স্টাফ রিপোর্টার:
বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবায় পিছিয়ে পড়েছে বিয়ানীবাজার উপজেলা। এখানে সাধারণ মানের কেবল বেসরকারি গাইনী হাসপাতাল গড়ে ওঠলেও নেই উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা। জনসংখ্যার অনুপাতে উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের শয্যাসংখ্যাও অনেক কম। ফলে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছে এ জনপদের সাধারণ মানুষ।
বিয়ানীবাজারে বিগত দিনে সুুযোগ থাকার পরও বিশেষায়িত ও উন্নতমানের হাসপাতাল স্থাপনের দাবি বিভিন্ন মহল থেকে ওঠলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। বেসরকারিভাবে কেউ এগিয়ে আসতে চাইলেও নানা জটিলতায় তা ভেস্তে যাচ্ছে। এখানে সরকারিভাবেও কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল নেই। বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত রোগীকে একই জায়গায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে আক্রান্ত রোগীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট অথবা ঢাকায় ভিড় জমাচ্ছেন। চিকিৎসকরা জানান, একই জায়গায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের অবস্থানের কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিক, মা ও শিশু, কিডনি, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি, সার্জারি, মানসিক রোগসহ সিসিইউ, আইসিইউ, এনসিইউ ব্যবস্থা রেখে বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে বিয়ানীবাজারে। তাছাড়া এখানে নেই কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও।
জানা যায়, বিগত দিনে সরকারিভাবে পৌরশহরে একটি শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠানর জন্য উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। বিষয়টি দেখভাল করার জন্য সিলেটের সিভিল সার্জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু শিশু হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ পরবর্তী সময়ে ঝিমিয়ে পড়ে। বিয়ানীবাজারে বিভিন্ন সময়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে অসংখ্য মানুষ আহত হচ্ছে। কিন্তু এখানে আগুনে পোড়া রোগীদের কোনো বিশেষায়িত চিকিত্সাব্যবস্থা নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন অসংখ্য লোক হতাহত হচ্ছে। অনেকেই পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। অথচ বিয়ানীবাজারে কোনো ট্রমা হাসপাতাল নেই।
সরজমিন দেখা যায়, বিয়ানীবাজার পৌরশহরের হাসপাতাল রোড এলাকায় প্রতিদিন হাজারো রোগী ভিড় করেন। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তারা অন্যত্র বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে ছুটে যান তারা।
সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজারে বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবার প্রায় ৮৩% চিকিৎসা বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত প্রদান করছে। সরকারি হাসপাতালে শয্যাসংকট, জনবলের অপ্রতুলতার কারণে মানুষের বেসরকারি হাসপাতালের প্রতি উৎসাহ বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা। এসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত দুর্বলতাও রয়েছে। বেশিরভাগ হাসপাতালে নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ও আইসিইউ। এছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য ভালোমানের যন্ত্রপাতি না থাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণ রিঅ্যাজেন্ট ব্যবহারে পাওয়া যায় ক্রুটিযুক্ত ডায়াগনসিস রিপোর্ট।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতাল পরিচালনায় মানসম্মত চিকিৎসক ও দক্ষ জনবল না থাকায় চিকিৎসার মানোন্নয়ন করা যাচ্ছে না। তাছাড়া অর্থ উপার্জন মুখ্য হওয়ায় রোগী-চিকিৎসকের সম্পর্ক ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মনিরুল হক খান বলেন, বিয়ানীবাজারে স্বাস্থ্যসেবার মান ঠিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। সীমিত সম্পদের মধ্যে কিভাবে রোগীদের ভালো সেবা দেওয়া যায় সেই চেষ্টা আমাদের রয়েছে।
Sharing is caring!