে কোনো ফোর্সের গুণগত পরিবর্তন হবে না বলে আমি মনে করি না।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code