প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৬ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

বিয়ানীবাজারে প্রসাধনীর বড় বাজার, ভেজাল পণ্যে স্বাস্থ্যঝূঁকি

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ১, ২০২৪, ০৮:৩০ পূর্বাহ্ণ
বিয়ানীবাজারে প্রসাধনীর বড় বাজার, ভেজাল পণ্যে স্বাস্থ্যঝূঁকি

 

স্টাফ রিপোর্টার:

বিয়ানীবাজারে প্রসাধনীর বাজার অনেক বড়। পৌরশহর ছাড়া উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের বাজারগুলোতেও প্রসাধনীর রমরমা ব্যবসা চলছে। এখানকার মানুষের সৌন্দর্য সচেতনতা ও ক্রমক্ষমতা বাড়ায় ক্রমেই বড় হচ্ছে এ বাজার। দেশি-বিদেশি কোম্পানির পুরোনো পণ্যগুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন পণ্য। তবে নকল পন্যের দাপটে ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যঝূঁকি বাড়ছে।

 

জানা যায়, বাজারে নানা নামের দেশি-বিদেশি প্রসাধনীর ছড়াছড়ি। এই ভিড়ে ভেজাল বা নকল এবং মানহীন প্রসাধনীরও অভাব নেই। পাড়ার ছোট দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় বিপণিবিতান- সবখানেই মিলেমিশে আছে আসল-নকল। নকল পণ্যে ক্রেতার আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ত্বকেরও ক্ষতি হচ্ছে। বিয়ানীবাজার পৌরশহরেই কেবল প্রসাধনী পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্টান আছে একশ’র উপরে। পুরো উপজেলা হিসেব করলে এ সংখ্যা ৫শ’ ছাড়িয়ে যাবে। পৌরশহরের অভিজাত একটি মার্কেটের একটি প্রসাধনী প্রতিষ্টান থেকে আয়েশা আক্তার নামে এক নারী একটি ব্র্যান্ডের শ্যাম্পুর বোতল কিনেন। ব্যবহারের কিছুদিন পর তিনি লক্ষ করেন ধীরে ধীরে তার চুল উঠে যাচ্ছে; যা আগে কখনও হয়নি। ভাবনায় পড়ে যান আয়েশা আক্তার। কয়েকজনকে বিষয়টি জানালে তারা শ্যাম্পুর বোতলটি পরখ করে জানান, আয়েশা প্রতারিত। শ্যাম্পুটি আসল নয়। একশ্রেণির ব্যবসায়ী এমন কাজ করে বিশাল অঙ্কের মুনাফা অর্জন করছেন। তাদের কাজই বিখ্যাত ও জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডের পণ্যকে নকল করা।

বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে নকল প্রসাধনী। পৃথিবীর নামকরা ব্র্যান্ডের প্রসাধনী সামগ্রী দোকানে সাজানো রয়েছে। তাদের কাছে যেকোনো ব্র্যান্ডের কসমেটিকস পাওয়া যায়। আসল আমদানিকারকের স্টিকারের মতো হুবহু স্টিকারও লাগানো রয়েছে সব পণ্যের প্যাকেটের গায়ে। রয়েছে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ছাপ। কোহিনূর কেমিক্যালের তিব্বত স্নোর অনুকরণ করে তিবেল, তিব্বেল স্নো তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। কিছুটা উন্নত মানের বোতলে রাখা প্যান্টিন ও হেড অ্যান্ড শোল্ডার শ্যাম্পুর নকল পণ্য, ইউনিলিভারের এক্স বডি স্প্রে, ডুইট, হ্যাভক, ফগসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বডি স্পে্্র, জিলেট ফোম, নকল পন্ডস ফেসওয়াসসহ সব পণ্যের দামই আসলের চেয়ে অর্ধেকেরও কম।

 

ত্বক বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা বলছেন, ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহার ত্বকের জন্য বিপজ্জনক। ত্বকে ঘা-সহ নানা জটিল রোগ হতে পারে। ত্বকের ক্যানসারও হতে পারে।

 

নকল প্রসাধনী সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় পুরান ঢাকার লালবাগ, চকবাজার, বেগমবাজার, মৌলভীবাজার, মোগলটুলী, ইসলামবাগ, ছোট কাটরা, বড় কাটরা এবং বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারের কেরানীগঞ্জ। সাভার, আশুলিয়া এমনকি উত্তরাঞ্চলেও নকল প্রসাধনী তৈরি হচ্ছে। নকল প্রসাধনীর বড় পাইকারি বাজার চকবাজার, বেগমবাজার ও মৌলভীবাজার। এ তিন স্থান থেকেই মূলত রাজধানীসহ সারা দেশে নকল ও ভেজাল প্রসাধনী ছড়িয়ে পড়ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানির পাশাপাশি লাগেজ পার্টির মাধ্যমেও কিছু প্রসাধনী বিদেশ থেকে আসে। সেগুলোর গায়েও বিএসটিআইয়ের নির্দেশিত তথ্যসংবলিত স্টিকার থাকে না। কখনও কখনও স্টিকারও নকল করে ভেজাল পণ্যের মোড়কে সেঁটে দেওয়া হয়। বারকোডও থাকে। এতে তারাও ধোঁকা খান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রসাধনী ব্যবসায়ী বলেন, নামিদামি প্রতিষ্ঠানের প্রসাধনী নকল হচ্ছে। আবার একটি প্রতিষ্ঠান একটি চালানের অনুমোদন নিয়ে কয়েকটি চালান আনছে অনুমোদন ছাড়া। বিভিন্ন সংস্থাকে ‘ম্যানেজ’ করে ব্যবসা চালাচ্ছেন।

 

এক গৃহবধূ মোড়কের গায়ে পাকিস্তানে তৈরি লেখা ত্বক ফরসা করা ক্রিম ব্যবহার করে ত্বকের সমস্যায় পড়েন। তাকে চিকিৎসকের শরণাপন্নও হতে হয়। এমন ঘটনার শিকার অনেকেই হচ্ছেন।

 

এ বিষয়ে চর্ম ও যৌনরোগের চিকিৎসক ডা: আব্দুস সালাম মুক্তা জানান, নকল ও মানহীন প্রসাধনী ব্যবহারে অ্যালার্জিজনিত জটিলতা দেখা দেয়। এ ছাড়া ত্বকে দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ হতে পারে। এ ধরনের প্রসাধনী দীর্ঘদিন ব্যবহারে ক্যানসারও হতে পারে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী শামীম বলেন, নকল বা ভেজাল কোনো পণ্য উৎপাদন এটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পেলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে।

Sharing is caring!