প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আইএমএফের বেশিরভাগ শর্ত পূরণ, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রায় দুশ্চিন্তা

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ৫, ২০২৫, ০৫:১৮ পূর্বাহ্ণ
আইএমএফের বেশিরভাগ শর্ত পূরণ, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রায় দুশ্চিন্তা

Manual8 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণের পরবর্তী কিস্তি পেতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং জ্বালানি ও সার আমদানি বাবদ বকেয়া কমানোসহ গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো পূরণে বাংলাদেশ সফল হলেও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা কিছুটা রয়ে গেছে। অন্তবর্তী সরকার এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
গত জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনায় দুই সপ্তাহের জন্য আইএমএফের একটি মিশনের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।

জানা যায়, ১৩ থেকে ১৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা। ওই সভার পর আগামী ২৯ অক্টোবর আইএমএফের দলটি ঢাকায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের ষষ্ঠ কিস্তি পেতে বাংলাদেশকে ছয়টি মানদণ্ড পূরণ করতে হবে, যা আইএমএফের বাধ্যতামূলক শর্ত। এর মধ্যে তিনটি মে মাসে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, জুনে আইএমএফের ১৭.৪ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০.৭৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সেপ্টেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮.৬৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্জিত হয়েছে।

Manual4 Ad Code

আগের সরকারের অধীনে বারবার রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। মোট রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে গেছে। কিন্তু গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিস্থিতি বদলে যায়—ডিসেম্বর ও মার্চের রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এই উন্নতির জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও আমদানি কমে যাওয়াকে।

তিনি বলেন, ‘অর্থপাচার বন্ধ হওয়ায় আরও বেশি রেমিট্যান্স সরকারি চ্যানেলে আসছে। আমদানি কম থাকায় বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে কোনো চাপ পড়েনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগে ডলার বিক্রি করত। এখন টাকার মূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে উল্টো ডলার কিনছে।’ এছাড়া ‘চাহিদার তুলনায় বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বেশি। এর কারণে ধীরে ধীরে রিজার্ভ বাড়ছে বলেও যোগ করেন তিনি।

Manual8 Ad Code

গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে রেকর্ড ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে এবং এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।

বকেয়া পরিশোধ

জ্বালানি ও সার আমদানির বকেয়া পরিশোধে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো দুটি নতুন শর্তও পূরণ করেছে।

জুনে মধ্যে বৈদেশিক পাওনা ৮৭০ মিলিয়ন ডলারের নিচে এবং দেশীয় পাওনা ২৮ হাজার ৭০ কোটি টাকার নিচে রাখার শর্ত ছিল।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জুনে বৈদেশিক পাওনা ৩১৪ মিলিয়ন ডলার এবং স্থানীয় পাওনা ১৮ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গত সপ্তাহে বলেছিলেন, সরকার আদানি ও শেভরনসহ জ্বালানি খাতের পাওনাদারদের ৫ বিলিয়ন ডলার ও সার আমদানি বিলের ২০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক পাওনার মধ্যে পূর্ববর্তী সরকারের আমলে জমা হওয়া ৩.৫ বিলিয়ন ডলার ছিল।

অভ্যন্তরীণ দিক থেকে, গত অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া নিষ্পত্তির জন্য ৮৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ করা হয়েছিল। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও বাজেটের অন্যান্য খাত থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে এই অর্থায়ন করা হয়েছে।

Manual1 Ad Code

আইএমএফের উদ্বেগ

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, রিজার্ভ ও বকেয়া পরিশোধ ছাড়াও বাংলাদেশ জন্য আরও দুটি বাধ্যতামূলক শর্ত পূরণ করেছে।

এ মাসের শেষের দিকে আইএমএফ মিশন জুন পর্যন্ত প্রায় ১৮টি বিষয় পর্যালোচনা করবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ এই শর্তগুলোর বেশিরভাগই পূরণ করেছে।

তারপরও জাহিদ হোসেন মনে করেন, আইএমএফ দুটি বিষয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করতে পারে। একটি হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনা এবং অপরটি খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার বিষয়ে সাম্প্রতিক একটি সার্কুলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে ডলার কেনার ফলে আইএমএফ জানতে চাইতে পারে যে, তারা নিজেরাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কি না।

Manual6 Ad Code

তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুক্তি হবে, তারা আর অতীতের মতো ব্যাংকগুলোর সুদের হার নির্ধারণ করে দিচ্ছে না।’

ব্যাংকিং সম্পর্কে জাহিদ সতর্ক করে বলেন, সরকার এই খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করলেও খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার বিষয়ে সাম্প্রতিক সার্কুলারের মাধ্যমে ‘অতীতের কিছু খারাপ অভ্যাস ফিরে আসতে পারে’।

তথ্যসূত্র: ডেইলি স্টার

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code