প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

গতি ফিরছে প্রশাসনে

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৭, ২০২৪, ১২:০০ অপরাহ্ণ
গতি ফিরছে প্রশাসনে

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের চার মাস পর এখন প্রশাসনে গতি ফিরতে শুরু করেছে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইন অনুযায়ী কর্মসম্পাদনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে অধস্তনদের অনেকেই এখনো নির্ভার হতে পারছেন না। সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রশাসনে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। সাবেক সরকারের ‘অপকর্মের’ সহযোগী শীর্ষ কর্তাদের অনেককেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। গত সরকারের শেষ সময়ে মাঠ প্রশাসনে জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের উঠিয়ে এনে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। তা ছাড়া সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত বেশ কিছু কর্মকর্তার দপ্তর বদল করা হয়েছে।

এদিকে গত সরকারের আমলে বঞ্চিত অনেক কর্মকর্তাকে এবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে। এক পক্ষ পদোন্নতি পাওয়ায় অন্য পক্ষে অসন্তোষ রয়েছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে একধরনের নীরবতা রয়েছে, চেনাজানা অনেকেই এখন আর খোলামেলা কথাবার্তা বলছেন না। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও মেলামেশা কমিয়ে দিয়েছেন।

 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এদিন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ১৭ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

দায়িত্ব নেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও প্রশাসনে কাজের গতি ফেরানোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় সরকার। প্রাথমিকভাবে সরকারের নীতি বা কর্মপদ্ধতি কেমন হবে তা নিয়ে সারা দেশে প্রশাসন স্থবিরতা শুরু হয়। সেই সময়ে প্রশাসনের কেন্দ্র সচিবালয়কে ঘিরে শুরু হয় নানা পক্ষের দাবি-দাওয়া ও দাবি আদায়ের আন্দোলন। বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা সচিবালয় ঘেরাও এবং অবরুদ্ধ কর্মসূচিও পালন করেন। দাবি আদায়ে অসহিষ্ণু আচরণ করায় গ্রেপ্তার হয়েছেন শতাধিক বিক্ষুব্ধ কর্মচারীসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থী। এখন ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম তিন মাসের কার্যক্রমসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী এই সময়ে (আগস্ট-অক্টোবর) সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে ১২ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ১৩৫, যুগ্ম সচিব পদে ২২৬, উপসচিব পদে ১২৫, অন্যান্য ক্যাডারে ২২১ এবং নন-ক্যাডারে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ৯ জন ও সহকারী সচিব পদে ৩৭ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে ৪৩ জন, গ্রেড-১ পদে ১১, অতিরিক্ত সচিব পদে ১৩৭, যুগ্ম সচিব পদে ১৭৩, উপসচিব পদে ৩৯১, বিভাগীয় কমিশনার পদে ৪ এবং অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার পদে ৩ জনকে বদলি করা হয়েছে। তা ছাড়া ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি, ১১৮ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ১৬৫ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী সচিব পদে ৪১৪ জন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও সহকারী কমিশনার পদে ৮৩ জনসহ মোট ১ হাজার ৮৭০ জনের দপ্তর বদল করার পাশাপাশি ৪ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর, সহকারী সচিব থেকে সিনিয়র সচিব পর্যায় পর্যন্ত ৮০ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি এবং ১০১ জন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছে জনপ্রশাসন।

তবে প্রশাসনের বর্তমান স্থবিরতা নিয়ে সচিবালয়ের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে আলোচনা-সমালোচনা থেমে নেই। আলোচনায় প্রায়ই উঠে আসছে সাবেক সরকারের মদদপুষ্ট প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার দুষ্কর্ম।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রশাসনে যেকোনো ধরনের বিভক্তি ও রেষারেশি বাড়লে নোংরা রাজনীতি শুরু হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, সম্প্রতি একটি সরকারের হঠাৎ পরিবর্তনে প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রেই একটা অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা, আতঙ্ক কাজ করছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কাজের গতি কম হবে। কারণ পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় কাজের পরিবেশেরও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। তা ছাড়া নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বভাবতই গত সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা বুঝতে কিছুটা সময় নিচ্ছে প্রশাসন। এ কারণে এই বিভাগে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত এখন নেই। কিন্তু স্বাভাবিক রুটিন কাজে কোনো ব্যাঘাত হচ্ছে না। তাই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে প্রশাসনের কর্মকাণ্ড।

Sharing is caring!